নদীর ভাঙ্গন রোধে চলমান প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ॥ খতিয়ে দেখতে সরজমিন পরিদর্শন করলেন হুইপ শামসুল হক চৌধুরী

এম, এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ থেকে ॥ নবীগঞ্জে কুশিয়ারা এলাকায় নদী ভাঙ্গনরোধে গৃহিত বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রমে দুর্নীতির অভিযোগ দুদক ও সংসদীয় কমিটির কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। উক্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখছে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় একটি আলাদা কমিটি করেছে।
অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী কুশিয়ারা ডাইক এলাকা সরজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন। দুদকের একটি টিম আসার কথা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সর্বত্র তোলপাড় হচ্ছে। কুশিয়ারা ডাইকের প্রায় আড়াই কোটি টাকার প্রকল্পে নয়ছয় হয়েছে এমন আলোচনা রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে।
সম্প্রতি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক কুশিয়ারা ডাইক ও ভঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন। তার নির্দেশনায় বর্ষা মৌসুম শুরুর পূর্বেই পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনরোধে দুই কোটি ৩৮ লাখ টাকা প্রদান করে।
ওই কাজের কার্যাদেশ পায় মৌলভীবাজারের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফাহাদ এন্টারপ্রাইজ। ফাহাদ এন্টারপ্রাইজের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা যুক্ত হয়ে দ্রুতগতিতে কাজ শুরু করে।
নদীর ভাঙ্গনরোধ ও বাঁধ সুরক্ষায় নি¤œমানের কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠে। কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম দিয়ে কে বা কারা দুদক ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির কাছে অভিযোগ প্রেরণ করে।
এরই প্রেক্ষিতে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী। এসময় স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহনওয়াজ মিলাদ গাজীসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কুশিয়ারা নদীর চরের দখল ও বালু উত্তোলনে একটি চক্র মরিয়া হয়ে উঠেছে। এনিয়ে নিরব রয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সরেজমিন পরিদর্শনে অগ্রগতি নিয়ে হুইপ শামসুল হক চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম দিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে আমরা তদন্ত করছি, আমি সরজমিনে বিষয়টি দেখেছি, সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কুশিয়ারা ডাইক রক্ষায় এবং বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডকে বাঁচাতে আমরা ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছি। বর্তমান কাজ মাত্র দুই কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে হয়েছে। বিষয়টির অভিযোগ দুদকের কাছে দেয়া ঠিক হয়নি। এখনো কাজ চলমান আছে তাই অনিয়ম হয়েছে বলা যাবে না। কাজ শেষ হবার আগে এমন মন্তব্য সঠিক নয়।
ওদিকে, স্থানীয় লোকজনের দাবি, নদী ভাঙ্গনরোধে নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে কোন প্রজেক্টই কার্যকর হবে না। এনিয়ে উপজেলা প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার নদী ভাঙ্গন কবলিত দীঘলবাক এলাকার উন্নয়নে ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে প্রজেক্টের অনুমোদন দেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি। ৮১ হাজার গানি ব্যাগ ও ৪৩ হাজার জিও ব্যাগ ফেলার প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছে ফাহাদ এন্টারপ্রাইজ। এ নিয়ে হবিগঞ্জ আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে আলোচনার সূত্রপাত করেন উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল হক চৌধুলী সেলিম। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কোন অভিযোগ করি নাই কে বা কারা আমার নাম ব্যবহার করেছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হউক।
কুশিয়ারা এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে প্রতি বছর প্রায় ১৫-২০ মিটার জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হয়। দীঘলবাঁক ইউনিয়নের দীঘলবাক গ্রাম ইতিমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম এল সৈকত বলেন, মন্ত্রণালয়ের বিশেষ নির্দেশনায় প্রকল্প কাজে সার্বক্ষণিক নজরদারী করেছি। এখানে দুর্নীতির সুযোগ নেই। নদী ভাঙ্গনরোধে গৃহীত ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে নি¤œমানের কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জাতীয় সংসদের হুইফ শামসুল হক চৌধুরী।
কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফাহাদ এন্টারপ্রাইজের পক্ষে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন দীঘলবাক উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আজিজুল হক শিবলী। তিনি দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন।