প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোঃ নাছির উদ্দিন একজন এক্স ক্যাডেট হওয়ায় তিনি স্বপ্ন দেখেন ভবিষ্যতে তাঁর প্রতিষ্ঠানটি হবে মানসম্পন্ন পূর্ণাঙ্গ ক্যাডেট স্কুল
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ সমাজের জন্য কিছু একটা করার তাগিদে ২০০৭ সালে সমমনা কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার স্বপ্ন দেখেন। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি হবে মানসম্পন্ন। ২০০৮ সালে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়। শুরু হয় স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানের পথচলা। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দক্ষতায় প্রতিষ্ঠানটি স্বল্প সময়ে সুনাম অর্জন করে।
স্কুলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন, ২০০৮ সালে আমরা সমমনা ৫ জন বন্ধু মিলে শহরের শায়েস্তানগর পইল রোডে জায়গা ভাড়া নিয়ে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ি। যার নাম দেই ‘দ্য নিউ ব্লু-বার্ড কিন্ডারগার্টেন’। নিজেদের টাকায় ভাড়া নেয়া জায়গায় ঘর তৈরী করে স্কুলটির যাত্রা শুরু হয়। আমাদের প্রাথমিক বিনিয়োগ ছিল ১০ লাখ টাকা। প্রথম বছর প্লে থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করি। প্রথম বছর ৬০ জন ছাত্রছাত্রী আমাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়। আমি প্রতিষ্ঠাকালিন সময় থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করি। আমার সুদক্ষ পরিচালনায় দিন দিন প্রতিষ্ঠানটির সুনাম বৃদ্ধি পায়। ফলে তাতে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বাড়তে থাকে।
হঠাৎ করে ২০১৬ তে এসে চিন্তা করে দেখলাম যে দ্য নিউ ব্লু বার্ড স্কুলটির অবকাঠামো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলে শ্রেণিকক্ষগুলোতে পানি পড়ে, মাঠে হাঁটু পানি লেগে যায়। রাস্তার পাশ দিয়ে এমনভাবে দানবরুপি মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচল করে, যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই একটি সঠিক জায়গায় কিভাবে আরো সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম। দিন যেতে লাগল চিন্তাটা মাথার মধ্যে আরও তীব্র হতে লাগল। চিন্তা করি এলাকায় যদি একটি সুন্দর ও উন্নতমানের প্রি-ক্যাডেট স্কুল প্রতিষ্ঠিত করতে পারি তাহলে জীবনের কিছুটা হলেও আশা পূরণ হবে। বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন, আমার সহকর্মী শিক্ষক-শিক্ষিকা, গুণীজনদের সাথে আলোচনা ও পরামর্শ করি। সেই চিন্তা ও পরামর্শ থেকেই ২০১৮ সালের শুরুতে শায়েস্তানগর পইল রোডের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া হবিগঞ্জ শহরের খোয়াই নদীর পাশে যেখানে শুধু গাছপালার ধু-ধু বাতাস, নেই কোনো গাড়ির শব্দ, নেই কোনো ধুলোবালি, প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে গড়ে তুলি আমার জীবনের লালিত স্বপ্নের সেই শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ব্লু বার্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুল’।
২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয় সেই স্বপ্নের যাত্রা। নিজস্ব জায়গায় অত্যন্ত খোলামেলা পরিবেশে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করে তাতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করি। শুরুতেই ‘ব্লু বার্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুল’ ১৯৮ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির ১৩ জন শিক্ষার্থী প্রথমবারের মতো পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। আমার প্রত্যাশা সকলেই পাশ করবে।
দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ-এর সাথে আলাপকালে ব্লু বার্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোঃ নাছির উদ্দিন আরো বলেন, নিজের গড়া নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ব্লু বার্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুল’ এর শিক্ষার্থীরা প্রথম বারের মতো হবিগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন ফোরাম আয়োজিত বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩২টি ট্যালেন্টপুল ও ১১টি সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি লাভ করেছে। শিক্ষার্থীদের এ সাফল্যে আমি গর্বিত। কারণ এ ফলাফলে তারা জেলার সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর প্রথম বারই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ফলাফলে চমক সৃষ্টি করেছে।
তিনি আরও বলেন, তিনি যে এলাকায় স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন সে এলাকাটি অনুন্নত। তাছাড়া ওই এলাকায় একদিকে শিক্ষার হার কম, অন্যদিকে শিক্ষার প্রতি অনেক অভিভাবকের আগ্রহও কম। তাই দ্বারে দ্বারে গিয়ে অভিভাবকদের বুঝাতে হয়েছে। তাদের বুঝিয়ে ছাত্র সংগ্রহ করতে হয়েছে। অনেক অভিভাবক সচেতন না থাকায় গুণগত মানের শিক্ষা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়।
ব্লু বার্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলটি সম্পূর্ণ সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সার্বক্ষণিক এর সকল কার্যক্রম সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং করা হয়। ওয়াইফাইর মাধ্যমে অভিভাবকরা পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে বসে স্কুলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার সুব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে যাবতীয় তথ্য জানার সুযোগ। স্কুল ক্যাম্পাসটি সম্পূর্ণ নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত। ছোট সোনামণিদের জন্য রয়েছে প্রশস্থ খেলার মাঠ। ফলে প্রতিটি শিশু মেধা মননে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠে। তিনি গর্বের সাথে বলেন, ২০০৮ সালে হবিগঞ্জে তিনিই প্রথম কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের পোশাকের প্রচলন করেন। তিনি একজন এক্স ক্যাডেট হওয়ায় পিটি প্যারেড তিনি নিজেই করান। তার প্রতিষ্ঠানে প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক রয়েছেন। একমাত্র ব্লু বার্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলেই সারা বছর সবচেয়ে বেশি কর্মদিবস পালন করা হয়। হবিগঞ্জ শহরের ৮০ ভাগ স্কুল ভাড়া বাসাবাড়িতে পরিচালিত হয়। কিন্তু তাঁর নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে নিজস্ব জায়গায়। এলাকার পিছিয়ে পড়া শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে তিনি প্রতিষ্ঠানটি গড়েছেন। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কক্ষ সুপ্রশস্থ যাতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। যা একজন শিক্ষার্থীর মানসিক ও সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। দরিদ্র শিশুদের জন্য রয়েছে বিশেষ ছাড়সহ ফ্রি লেখাপড়া করার সুযোগ।
ব্লু বার্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্লে শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম হাতে কলমে শেখানোর পাশাপাশি কম্পিউটারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাছাড়া এ স্কুলে যে সকল শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে চাঁদের হাসি হাসপাতালে সকল ধরণের চিকিৎসায় বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়। স্কুলের শিক্ষকরা বিএ, অনার্স, মাস্টার্স ডিগ্রিধারী এবং অভিজ্ঞ। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সপ্তাহের ৬ দিন হোম ওয়ার্কের ব্যবস্থা। প্রতিটি ক্লাসের সময় ৪৫ মিনিট। টিউটোরিয়াল ৯টি পরীক্ষাসহ মোট ১২টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্মার্ট ও ইংরেজিতে কথা বলার জন্য রয়েছে কনভারসেশন ক্লাসের ব্যবস্থা। প্রতিষ্ঠানটিতে বাংলাদেশ স্কুল টেক্সটবুক বোর্ডের বই বাধ্যতামূলক।
ব্লু বার্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোঃ নাছির উদ্দিন একজন এক্স ক্যাডেট। তাই তিনি নিজের প্রতিষ্ঠানটি ক্যাডেট ধাঁচে পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন ভবিষ্যতে তাঁর প্রতিষ্ঠানটি হবে একটি মানসম্পন্ন পূর্ণাঙ্গ ক্যাডেট স্কুল। আর সেই লক্ষ্যেই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।