শ্রমিকদের হাজিরা ও বোনাস নেই ॥ খাদ্য সংকটে পড়তে যাচ্ছে বাগানগুলোর ৪ হাজার শ্রমিক
আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি টি কোম্পানীর ৩টি চা বাগান বন্ধ হয়ে গেছে। দেড় কোটি টাকা বকেয়ার কারণে গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন কাটা রয়েছে এক সপ্তাহ ধরে। এ অবস্থায় বাগানগুলোর ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকায় চা উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এছাড়া গত সপ্তাহ থেকে বাগানগুলোর শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি বন্ধ রয়েছে। বকেয়া রয়েছে শ্রমিকদের এরিয়া বিলও। আসন্ন দোল পূজার বোনাসও দেয়া হয়নি। এতে শ্রমিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। খাদ্য সংকটে পড়তে যাচ্ছে বাগানগুলোর ৪ হাজার শ্রমিক।
বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী মোর্শেদ খানের মালিকানাধীন লস্করপুর ভ্যালীতে দেউন্দি টি কোম্পানীর দেউন্দি, লালচান্দ ও নোয়াপাড়া চা বাগানে প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক কাজ করে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চায়ের মূল্য কমে যাওয়া এবং ভারতীয় চা দেশে প্রবেশের কারণে বাগানগুলো লোকসানে পড়ে। এ অবস্থায় ধার-দেনা করে বাগানগুলো চালানো হচ্ছে। ২০২৩ সালে শ্রমিকদের এরিয়ার বিল প্রত্যেকে ১১ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো এসব বাগানে শ্রমিকদের এরিয়ার বিল প্রত্যেকের ৪ হাজার টাকা করে বকেয়া রয়েছে। এরই মধ্যে বাগানগুলোর প্রায় দেড় কোটি টাকা গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে। এ অবস্থায় গত সপ্তাহে বাগানগুলোর ফ্যাক্টরিসহ সকল লাইনের গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে বন্ধ হয়ে যায় চা প্রক্রিয়াজাত করণ। ফলে বিপাকে পড়ে বাগানগুলো। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার চা বাগানগুলো তাদের শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি দিতে পারেনি। এরই মধ্যে তাদের গত সপ্তাহে দেওয়ার কথা ছিল দোল পূজার বোনাসও। সেটাও দিতে পারেনি বাগান কর্তৃপক্ষ। গত বছর জুড়ে নানা আন্দোলন আর অবরোধের মধ্যেই শ্রমিকরা ৭ হাজার টাকা করে এরিয়ার বিল পেয়েছে। বাকি ৪ হাজারের জন্য বার বার অবরোধের পর সময় নিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষ এ টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। নতুন করে বকেয়ার তালিকায় যোগ হয় দোল পূজার বোনাস ও সাপ্তাহিক মজুরি। এ অবস্থায় বকেয়ার দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোব্দ হয়ে উঠছে। দৈনিক হাজিরা না পেলে না খেয়ে মরতে হবে শ্রমিকদের।
এরমধ্যেও শ্রকিরা বাগানের চা গাছ ঠিক রাখতে (পাতা না কাটলে গাছ বড় হয়ে যায়) পাতা চয়ন অব্যাহত রেখেছেন। পাশের অন্য কোন বাগানে চয়নকৃত পাতা দিতে না পারায় ফেলে দিতে হচ্ছে চয়নকৃত পাতা। এতেও বিপুল পরিমাণ কাঁচা পাতা নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু দিনশেষে তারা মজুরি পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে নানা সংকটে পড়েছে কোম্পানীর ৩টি চা বাগান। বন্ধ রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ভাতাও। তারাও পড়েছেন চরম সংকটে।
দেউন্দি চা বাগানের সিনিয়র ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন জানান, একদিকে চায়ের মূল্য কমে গেছে, উৎপাদনের চেয়ে বিক্রয় মূল্য কম, অন্যদিকে ভারতীয় চা অবৈধ ভাবে দেশে প্রবেশ করছে। সবমিলিয়ে বাগানগুলো লোকসানে রয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক কোম্পানীর লোন পাস করছে না। এতে করে শ্রমিকদের বকেয়া বিল ও মজুরি দিতে পারছি না। তবে আমরা চেষ্ঠা করছি দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করার।
চাকলাপুঞ্জি বাগানে ৪দিন ধরে কর্মবিরতি চলছে ঃ এদিকে ডানকান ব্রাদার্স এর মালিকানাধীন চাকলাপুঞ্জি চা বাগানে ৪ দিন ধরে চলছে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ মিছিল। দোল পূজার বোনাস ৩ হাজার ৬শ’ টাকার স্থলে এক হাজার ৮শ’ টাকা দেওয়ার কারণে তারা বোনাস নিচ্ছে না। শ্রমিকরা পুরো বোনাস না পেলে বাগানে কাজ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। উপজেলায় ডানকান ব্রাদার্স এর মালিকানাধীন ফাঁড়ি বাগানসহ ১০টি বাগানের শ্রমিকদের মধ্যেই অর্ধেক বোনাস নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় আগামীকাল সোমবার থেকে বাগানগুলোতে দোল পূজা শুরু হচ্ছে।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com