প্রবাসী ধনঞ্জয় পলাতক থাকায় করোনা ভাইরাস বহন করছে কি-না এ নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন
উত্তম কুমার পাল হিমেল, নবীগঞ্জ থেকে ॥ নবীগঞ্জের ছেলে অস্ট্রেলিয়া থেকে বউ নিয়ে দেশে আসলেও ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে স্ত্রীকে রেখে তার পাসপোর্টসহ স্বামীর পলায়নের ঘটনাটি নিয়ে নবীগঞ্জ শহরে তোড়পাড় চলছে। এদিকে স্ত্রী অনুশ্রী দেব অনু করোনা ভাইরাস পরীক্ষা শেষে গত ১৯ মার্চ বৃহস্পতিবার স্বামী ধনঞ্জয় চন্দ্র দেব এর বাড়ি নবীগঞ্জ শহরের গয়াহরি গ্রামে আসলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে ঘরে না তোলে গেইট তালাবদ্ধ রেখে তাকে আটকে রাখে। এ সময় গৃহবধূ ঘরে ঢুকার চেষ্টাকালে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে ও তার মা’কে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে আহত গৃহবধূ অনুশ্রী দেব অনুর মা সঞ্চিতা ধর বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ)/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ রবিবার দিবাগত গভীর রাতে অনুশ্রী দেব এর দেবর দিপংকর দেব (২৭)কে গ্রেফতার করেছে। গতকাল সোমবার ধৃত দিপংকর দেবকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, নবীগঞ্জ পৌরসভার গয়াহরি গ্রামের ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেব এর অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ছেলে ধনঞ্জয় চন্দ্র দেব এর সাথে ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর বিয়ে হয় উপজেলার বদরদী গ্রামের বাসিন্দা হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রথীন্দ্র চন্দ্র দেব এর উচ্চ শিক্ষিত কন্যা অনুশ্রী দেব অনু’র। বিয়ের পর ধনঞ্জয় দেব ও তার পরিবার অস্ট্রেলিয়া যেতে হলে যৌতুক হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে অনু’র কাছে। তার আংশিক দাবি মানার পর ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নববধূকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দেয় ধনঞ্জয় দেব। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী ঊভয়ই সুখী জীপন যাপন করছিলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পরই আসল চেহারা ধরা পড়ে ধনঞ্জয় দেব এর। প্রায়ই নানা অজুহাতে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে তার স্ত্রীকে। অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবসা করার কথা বলে পিতার কাছ থেকে আরও ১০ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে আনার জন্য চাপ দেয় অনুশ্রীকে। স্বামী কথায় রাজি না হওয়ায় অনুশ্রী দেব অনু’র উপর নেমে আসে নির্যাতন। ঘটনাটি অস্ট্রেলিয়া প্রশাসনকে জানালে সুচতুর ধনঞ্জয় দেব গত ১৭ মার্চ স্ত্রী অনুশ্রী দেবকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ওইদিন রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর পৌঁছার পর স্ত্রীকে ধোকা দিয়ে স্বামী ধনঞ্জয় দেব অনুশ্রীর পাসপোর্ট, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, লাগেজসহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে স্ত্রীকে এয়ারপোর্ট রেখেই পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় হতভম্ভ স্ত্রী অনুশ্রী দেব। দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। স্বামী ধনঞ্জয় দেব এর মোবাইল ফোনের সুইচ অফ থাকায় বাধ্য হয়ে ফোন দেন অনু’র পিতা-মাতাকে। এক পর্যায়ে বিমান বন্দরে স্থাপিত কোয়ারেন্টিনে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাই ও মা’কে সাথে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গয়াহরি গ্রামে আসেন নুশ্রী দেব অনু। কিন্তু শ্বশুর বাড়ির লোকজন পুত্রবধূকে ঘরে না তোলে গেইট তালাবদ্ধ করে রাখে। বারবার আকুতি জানানোর পরও শ্বশুর বাড়ির লোকদের মন গলেনি। বাধ্য হয়ে অনু ঘরে ঢুকার চেষ্টা করলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। খবর পেয়ে পুলিশ, এলাকাবাসী, পৌর মেয়রসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। তবে পুত্রবধূকে ঘরে না তোলে শেষ পর্যন্ত পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় স্ত্রী অনুশ্রী দেব অনু’র মা বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় মামলা করলে পুলিশ ধনঞ্জয় দেব এর বাড়ি শহরতলীর গয়াহরি গ্রামে অভিযান চালিয়ে তার ভাই দিপংকর দেবকে গ্রেফতার করে। মামলার অপর আসামীরা বাড়িঘর ছেড়ে পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) উত্তম কুমার দাশ জানান, আসামীদের গ্রেফতারে জোর তৎপরতা অব্যাহত আছে। এ ব্যাপারে ধনঞ্জয় দেব এর বড় ভাই দীপক দেব জানান, আমাদের বাড়িতে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগটি মিথ্যা ও সাজানো। এদিকে ধনঞ্জয় পলাতক থাকায় সে করোনা ভাইরাস বহন করছে কি না এ নিয়েও জনমনে রয়েছে নানান আলোচনা। এছাড়া ধনঞ্জয়ের পিতা ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবকে নিয়েও শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা।