চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ চুনারুঘাটের ঐতিহ্যবাহী চাটপাড়া ফাজিল মাদ্রাসার এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের শাসনের নামে গায়ে হাত দিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ৬ আগস্ট চাটপাড়া গ্রামের কাজী আবু সাঈদ ওরফে সোহাগ নামের এক শিক্ষক চাটপাড়া ফাজিল মাদ্রাসায় প্রাইভেট পড়ানোর নামে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে শাসনের নামে গায়ে হাত দিয়ে যৌন হয়রানি করেন। এ নিয়ে অভিভাবকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
সূত্র জানায়, সরকারিভাবে কোন প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেট টিউশনি করার কোন অনুমতি না থাকলেও ওই শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে ওই প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেট পড়ানোর নামে ছাত্রীদেরকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করাসহ তাদের যৌন নিপীড়ন চালিয়ে আসছেন। ২০১৭ সালে দেউলগাঁও গ্রামের এক ছাত্রীকে মাত্রাতিরিক্ত উত্ত্যক্ত করে যৌন হয়রানি করেন শিক্ষক আবু সাঈদ। পরবর্তীতে মান-সম্মানের ভয়ে ছাত্রীকে লেখাপড়া ছাড়িয়ে তার পরিবার অন্যত্র বিয়ে দেন। গত ৬ আগস্ট মঙ্গলবার শিক্ষক সাঈদের প্রকাশ্যে গায়ে হাত দিয়ে হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা মোঃ রহমত আলী বরাবর অষ্টম শ্রেণীর ১৬ জন ছাত্রী স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। ওই অভিযোগের অনুলিপিসহ মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মতিন জেলা প্রশাসক বরাবর শিক্ষক কাজী আবু সাঈদ ও গভর্নিং বডির সদস্য ফরহাদ বখত চৌধুরীর বিরুদ্ধে আরেকটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এদিকে প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রিন্সিপালের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কাজী আবু সাঈদের বিষয়টি তার সহকর্মীসহ স্বজনরা নিষ্পত্তি করতে চাইলে আমরা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে তা করিনি। লিখিত অভিযোগটি পাওয়ার সাথে সাথেই আমলে নিয়ে শিক্ষক কাজী আবু সাঈদকে ক্লাস থেকে সাসপেন্ড করেছি এবং গভর্নিং বডির সভাপতি এডিসিকে বিষয়টি অবগত করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ভাইস প্রিন্সিপাল রহমত আলী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার সাবেক এক শিক্ষকসহ একাধিক শিক্ষক বলেন, কাজী সাঈদ চাটপাড়া মাদ্রাসায় যোগদানের পর থেকেই কখনও প্রকাশ্যে আবার কখনও অভিনব কায়দায় একের পর এক ছাত্রীদেরকে যৌন হয়রানি করছেন। ফলে নষ্ট হচ্ছে মাদ্রাসার সুশিক্ষা ও পরিবেশ। ২৫ আগস্ট ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। যার অনুলিপি দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের আরও ৭টি সেক্টরে। যে কারণে গত পহেলা সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় গাজীগঞ্জ বাজারে মাদ্রাসা গভর্নিং বডির সদস্য ফরহাদ বখতের ইশারায় অভিযোগকারী মাওলানা আলহাজ্ব আব্দুল মতিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন শিক্ষক কাজী আবু সাঈদ। এ বিষয়টি মাওলানা আব্দুল মতিন শুক্রবার জুমার নামাজে মাদ্রাসা মসজিদে সকল মুসল্লীয়ানদের অবগত করেন। ওই মসজিদে মুসল্লীয়ানরা সর্বসম্মতিক্রমে আজ শনিবার সকাল ১০টায় মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল বরাবরে এলাকাবাসীসহ শিক্ষক সোহাগের বিরুদ্ধে পূর্বের অভিযোগের বিষয় জানা ও পুনরায় অভিযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com