চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ করোনা ভাইরাস ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে চুনারুঘাট উপজেলার ছোট বড় ২৪টি চা বাগানের ৭৫ হাজার চা শ্রমিক। নি¤œ আয়ের এসব চা শ্রমিকদের ঝুঁকি মোকাবেলায় এখনও নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। উপজেলার কোন চা বাগানেই এখনো দেখা যায়নি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের প্রস্তুতি। নেই সচেতনতামূলক কোন কর্মসূচি। তাদের সতর্ক করে জারি করা হয়নি কোন এলার্ট বা সচেতনতা।
উপজেলায় প্রায় ৭৫ হাজার চা শ্রমিক রয়েছে। তাদের মাত্র এক তৃতীয়াংশ চা শ্রমিক বাগানে কাজ করে। বাকীরা চা বাগানের বাইরে দিনমজুরের কাজ করে। সকালে কাজের সন্ধানে বের হয়, সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে। তাদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার সময়ই কোথায়? চা শ্রমিকরা মনে করে, তাদের কাজ করে জীবিকা চালাতে হয়। তাই সকাল সন্ধ্যা কাজের মধ্যেই থাকতে হয়। রাতে পরিবার পরিজন নিয়ে একবেলা আহারের সময় ছাড়া তারা একত্র হতে পারে না। তারমধ্যে তাদের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা থাকার সুযোগ কই। যেখানে হাজার হাজার শ্রমিকের দুপুরের গোসলই ঠিক মতো করতে পারে না।
এদিকে চায়ের মওসুম শুরু হয়েছে চলতি মাসে। কোন কোন বাগানে চায়ের পাতা চয়ন শুরু হয়েছে। কোন কোন বাগানে পাতা চয়নের প্রস্তুতি চলছে। চা শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে তারা। অথচ তাদের টিকিয়ে রাখার ব্যাপারো কারো কোন মাথাব্যাথা নেই। সারাদেশ যখন করোনা ভাইরাস আতংকে নানা সচেতনতামূলক কাজ চলছে সেখানে চা বাগানে নেই কোন প্রস্তুতি। বিশেষ করে চা বাগানের পরিবারগুলো অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। ফলে যে কেউ একবার করোনা আক্রান্ত হলে তা সহজেই ছড়িয়ে পড়বে চা বাগানের বিভিন্ন লাইনে। এ অবস্থায় এখনই চা বাগানে সতর্কতামূলক লিফলেট ও চা শ্রমিকদের রক্ষায় ঘরে ঘরে হাত ধোয়ার স্যানিটাইজার ও সাবান বিতরণ করার দাবি জানিয়েছেন অনেকেই।
এ ব্যাপারে চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য নৃপেন পাল বলেন, চা শ্রমিকরা বরাবরই অবহেলিত। তাদের শিক্ষাদীক্ষার হারও কম। তারা এত সচেতন নয়। তাই চা শ্রমিকদের করোনা ভাইরাস থেকে দূরে রাখতে তাদের এখনই সচেতনতামূলক কাজ শুরু করা প্রয়োজন। পাশাপাশি তাদের মধ্যে বিনামূল্যে মাস্ক দেওয়া প্রয়োজন। নতুবা তা সমুহ বিপদের সম্মুখিন হবে।
চা শ্রমিক আদিবাসী নেতা স্বপন সাওতাল বলেন, চা শ্রমিকদের আরো আগেই সচেতনতা তৈরির কাজ শুরু করা দরকার ছিল। কারণ তারা করোনা ভাইরাস কি তা জানে না। তারা দিন আনে দিন খায়, তাদের একদিন কাজ না করলে পেঠে ভাত যাবে না। তাই তাদেরকে এখনই আলাদাভাবে সচতনতার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
চা শ্রমিক নেতা কাঞ্চন পাত্র বলেন, চা শ্রমিকরা অত্যন্ত ঘনবসতির মধ্যে জীবন যাপন করে। তাদের মধ্যে কেউ সংক্রমিত হলে সহজেই তা বাগানে ছড়িয়ে পড়বে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চা শ্রমিকদের সচেতনতার জন্য কাজ শুরু করা দরকার। তাদেরকে বিনামূল্যে মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ হাত ধোয়া এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সত্যজিত রায় দাশ বলেন, আমি এ ব্যাপারে বাগানের ম্যানেজারদের নিয়ে জরুরীভাবে বৈঠক করব। শ্রমিকদেরকে সচেতন করা হবে।