স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজমিরীগঞ্জে ভূমি অফিসের দালাল আলমাছ মিয়াকে ৩ মাসের কারাদ- দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। গতকাল আজমিরীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসে দালালি করার সময় তাকে হাতেনাতে আটক করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাশ। পরে তিনি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আটক দালাল আজমিরীগঞ্জ পৌরসভার সমিপুর গ্রামের আলমাছ মিয়াকে (৪৫) ৩ মাসের কারাদন্ডে দন্ডিত করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আলমাছ মিয়া ইটনা উপজেলার মৃগা ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের মৃত ইদ্রিছ মিয়ার পুত্র। বর্তমানে তিনি আজমিরীগঞ্জের সমীপুর কুমার হাটীর বাসিন্দা। প্রায় ১৬ বছর আগে কৃষি কাজে ব্যবহৃত সেচের মেশিন চুরি করার অপরাধে তাকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে গ্রামছাড়া করেন ওই এলাকার মানুষজন। তখন গ্রামছাড়া হয়ে আজমিরীগঞ্জের কালনী-কুশিয়ারা নদীর খেয়া পাড় হয়ে আজমিরীগঞ্জ বাজারে ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস শুরু করেন আলমাছ। ভাড়া বাসায় কিছু দিন থাকার পর পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের ভাটি সমিপুর গ্রামের মৃত আকছির মিয়ার ছেলে মস্তু মিয়ার কাছ থেকে প্রায় ৩ শতক জায়গা খরিদ করে ঘর নির্মাণ করার চেষ্টা করলে তখন ভাটি সমিপুর গ্রামে লোকজন বাধা দেন। বাধার কারণে ঘর নির্মাণ আটকে যায়। কিছু দিন যাওয়ার পর সমিপুর গ্রামের জনগণের আলমাছের উপর থেকে দৃষ্টি সরে গেলে সময় বুঝে ঘর নির্মাণ করেন আলমাছ। শুরু হয় আলমাছের দ্বিতীয় পর্ব। স্থানীয় এক ব্যক্তির অধীনে ফুট ফরমায়েস এর কাজ করার সময় ঐ ব্যক্তির জায়গা সংক্রান্ত বিষয়াদি দেখাশুনা করার সময় দলিল, পরচা সহ ভূমি সংক্রান্ত কাগজপত্রের বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠেন তিনি। এই পারদর্শীতাকে পুঁজি করে আলমাছ তার অপকর্ম শুরু করেন। আলমাছের অপকর্মের সহযোগী হন আজমিরীগঞ্জের কয়েকজন ভূমিদস্যু। বিভিন্ন জনের বাড়ি, ব্যবসার দোকান ভিটা, ফসলী জমির ত্রুটি বিচ্যুতি খুঁজে, কখনো সঠিক করে দেয়ার কথা বলে কখনো মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন আলমাছ গং।
যে ব্যক্তির অধীনে আলমাছ কাজ করতেন পরবর্তীতে সেই ব্যক্তির পৈত্রিক জায়গা জমি বিক্রির দায়িত্ব নিয়ে দালালির মাধ্যমে রাতারাতি লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক বনে যান আলমাছ। এ ছাড়া মরহুম হাফিজ উদ্দিন হাফাই মিয়ার আজমিরীগঞ্জের বাজার সংলগ্ন রেখে যাওয়া প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জায়গা বিক্রির দায়িত্ব পান আলমাছ। আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে আলমাছ ও তার সহযোগী শুরু করে দেন জায়গা বিক্রির দালালী। জায়গা বিক্রির দালালি করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যান আলমাছ ও তার সহযোগীরা। এরপর বিভিন্ন খাস ভূমি দখল, জাল দলিলে জায়গা বিক্রি, ভূমি অফিসে আসা সাধারণ জনগণেনর কাছ থেকে নামজারী, দলিল তৈরীর কথা বলে সরকারী ফি থেকে কয়েকগুণ বেশী টাকা নিয়ে কাজ করে দেয়া সহ বিভিন্ন অপকর্মে জডিয়ে পড়েন আলমাছ। এমনকি শিশু অপহরণ, ইয়াবা দিয়ে অপহৃত শিশুর পিতাকে ফাঁসাতে গিয়ে পুলিশের খাঁচায় আটক ও জেল খাটেন তিনি। আজমিরীগঞ্জ থানায় রুজু হওয়া ওই মামলাগুলো এখনো চলমান রয়েছে।
গতকাল রোববার (১৫ নভেম্বর) সকালে ভূমিদস্যু আলমাছ উপজেলা ভূমি অফিসে দালালী করতে গেলে তাকে হাতেনাতে আটক করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাশ। আটকের পর ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৮৮ ধারা অনুযায়ী দাকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাশ জানান, দালালী করার সময় হাতে নাতে তাকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদলত পরিচালনা করে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।