ছাদে উঠলে প্রকৃতির সান্নিধ্যে হারিয়ে যাবে দর্শনার্থীরা
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে শখের বশে ছাদ বাগান করে বিষমুক্ত ফল ও শাক-সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায়ও বিশেষ অবদান রাখছেন হবিগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল্লাহ। দিন দিন তার বাগানের পরিসর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি স্বপ্ন দেখছেন ভবিষ্যতে জেলার সকল স্কুলের ছাদে বাগান গড়ে তোলা।
এ ব্যাপারে এ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ২০১৯ সালে হঠাৎ তাঁর মাথায় আসে ছাদ বাগান করার। সেপ্টেম্বর মাসে সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে শিক্ষা অফিসের ছাদে তিনি বাগান করার উদ্যোগ নেন। গাছ রোপনের জন্য ড্রাম, বালতি, টব, ফলের কেইসসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করেন। আর তাতে দেশীয় বিভিন্ন ফল গাছের চারা রোপনের পাশাপাশি বিদেশী ফল এবং দেশী বিদেশী শাক সবজির বীজ ও চারা রোপন করেন। বর্তমানে এই ছাদ বাগানে ৭৮টি হাফ ড্রাম, ২০টি বালতি, ২৫টি ফলের কেইস, ২৫টি বিভিন্ন সাইজের টব ও ২৫টি কন্টেইনারে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন দেশী বিদেশী ফুল, ফল ও শাক সবজি। তিনি জানান, বিভিন্ন সময়ে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফলের চারা সংগ্রহ করেছেন। যাতে বর্তমানে ফল আসতে শুরু করেছে। তিনি সিজনাল শাক সবজির বীজ ও চারা রোপনে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আর এসব ক্ষেত্রে তিনি খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেন। আর তাই তিনি তার ছাদ বাগানে কোন গাছের গোড়ায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। ছাদের উপরেই একটি নির্দিষ্ট স্থানে গাছের পাতা, সবজির খোসা পচিয়ে অর্গানিক সার তৈরী করেন। এছাড়া গোবর সারও প্রয়োগ করে থাকেন। ফলে ছাদ বাগানে উৎপন্ন সকল শাক সবজি ও ফলমূল থাকে বিষমুক্ত।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ২০১৯ সালে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার হবিগঞ্জ এসে দপ্তর প্রধানদেন সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় তিনি ছাদ বাগান করতে উপস্থিত সকলকে উদ্বুদ্ধ করেন। এ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে তিনি শিক্ষা অফিসের ছাদে ছাদ বাগান গড়ে তোলেন। আর এ ক্ষেত্রে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকও তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, উৎসাহ অনুপ্রেরণা দেন। বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ যখনি কেউ তার কাছে আসে তিনি তাকে ছাদে নিয়ে গিয়ে তার ছাদ বাগান দেখান এবং তাকে ছাদ বাগান করতে উদ্বুদ্ধ করেন। আর এ ক্ষেত্রে তিনি অনুকরণীয় হতে চান। তিনি বলেন, যখন ছাদ বাগান করার জন্য মনস্থির করি তখন ইউটিউবে তরুলতা.কম, নগর কৃষিসহ নানা সাইট ভিজিট করে তা থেকে কিভাবে বাগান করতে হয় তার কলা কৌশল, গাছের পরিচর্যা এসব বিষয়ে জ্ঞানার্জন করে সেই মতে কাজ করে যাই। আর এতে কাক্সিক্ষত ফলও পাই। এ পর্যন্ত এ খাতে তার লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান তিনি।
সরজমিন ছাদ বাগানে গিয়ে দেখা যায় বাগানের প্রায় মাঝামাঝি একটি গোলাকার টেবিল তৈরী করা হয়েছে। তার চারপাশে রয়েছে বসার জন্য চেয়ার। টেবিলটি টাইলস্ দিয়ে মোড়ানো। দেখতে খুবই সুন্দর। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল্লাহ জানান, নৈসর্গিক পরিবেশে বসে বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের পয়সায় তিনি এটি নির্মাণ করেছেন। প্রতিদিন তিনি ফজরের নামাজ আদায় করে ঘন্টা দেড়েক সময় বাগানের পরিচর্যা করেন। আর এতে তিনি আনন্দ পান। তিনি বলেন, নিজের হাতে গড়া বাগানের শাক সবজি দিয়ে চলে আমার সংসার। আর তাই বাজার থেকে তেমন একটা শাক সবজি কিনতে হয় না। তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাদে বাগান গড়ে তোলা, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তাতে সম্পৃক্ত করা যাতে তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে শখের কাজ হিসেবে বাসা বাড়িতেও বাগান গড়ে তোলে। এতে বিষমুক্ত খাদ্য পাওয়ার পর পাশাপাশি বিশুদ্ধ ও নির্মল বায়ু নিশ্চিত হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল্লাহ’র ছাদ বাগানে যেসব গাছ স্থান পেয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ড্রাগন, চায়না কমলা, চায়না মাল্টা, কাশ্মিরী আপেল কুল, জাম্বুরা, স্ট্রবেরী, ডালিম (আনার), পেঁপে, বিলম্ব, কামরাঙা, মিষ্টি তেতুল, থাই পেয়ারা, কলা, আম, জামরুল, অরবড়ই, দারুচিনি, অ্যালোভেরা, বিভিন্ন প্রজাতির লেটুস পাতা, নাগা মরিচ, কাল মরিচ, ঢেড়স, বিভিন্ন প্রজাতির বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, করলা, ঝিঙা, লাল রঙের পুঁই শাক, লাউ, ডাটা, উন্নত মানের কচু, পান।