বিয়ের আগে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য সালেহা আক্তার বুঝতে পারেননি তিনি শামীমের চতুর্থ স্ত্রী হতে যাচ্ছেন

শামীমের ভাই বললেন, ‘পঁচা শামুকে পা কেটে শামীমের ঠিকানা হল কারাগারে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ শহরের কোর্ট স্টেশন এলাকায় জেলা পরিষদের সদস্য সালেহা আক্তারকে (৪০) যৌতুকের দাবিতে মারপিট করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আটক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শফিউল আলম চৌধুরী শামিমকে (৩৫) কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে, সালেহার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে শামিমের আরও অজানা কাহিনী বেরিয়ে আসছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ সাহিদ মিয়া জানিয়েছেন শামিমের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। বুধবার বিকেলে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় শামিমকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। শামীম শহরের নিউ মুসলিম কোয়ার্টার এলাকার বাসিন্দা ও স্নানঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মুজিবুর রহমান চৌধুরীর বড় ছেলে।
মামলার বিবরণ ও আহত সালেহা আক্তার জানান, ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর ফেসবুকে পরিচয় হওয়ার পর শামীম ও সালেহার মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে। শামীম সুন্দরী সালেহাকে কাছে পেতে বিয়ের ফাঁদ পাতে। সালেহাও তার মাস্টারপ্লানে আবেগে আটকে যায়। এক পর্যায়ে তারা কাবিন মুলে বিয়েতে আবদ্ধ হয়। শামীম সালেহার বাসায় ঘরজামাই হিসেবে বসবাস করতে থাকে। বিয়ের কিছুদিন পর শামীমের আসল রূপ ধরা পড়ে। মাদকাসক্ত হয়ে বিভিন্ন সময় টাকার জন্য নির্যাতন শুরু করে স্ত্রীকে। গত সোমবার রাত ১০টায় সালেহাকে টাকার জন্য মারপিট করে রুমে আটক করে শামীম তাকে হত্যার চেষ্টা করে। পরিবারের লোকজন শামীমকে আটক করে থানায় খবর দিলে এসআই সাহিদ মিয়ার নেতৃত্বে একদল পুলিশ শামীমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় শামীম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সদর হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে সদর থানায় ওসি মোঃ মাসুক আলী জানান, সালেহা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে। মামলার প্রেক্ষিতে অভিযুক্তকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
আহত সালেহা বলেন, ‘আমি শামীমের আগের কাহিনী জানতাম না, সে এগুলো আমার কাছে গোপন করে আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছে। বিয়ের পর থেকে আমাকে টাকার জন্য মারপিট করে আসছে। ইতোমধ্যে আমার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েছে। সে এর আগে আরও ৩টি বিয়ে করেছে। তার ১ম স্ত্রী পুরান মুন্সেফী এলাকার কলি আক্তার, ২য় স্ত্রী মুসলিম কোয়ার্টার এলাকার হাসি আক্তার ও ৩য় স্ত্রী সুমনা আক্তার। আর ৪র্থ স্ত্রী আমি অধম নিজে। সে আমার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছে’। স্ত্রীর উপর স্বামীর আক্রমণের বিষয়টি সালেহা আক্তারের সহকর্মীরা সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না। তারা শামীমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
অপর একটি সুত্র জানায়, শামীম শুধু সালেহাকে মারপিট করেনি, সালেহার পরিবারের লোকজনও শামীমকে মারপিট করে পুলিশে সোপর্দ করেছে।
শামীমের ভাই বলেন, ‘শামীম শহরের একজন পরিচিত মুখ। এক সময় আওয়ামী লীগের দুর্দিনে সে কারা নির্যাতিত হয়ে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে রাজপথে ছিল। সে সাইপ্রাস ছাত্রলীগের সেক্রেটারীর দায়িত্বও পালন করেছে। কিন্তু তার ভাগ্যের পরিহাসে ‘পচা শামুকে পা কেটে ঠিকানা হল কারাগারে’।