বার বার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করছেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল হক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী একাডেমি এন্ড হাই স্কুল ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। তাদের সাফল্যে এলাকাবাসী গর্বিত।
শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী একাডেমি এন্ড হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল হক জানান- ১৯৯৫ সালে নার্সারী থেকে ২য় শ্রেণি পর্যন্ত ৫৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী একাডেমি এন্ড হাই স্কুল। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠানটি মাধ্যমিকে উন্নীত হয়। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি বোর্ড থেকে স্বীকৃতি লাভ করে। ২০১০ সালে জুনিয়র শাখা এবং ২০১৯ সালে মাধ্যমিক শাখা এমপিওভূক্ত হয়। প্রতিষ্ঠানটি শায়েস্তাগঞ্জ শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি এক একর ৩৬ শতক জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৩ তলাবিশিষ্ট একটি পাকা ঘরসহ ৮টি আধাপাকা ঘর রয়েছে।
শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী একাডেমি এন্ড হাই স্কুলে বর্তমানে ২ হাজার ১৬৬ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। ২০০৯ সাল থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ফলাফলে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ২ বার সিলেট বিভাগে সেরা ২০-এ স্থান করে নিয়েছে। একবার ১৪তম এবং একবার ১৮তম স্থান লাভ করেছে। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি সিলেট বিভাগের সেরা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়। আর জেলা পর্যায়ে ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সেরা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়। শুধুকি তাই প্রতিষ্ঠান প্রধানও ২ বার বিভাগীয় পর্যায়ে এবং ৩ বার জেলা পর্যায়ে সেরা প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচিত হন। বিদ্যালয়ের এহেন সাফল্যে শিক্ষার্থী অভিভাবক যেমন খুশি তেমনি প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে গর্ব করেন। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটিকে জেলার একটি শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল হক জানান- তিনি ২০০২ সালের পহেলা জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষককের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন শিক্ষার মানোন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। শিক্ষক, অভিভাবকসহ সকলের আন্তরিক প্রচেষ্ঠা ও সহযোগিতায় তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে একটি নির্দিষ্ট মানদন্ডে নিয়ে যেতে পেরেছেন। এজন্য তিনি আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে প্রতিষ্ঠাটিকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল হক আরো জানান- শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী একাডেমি এন্ড হাই স্কুল ২০১৩ ও ২০১৬ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিল হতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি এবং একজন সহকারি শিক্ষক ও একজন ছাত্রকে তারা নিজ খরচে ইংল্যান্ড সফর করিয়েছে। সফরকালিন সময়ে প্রশিক্ষণ, ঐতিহাসিক স্থাপনা ও নিদর্শন পরিদর্শন এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ অন্তর্ভূক্ত ছিল। ২০১৮ সালে বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে তিনি থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেন। সেখানে তিনি ১৫ দিন অবস্থান করেন এবং প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ ও ঐতিহাসিক স্থাপনা ও নিদর্শন পরিদর্শন করেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী একাডেমি এন্ড হাই স্কুলের ৩ জন শিক্ষার্থী বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা এবং জাতীয় পর্যায়ে ২য় স্থান অর্জন করে। পরে তাদের সরকারি খরচে ইন্দোনেশিয়া সফর করানো হয়। এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী মিশকাতুল আহমেদ সৃজনশীল মেধা অন্বেষন প্রতিযোগিতায় সাধারণ জ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা নির্বাচিত হয়ে জাপান সফরের সুযোগ পেয়েছে। যদিও করোনার কারণে সে সফর বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হলে তাকে সফরের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাফল্য সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক বলেন- পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা চালু হওয়ার পর থেকে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাশ করে আসছে। এসএসসিতে পাশের হার প্রায় ৯৯ ভাগ। ২০১৯ সালে এ প্রতিষ্ঠানের ১৩৬ জন শিক্ষার্থী পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৬০ জন এ প্লাস এবং ১৭ জন বৃত্তি পেয়েছে। জেএসসিতে ১৫৬ জন অংশ নিয়ে এ প্লাস পেয়েছে ৩১ জন ও বৃত্তি পেয়েছে ৭জন। ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ৫২ জন শিক্ষার্থী এ প্লাস পেয়েছে।
তিনি আরও জানান- বিদ্যালয়ের শিক্ষা মেলা বেশ জনপ্রিয়। সিলেট বিভাগীয় পর্যায়ে যে মেলা আয়োজন করা হয় তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন তাদের থেকে অনেক বড় মেলা হয় তাদের প্রতিষ্ঠানে। অনেক বেশি শিক্ষার্থীর সমাগম ও স্টলের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। কারণ এখানে শিক্ষার্থীদের শুধু পড়ানো নয়, প্রাকটিক্যালি হাতে কলমে সব শেখানো হয় এবং সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক ২ থেকে ৩টি প্রজেক্ট উপস্থাপন করতে হয়।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে ৬৩ জন শিক্ষক-কর্মচারি কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে ১১ জন এমপিওভূক্ত। অন্যরা পার্ট টাইম চাকুরি করেন। রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্ণার যা থেকে শিক্ষার্থীরা দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পারবে।