মসজিদের পুকুর থেকে উদ্ধার করা কিশোরী হনুফা আক্তারের হত্যা রহস্য উদঘাটন
আদালতে ঘাতক স্বামীর স্বীকারোক্তি ॥ শাশুড়ি ও ভাসুর আটক
এসএম সুরুজ আলী ॥ শ^শুরবাড়ি থেকে কিছু না পাওয়ার যন্ত্রণা, আর দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম এড়ালিয়া গ্রামে কিশোরী বধূ হনুফা আক্তার প্রকাশ সোনাই বিবিকে গলা টিপে হত্যা করেছে প্রেমিক স্বামী বিল্লাল মিয়া। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে নিয়ে পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য জানিয়েছে ঘাতক স্বামী বিল্লাল মিয়া। রবিবার সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে আব্দুল হাসিমের ছেলে ঘাতক বিল্লাল।
স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) মোঃ রবিউল ইসলাম (পিপিএম) জানান, ২ বছর প্রেম করার পর প্রায় ৭ মাস আগে সদর উপজেলার পশ্চিম এড়ালিয়া গ্রামের সওদাগর মিয়ার মেয়ে হনুফা আক্তারকে (১৭) বিয়ে করে তারই চাচাতো ভাই বিল্লাল মিয়া (২০)। প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করার কারণে শ^শুরবাড়ি থেকে কোন কিছুই পায়নি। খাট, পালঙ্ক থেকে শুরু করে কিছুই তার কপালে জুটেনি। শ^শুরবাড়িতে যাওয়াও অনেকটা বন্ধ ছিল। এ নিয়ে প্রায়ই বিল্লালের মা, বোনসহ পরিবারের লোকজন হনুফাকে কটাক্ষ করে কথা বলতো। তারা প্রায়ই বলতো প্রেম করে বিয়ের কারণে শ^শুরবাড়ি থেকে কিছুই পায়নি। প্রেম না করলে আরও ভাল মেয়ে ও জিনিসপত্র পেতো। তারা যৌতুক আনার জন্য বিল্লাল মিয়াকে চাপ সৃষ্টি করতো। মা, বাবা, ভাই ও বোনের কথা শুনে বিল্লাল প্রায়ই হনুফাকে চাপ দিতো। কিন্তু হনুফার বাবা গরীব হওয়ায় হনুফা যৌতুক আনতে অপারগতা প্রকাশ করতো। এ নিয়ে হনুফার সাথে বিল্লাল মিয়া তর্কাতর্কিতে লিপ্ত হতো এবং তার সাথে দুর্ব্যবহার করতো। আর এতে অতিষ্ঠ হয়ে সে তার স্ত্রীকে ১৮ মার্চ রাত ৩টার দিকে গলাটিপে হত্যার পর বাড়ির পাশর্^বর্তী মসজিদের পুকুরে লাশ ফেলে দেয়। ১৯ মার্চ সকালে মসজিদের পুকুরে হনুফার লাশ ভাসমান অবস্থায় দেখে তার আত্মীয় স্বজনরা পুলিশকে অবগত করে। পরবর্তীতে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা (বিপিএম-পিপিএম) এর নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) মোঃ রবিউল ইসলাম পিপিএম এর নেতৃত্বে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুক আলী, পুলিশ পরিদর্শক দৌস মোহাম্মদ, পুলিশ পরিদর্শক মোঃ জাকির হোসেনসহ থানার অফিসার ও ফোর্সের টিম নিয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে নিহত হনুফার সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকালে তার বাম গালে হালকা জখম এবং গলায় কালো দাগের জখমের চিহ্ন ও ফুলা দেখতে পায় পুলিশ। ধারণা করা হয়, হনুফা আক্তারকে গলায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পুকুর পাড়ে ফেলা হয়েছে। এ সময় বিল্লাল মিয়া, তার মা চাঁন বানু (৪৮) ও ভাই রাজু মিয়াকে (২২) আটক করা হয়। ঘটনার ৪ দিন পর গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় স্বামী বিল্লাল মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের বাবা সওদাগর মিয়া বাদি হয়ে সদর থানায় ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ঘাতক বিল্লাল মিয়াকে প্রধান আসামী করা হয়। অন্য আসামীরা হলো- বিল্লালের বড় ভাই রাজু মিয়া, পিতা আব্দুল হাসিম, মা চানবানু, বোন ও ভগ্নিপতি সাদেক মিয়া।
তিনি আরো বলেন- লাশ উদ্ধারের পরই পরিবারের সদস্যদের আচরণে পুলিশের সন্দেহ হয়। ফলে স্বামী ও শাশুড়িসহ ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে স্বামী নিজে হত্যাকান্ডের জন্য অনুতপ্ত হয়। সে নিজে থেকেই স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য পুলিশকে জানায়। বাকি আসামীদেরও অবিলম্বে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে, হবিগঞ্জ সদর থানা থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- আসামী চাঁন বানু ও রাজু মিয়াকেও গ্রেফতার করে কোর্টে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলাটি পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মোঃ জাকির হোসেন তদন্ত করছেন। ঘটনার পরপরই পুলিশের জোর তৎপরতা এবং আসামী গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে দ্রুত হনুফা আক্তারের হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। তদন্ত অব্যাহত আছে।