মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ থেকে ॥ নবীগঞ্জ-রুদ্রগ্রাম সড়কে সিএনজি অটোরিকশার ভাড়াকে কেন্দ্র করে সিএনজি শ্রমিক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এক পর্যায়ে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে প্রায় ৭০টি সিএনজি অটোরিকশার গ্লাস ভাংচুর করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে নবীগঞ্জ-রুদ্রগ্রাম সড়কের বাউসা পয়েন্টে রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহতদের হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। একজনকে আশংকাজনক অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসামানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে প্রেরণ করা হয়। ঘটনার খবর পেয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৩০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনায় প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ-রুদ্রগ্রাম সড়কে নবীগঞ্জ সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে বাউসা বাজার পয়েন্ট পর্যন্ত পূর্বে ভাড়া ছিল ১০ টাকা। কয়েকমাস ধরে সিএনজি শ্রমিকরা রাস্তা ভাঙাসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ভাড়া ৫ টাকা বাড়িয়ে ১৫ টাকা আদায় করে। ভাড়া বৃদ্ধির ঘটনায় বাউসা গ্রামবাসী ও সিএনজি শ্রমিকদের মধ্যে প্রায়ই ভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার জের ধরে বেশ কিছুদিন ধরে এলাকাবাসী ও সিএনজি শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। গত ৩/৪ দিন পূর্বে নবীগঞ্জ-রুদ্রগ্রাম সড়কের ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও সিএনজি শ্রমিকদের চলমান সমস্যা সমাধানে বাউসা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিকসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও কয়েক গ্রামের বিশিষ্ট মুরুব্বিদের সমন্বয়ে জণসাধারণ এবং সিএনজি শ্রমিকদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয় নবীগঞ্জ-রুদ্রগ্রাম সড়কে নবীগঞ্জ থেকে রুদ্রগ্রাম পর্যন্ত ৩০ টাকা, নবীগঞ্জ থেকে বাউসা মাদ্রাসা পয়েন্ট পর্যন্ত ১০ টাকা, নবীগঞ্জ থেকে বাউসা বাজার পয়েন্ট পর্যন্ত ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি বাউসা গ্রামবাসী। তাদের দাবি নবীগঞ্জ থেকে বাউসা বাজার পয়েন্ট পর্যন্ত ভাড়া ১০ টাকাই যথেষ্ট।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে নবীগঞ্জ-রুদ্রগ্রাম নবীগঞ্জ সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে এক জনৈক সিএনজি চালক যাত্রী নিয়ে রুদ্রগ্রাম যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে একজন যাত্রী বাউসা বাজার পয়েন্টে নেমে পড়েন। এ সময় সিএনজি চালক ওই যাত্রীর কাছে ১৫ টাকা ভাড়া দাবি করলে বাউসা গ্রামের যাত্রী ভাড়া ১৫ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ১০ টাকা দেয়। এ নিয়ে সিএনজি চালক ও যাত্রীর মধ্যে বাকবিত-া হয়। বাকবিত-ার এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে বাউসা গ্রামবাসী ও সিএনজি শ্রমিকদের মধ্যে শুরু হয় তুমুল সংঘর্ষ। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের লোকজন ইট-পাটকেল ও দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষটি রূপ নেয় রণক্ষেত্রে। ২ ঘন্টা ব্যাপী সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপে প্রায় ৭০টি সিএনজি অটোরিকশার গ্লাস ভাংচুর হয়। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
আহতদের মাঝে ফয়জুর রহমান (৬০) নামে একজনকে আশংকাজনক অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসামানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকি আহত সালাম চৌধুরী (৫৫), মতিউর রহমান (৪০), মিন্টু (২২), রমজান (৩০). আব্দুল্লা (২৬), রফি মিয়া (২৫), ফজল মিয়া (৩৫),আব্দুল আলী (৩২), আব্দুল ওয়াহিদ (২৬), সুমন (২২), ওয়াহিদ (৫০), চদ্দর মিয়া (৪০), শাকিল (১৮), সুলেমান (৩২), সাইদুল (৩০), আব্দুল মন্নান (৪৫), সোহাগ আহমেদ (২৫), হুমায়ুন (২২), আরজু (৬৯), ওয়াসকুরুনী (৪০), আব্দুল হক (২১), সুহেল মিয়া (৩৭), স্বপন (২৩), আব্দুল কাইয়ুম (৩০), সুরেন্ড সুত্রধর (৩৫), সানুর আলী (৩২), সাহিদুল (৩০), সেজু (১৭), বদর মিয়া (৫০), কালাই মিয়াকে (৩০) নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। অন্যান্য আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে নবীগঞ্জ-বাহুবল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী, নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া মমিনসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।
এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত নবীগঞ্জ থানায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে একটি সূত্রে জানা গেছে বিষয়টি শালিসে সমাধানের প্রক্রিয়া চলছে।