পরিচ্ছন্ন হবিগঞ্জ গড়তে ব্যাপক কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন

শহরের বাইপাস সড়কে ৪ লেনের রাস্তা নির্মাণ এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য দুই দিকে খাল খনন, হবিগঞ্জ পৌরসভার ময়লা ফেলার জন্য সুবিদপুর ইউনিয়নে ডাম্পিং স্টেশন চালু, হবিগঞ্জ সদর থানার সামনে মুক্তিযোদ্ধা চত্ত্বর থেকে মোত্তালিব চত্ত্বর পর্যন্ত রাস্তাটিকে নান্দনিক করতে সড়কের উভয় পাশের সকল লিজ বাতিল করে দোকানপাট উচ্ছেদ করা হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্তমান ও নবাগত শিশুর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার প্রত্যয় নিয়ে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন ‘পরিচ্ছন্ন হবিগঞ্জ অভিযান’ কার্যক্রমের আওতায় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে বুধবার দুপুরে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যেসব কর্মসূচি গ্রহণ বা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- হবিগঞ্জ শহরের পুরাতন খোয়াই নদীকে নিয়ে নান্দনিক প্রকল্প গ্রহণ, সকল অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখা, বাইপাস সড়কে ৪ লেনের রাস্তা নির্মাণ এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য দুই দিকে খাল খনন করা, হবিগঞ্জ পৌরসভার ময়লা ফেলার জন্য বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নে ডাম্পিং স্টেশন চালু করা, হবিগঞ্জ সদর থানার সামনে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর থেকে লাখাই সড়কের শুরু পর্যন্ত রাস্তাটিকে নান্দনিক করা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, পর্যায়ক্রমে হবিগঞ্জ শহর থেকে টমটম তুলে দেয়া হবে।
হবিগঞ্জ শহরের পুরাতন খোয়াই নদীকে নিয়ে নান্দনিক প্রকল্প গ্রহণ বিষয়ে সভায় জানানো হয়- হবিগঞ্জ শহরের পুরাতন খোয়াই নদীকে নিয়ে ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে খোয়াই নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিংসহ, নদীর তীরে রাস্তাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। বিশেষ করে পুরাতন খোয়াই নদীতে প্রায় ৯শ কোটি টাকা ব্যয়ে নান্দনিক হিসাবে গড়ে তোলা হবে। সেখানে হাটার রাস্তা, পানি বিশুদ্ধকরণ, গাছ লাগানো, ৫টি ব্রীজ নির্মাণ এবং পানিতে নৌকা চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। এর ফলে শুধু এই এলাকার জনগণই নয় বাহির থেকে লোকজন আসবে এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে।
হবিগঞ্জে যে উচ্ছেদ অর্ভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে তা চলমান থাকবে। সকল অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। বাইপাস সড়কে ৪ লেনের রাস্তা করা হবে এবং দুই দিকে খাল খনন করা হবে যাতে পানি নিস্কাশন করা যায়। শহরের ময়লা পরিস্কারের জন্য ডাম্পিং স্টেশনের কাজ দ্রুত দৃশ্যমান করা হবে। জেলা প্রশাসক তার বক্তব্যে সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, তাদের সহযোগিতা থাকায় উচ্ছেদ অভিযানসহ এই প্রকল্প গ্রহণ করা সহজ হয়েছে। সংসদ সদস্য এবং জনপ্রতিনিধিদের সমর্থন থাকলে যে কোন কঠিন কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।
জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ বলেন, হবিগঞ্জ সদর থানার সামনে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর থেকে লাখাই সড়কের শুরু পর্যন্ত রাস্তাটিকে নান্দনিক হিসাবে গড়ে তোলা হবে। এই রাস্তার উভয়দিকে সরকারী জায়গা অনেকেই অস্থায়ীভাবে ইজারা গ্রহণ করেছেন। এই ইজারা বাতিল করা হবে এবং সেখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এরপর রাস্তা প্রশস্তকরণ করা হবে এবং উভয়দিকে থাকবে ড্রেন। আর রাস্তার পাশে লাগানো হবে বিভিন্ন ফুলের গাছ। ফলে যে কেউ এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় অন্য রকম অনুভব করবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার, বগলা বাজার ও পুরান বাজার এলাকার রাস্তা অত্যন্ত সরু। ব্যবসায়ীদের ঘরের সিঁড়ি রাস্তার মাঝে চলে এসেছে। আবার সাইনবোর্ড ব্যবহার করায় রাস্তার প্রশস্ত আর কমে গেছে। এই অবস্থায় সেখানে চলাচল করা কষ্টকর হয়। এগুলো অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এই রাস্তাটিকে আরও প্রশস্ত করতে সবার সাথে মতবিনিময় করা হবে। সকলেই যদি সামান্য করে জায়গা ছেড়ে দেন তাহলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে। তিনি আরও বলেন, দিনের বেলা যাতে শহরে ট্রাক লোডিং এবং আনলোডিং করতে না পারে তার জন্য বিশেষভাবে নজরদারী করতে হবে। এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে নির্দেশ দেন তিনি।
সভায় জানানো হয়- হবিগঞ্জ পৌরসভার ময়লা ফেলার জন্য বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নে ২০০৪ সালে ২ একরের বেশী জমি ইজারা নেয় হবিগঞ্জ পৌরসভা। কিন্তু এই ভূমি ব্যবহারের জন্য যখন পৌরসভা উদ্যোগ গ্রহণ করে তখন স্থানীয় লোকজনের বাধার কারনে সেখানে ডাম্পিং স্টেশন এর কাজ শুরু করা যায়নি। ফলে পৌরসভা হবিগঞ্জ আধুনিক স্টেডিয়ামের পাশে এবং চৌধুরী বাজার এলাকার খোয়াই নদীতে ময়লা ফেলে পুরো শহরকে নোংরা করে ফেলে। বিভিন্ন সময় সুবিদপুরে ডাম্পিং স্টেশন সক্রিয় করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও স্থানীয় লোকজন কোনভাবেই হবিগঞ্জের ময়লা নিয়ে সেখানে নোংরা করা হবে তা মেনে নিতে পারেননি। সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা জনগণের সাথে যোগ দেয়ায় সেটি অনিশ্চিত করে তোলে। তবে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদের উদ্যোগের ফলে এই সমস্যার সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বলেন, যেহেতু সমগ্র হবিগঞ্জ জেলাকে সুন্দর করতে চাই তাই হবিগঞ্জ পৌরসভার ময়লাতে যাতে সুবিদ এলাকায় দুর্গন্ধ না ছড়ায় তার ব্যবস্থা করা হবে। এ ব্যাপারে সরকারের জনপ্রতিনিধি হিসাবে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের সহযোগিতা কামনা করেন। তখন উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, এটি একটি আঞ্চলিক সমস্যা। বিভিন্ন সময় এলাকাবাসী কিভাবে ময়লা ব্যবস্থাপনা করা হবে তা উপস্থাপনের জন্য বলা হলেও কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এছাড়াও হবিগঞ্জ পৌরসভা যখন সেখানে জায়গা ইজারা নেয় তখন স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদেরকে অবহিত করেনি। সেখানে অনেক প্রতিষ্ঠান থাকায় স্থানীয় লোকজন চায়নি তার এলাকায় দুর্গন্ধ আসুক। তবে যদি পরিকল্পিতভাবে ডাম্পিং স্টেশন করা হয় তাহলে অবশ্যই প্রশাসনকে সহযোগিতা করা হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক উপ-সচিব নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি মর্জিনা আক্তার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শামছুজ্জামান, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র মিজানুর রহমান মিজান, হবিগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র দিলীপ দাশ, বানিয়াচং উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী, জেলা পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শামীম আহছান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান, সাংবাদিক রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, শাকিল চৌধুরী, হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি তদন্ত জিয়াউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি শরীফ উল্লাহ, প্রচার সম্পাদক অনুপ কুমার দেব মনা, ব্যকস সভাপতি শামছুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আলমগীর মিয়া, কাউন্সিলার শেখ উম্মেদ আলী শামীম, আলমগীর আলম, বাপা সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, কবি তাহমিনা বেগম গিনি, হবিগঞ্জ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ আলী মন্ডল, ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজ উদ্দিন খান, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের কর্মকর্তা তাহেরা বেগম, যুব রেড ক্রিসেন্টের আশীষ কুরী প্রমূখ।