সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে হরিণ শিকার

চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে হরিণ শিকারের ঘটনায় অবশেষে বনবিভাগের বিট অফিসার বাদী হয়ে ঘটনার সাথে জড়িত মুল আসামীদের বাদ দিয়ে অন্য দুজনের নামে মামলা করেছে। বন বিভাগের লোকজন মুল আসামী বিফলের কাছ থেকে ২০ হাজার নিয়ে অপর দুজনের নামে মামলা দিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। এতে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
বন বিভাগ ও স্থানীয় সুত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের রামগঙ্গা চা বাগানের পাতিঘরের উত্তর দিকের বনে থেকে রামগঙ্গা চা বাগানের কাটুরিয়া বিফল বাড়াইক একটি মায়া হরিণ গাছের লতাপাতায় আটকে থাকতে দেখে তিনি এটি উদ্ধার করে পাতিঘরে নিয়ে আসেন। সেখানে বিফল ও তার ছেলে গনেশ বাড়াইক হরিণ জবাই করে মাংস ভাগাভাগি করে নিয়ে যান। খবর পেয়ে রাতেই সাতছড়ি রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা আবুল কালাম সামসুদ্দিন রুমির নেতৃত্বে একদল বনকর্মী ঘটনাস্থলে যায়। এসময় বিফলের বাড়ি থেকে বনকর্মীরা হরিণের মাথা ও প্রায় ৭ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এসময় তাদের কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। বনকর্মীরা বিফল ও তার ছেলেকে মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবী করে। পরে বিফল ও তার ছেলে গনেশ তাদের একটি গরু বিক্রি করে বনকর্মীদের হাতে ১৮ হাজার টাকা তুলে দিয়ে রক্ষা পায়। কিন্তু বিষয়টি পরদিন জানাজানি হলে বনবিভাগে তোলপাড় শুরু হয়। এক পর্যায়ে বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা আবুল কালাম সামসুদ্দিন বাদী হয়ে রামগঙ্গা বাগানের অমল মুন্ডার ছেলে বিশ্বজিত মুন্ডা ও নিতাই মুন্ডার ছেলে সঞ্জয় মুন্ডাকে আসামীকে ২০১২ সালের বন আইনের ৩৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মুল আসামী বিফল ও তার ছেলে গনেশকে বাদ দিয়ে এ মামলা করায় চা শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
শনিবার বিকেলে বিফল বাড়াইক ও তার ছেলে গনেশ বাড়াইক এ প্রতিনিধিকে জানায়, তিনি হরিণটি আধামরা অবস্থায় পেয়ে ধরে নিয়ে আসেন এবং জবাই করে মাংস বাসায় নিয়ে আসেন। রাতে বনবিভাগের লোকজন এসে তার ঘর থেকে মাংস নিয়ে যায় এবং আমাকে মামলা না দিতে ৩০ হাজার টাকা দাবী করে। বিফল জানায়, সে তার একটি গরু রাতেই শফিক মিয়ার নামের একজনের কাছে বিক্রি করে ১৮ হাজার টাকা তাদের হাতে দিয়ে রেহাই পান।
রামগঙ্গা বাগানের চৌকিদার কালু জানায়, দুপুরে বাগানের উত্তর দিকের বনবিভাগের এলাকা থেকে হরিণটি নিয়ে আসেন বিফল বাড়াইক। পরে তিনি পাতিঘরে হরিণটি জবাই করে মাংস ভাগাভাগি করে নেন। খবর পেয়ে রাতে বন বিভাগের লোকজন হরিণের মাথা ও মাংস উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এবিষয়ে সাতছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ মোতালেব হোসেন জানান, বিট অফিসার আবুল কালাম সামুসদ্দিন খবর পেয়ে রাতে হরিণের মাংস ও মাথা উদ্ধার করেন। পরদিন বনবিভাগের উর্ধŸতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মাংস ও মাথা কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়। এবং মাংসের নমুনা ঢাকার আগারগাও বনবিভাগের ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। মুল আসামীকে বাদ দিয়ে অন্যদের নামে মামলা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিট অফিসার বলতে পারবেন, কারা এ ঘটনায় জড়িত এবং কাদের নামে মামলা দিয়েছে।