টমটমের ব্যাটারি চার্জের গ্যারেজগুলো বন্ধ করে দিবে প্রশাসন ॥ কোন দোকানে টমটম বিক্রি করতে দেয়া হবে না ॥ হবিগঞ্জ পৌরসভা যেসব টমটমের লাইসেন্স দিয়েছে সেসব টমটমের লাইসেন্স আর নবায়ন করবে না ॥ যাত্রীদের সুবিধার্থে শহরে চালু করা হবে বিশেষ রঙের সিএনজি অটোরিকশা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ শহরকে যানজট মুক্ত করতে টমটম (ইজিবাইক) চলাচল বন্ধ করে যাত্রীদের সুবিধার্থে বিশেষ রঙের সিএনজি অটোরিকশা সার্ভিস চালু করা হবে। এছাড়া শহর থেকে টমটম বিক্রির দোকানগুলো সরানোর পাশাপাশি টমটমের ব্যাটারী চার্জের গ্যারেজগুলোও বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। হবিগঞ্জ শহরে দীর্ঘদিন ধরে মাত্রারিক্ত ব্যাটারী চালিত টমটম (ইজিবাইক) চলাচল করছে। যার ফলে প্রতিনিয়তই শহরের প্রধান সড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি টমটমগুলো অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত চালক দ্বারা চালানোর কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আইন শৃঙ্খলা সভা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সভাগুলোতে আলোচনা হচ্ছে। এসব আলোচনার প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন শহরকে যানজট মুক্ত করতে টমটমকে শহর থেকে বিদায় করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল বুধবার দুপুরে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পরিচ্ছন্ন হবিগঞ্জ গড়ার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ বলেন, ক্রমেই হবিগঞ্জ শহরকে যানজট মুক্ত করেত টমটমকে শহর থেকে বিদায় করে দেয়া হবে। পাশাপাশি শহর থেকে টমটম বিক্রির দোকানগুলো সরিয়ে দেয়া হবে। তিনি বলেন, টমটম চার্জের জন্যও শহরের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ গ্যারেজ তৈরী করা হয়েছে। সেই গ্যারেজগুলোও সিলগালা করে বন্ধ করে দেয়া হবে। যে সকল টমটমের লাইন্সেস আছে, সেগুলো নবায়ন করা হবে না। তবে যাত্রীদের সুবিধার্থে হবিগঞ্জ শহরে বিশেষ রঙের সিএনজি অটোরিকশা সার্ভিস চালু করা হবে। বিশেষ রঙ বলতে যে রঙ দেখলে সাধারণ যাত্রীরা বুঝতে পারেন এটি শহরের সিএনজি অটোরিকশা। এই সার্ভিস চালু হলে যানজট নিরসনের পাশাপাশি চলাচলে যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ জানান, এই সিদ্ধান্ত হবিগঞ্জ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি আরটিএ সভায় শীঘ্রই অনুমোদন করা হবে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র মিজানুর রহমান মিজান জানান, শহরকে যানজট মুক্ত করতে নতুন করে টমটম (ইজিবাইক) এর লাইসেন্স দেবে না পৌর কর্তৃপক্ষ। হবিগঞ্জ শহরকে একটি পরিছন্ন শহর হিসেবে গড়ে তুলতে শহরের বিশেষ স্থানে ডাস্টবিন নির্মাণ করা হবে এবং কিছু কিছু এলাকায় বাসা-বাড়ির সামনে ডাস্টবিন নির্মাণ করা হবে। ডাস্টবিনগুলো থেকে পৌরসভার গাড়ী দিয়ে ময়লা নিয়ে যাওয়া হবে। শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনসহ বিভিন্ন সমাধান কিভাবে করা যায়, তার জন্য প্রত্যেক ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজনদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। তিনি জলাবদ্ধতাও ড্রেন ভরাটকে এজন্য দায়ী করেন। যারা বাসা নির্মাণ করেন তারা যেভাবে বাসা নির্মাণের অনুমোদন নেন সেভাবে বাসা নির্মাণ করেন না। এছাড়া বাসা-বাড়ি তৈরীতে যে পরিবহন দিয়ে মাটি আনা হয় সেই মাটি ড্রেনগুলোতে পড়ে। যে কারণে ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে যায়। ফলে ড্রেনগুলো যে পরিমাণ লোড নেয়ার কথা সেই পরিমাণ লোড নিতে পারে না। অপরদিকে ড্রেনগুলো পরিস্কারের জন্য কর্মী সংকট থাকার কারণে তা সময়মত পরিস্কার করতে পারেন না। এটা জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে বানিয়াচঙ্গ উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরীর কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে, আতুকুড়া এলাকায় পৌর কর্তৃপক্ষ ময়লা আবর্জনা ফেলার যে স্থানটি ক্রয় করেছিলেন সেই স্থানটি ছেড়ে দেয়ার জন্য। সেখানে রিসাইক্লিনের মাধ্যমে ময়লা ফেলা হবে।
বানিয়াচং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী জানান, প্রায় ৭ বছর পূর্বে আমার ইউনিয়নের আতুকুড়া এলাকার জায়গা পৌরসভা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ক্রয় করে। ক্রয় করার পূর্বে তখনকার পৌরসভার মেয়র আমার সাথে কোন পরামর্শ করেননি। পরামর্শ করলে হয়তো এ সমস্যা তৈরী হতো না। ওই জায়গা আতুকুড়া গ্রামবাসী শত বছর ধরে ভোগদখল করে আসছেন। এছাড়াও এখানে একটি হাইস্কুল রয়েছে এবং একটি কলেজ নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। ওই জায়গা গ্রামবাসী ছাড়বে না। যেহেতু জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন আমাকে তাদের পাশে থাকতেই থাকতে হবে।
হবিগঞ্জ পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি শহরের পুরাতন খোয়াই নদী দখলকারীদের উচ্ছেদ করা হবে। পুরাতন খোয়াই নদী দখল মুক্ত হলে হবিগঞ্জ শহরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পাবে। এদিকে উচ্ছেদ অভিযানের খবর দখলকারদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা বিভিন্ন স্থানে দৌঁড়ঝাপ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে পুরাতন খোয়াই নদী দখলমুক্তকরণে লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)সহ এলাকার সচেতন মহল।