হবিগঞ্জের দিপুল রায় ৮ দিনের চিকিৎসা বিল দিয়েছেন ২ লাখ ১০ হাজার টাকা
স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিলেট মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসার নামে তারা রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বিল আদায় করছেন। এ অভিযোগ একজন ভূক্তভোগির।
গত ৩১ জুলাই আলিকো দিপুল এজেন্সী হবিগঞ্জ শাখার ম্যানেজার দিপুল কুমার রায়ের করোনা পজেটিভ আসে। তাকে নিয়ে ভর্তি করা হয় সিলেটের মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে। গতকাল রবিবার তাকে রিলিজ দেয়া হয়। সেখানে ৮ দিনে তার চিকিৎসা বাবদ বিল আসে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। দিপুল কুমার রায়ের বড় ভাই আলিকো বাদল এজেন্সী হবিগঞ্জ শাখার ম্যানেজার বাদল রায় জানান- বিল হাতে পেয়ে টাকার অংক দেখে চমকে উঠি। এতে দেখা যায় শুধু সার্ভিস চার্জই ধরা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু কিসের সার্ভিস চার্জ এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। শুধু এটুকু জানায় করোনা চিকিৎসা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ তাই চার্জও বেশি। তাকে জানানো হয়- এ সার্ভিস চার্জ সিলেট ক্লিনিক মালিক সমিতির সিদ্ধান্তে ধার্য্য করা হয়েছে।
বাদল রায় দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানান- তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন এ হাসপাতালে করোনা সন্দেহে কেউ ভর্তি হলে প্রতিদিন তাকে মিনিমাম ২৫ হাজার টাকা বিল গুনতে হয়। এর নিচে কোন বিল নেই। অতিরিক্ত বিল নিয়ে তিনি কথা বললে তা জানাজানি হয়ে যায়। বিভিন্ন জন এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে আসলে তড়িঘড়ি করে তাদের বিল থেকে ১৮ হাজার টাকা ছাড় দিয়ে তাদের রিলিজ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানান- মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নেন তাদেরকে ওই হাসপাতাল থেকেই ওষুধ কিনতে হয়। আর ওষুধের গায়ের এমআরপিতে ওই ওষুধ কিনতে হয়। তাছাড়া ওই ওষুধের জন্যও ২০% সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। অথচ বাহির থেকে ওষুধ কিনলে উল্টো মূল টাকা থেকে ছাড় দেয়া হয়।
এদিকে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে চিকিৎসা বিল নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া একজন রোগীর একদিনের চিকিৎসা বিল এসেছে প্রায় এক লাখ টাকা। এরমধ্যে কেবল ওষুধের বিল ধরা হয়েছে সাড়ে ৩১ হাজার টাকা। মাত্র কয়েকঘন্টায় মোটা অংকের এই বিল দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন রোগীর স্বজনরা। তারা বিল নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেও কোন সুফল পাননি। বাধ্য হয়ে টাকা পরিশোধ করেই রোগীকে বাসায় নিয়ে যান তারা।
এএম নিশাত নামে এক ভূক্তভোগী জানান, তার মা মিনা বেগম (৬৫) শ্বাসকষ্টের রোগী। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত শনিবার রাত ১টার দিকে মিনা বেগমকে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে নিয়ে যান। সরকারি অনুমোদনের আলোকে কিছুদিন আগে এই হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট চালু করা হয়েছে। মিনা বেগমকে হাসপাতালে নেয়ার পর তাকে করোনা ইউনিটের একটি কেবিনে ভর্তি করা হয়। এরপর তাকে অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়। পরদিন রবিবার মিনা বেগমের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে স্বজনরা তাকে বাসায় নিয়ে যেতে চান এবং বিল দিতে বলেন। রবিবার রাত পৌনে ৯ টায় তাদের হাতে ৯৩ হাজার ৭০ টাকার একটি বিল ধরিয়ে দেয়া হয়। মোটা অংকের এই বিল দেখে স্বজনরা আঁতকে উঠেন। তারা এ নিয়ে কথা বলেও কোন প্রতিকার পাননি।
মিনা বেগমের চিকিৎসা বিলের কপিতে দেখা যায়, কেবিন চার্জ ১২ হাজার টাকা, অক্সিজেন বিল ৫ হাজার ২৮০ টাকা, ইনভেস্টিগেশন ২০ হাজার ৫২০ টাকা, কনসালট্যান্ট ফি ৪ হাজার ৮শ’ টাকা, মেডিসিন ৩১ হাজার ৪৩৬ টাকা, সার্ভিস চার্জ ১৩ হাজার ৫৮৪ টাকাসহ সব মিলে বিল হয়েছে ৯৩ হাজার ৭০ টাকা।
এ ব্যাপারে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই রোগীকে করোনা ইউনিটের এসি কেবিনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আর করোনা ইউনিটের খরচ বেশি। কারণ ওই ইউনিটে দায়িত্ব পালনকারী ডাক্তার, নার্সসহ সকলকে তিনগুণ বেশি বেতন দিতে হয়। এছাড়া করোনা বা উপসর্গযুক্ত রোগীকে ঘন্টায় ঘন্টায় চেকআপ এবং বিভিন্ন পরীক্ষা করতে হয়।’