নুরপুরে ৫০ এবং মশাজানে ৩০ জন অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করা হবে। নদী খাল দখল করে গড়ে উঠা সরকারি স্থাপনাও ছাড় পাবে না ॥ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হবিগঞ্জের সকল অবৈধ করাতকল বন্ধ করতে হবে
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ শনিবার হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার ৫০ ভাগ খাতা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে পুনরায় নিরীক্ষা করা হয়েছে। কারণ ১ নম্বরের উপর নির্ভর করে কাক্সিক্ষত প্রতিষ্ঠানে চান্স পাওয়া না পাওয়া। তাই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে আমি নিজে উপস্থিত থেকে খাতা নিরীক্ষা করেছি। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সাথে আমি নিজে জড়িত ছিলাম। প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রশ্ন তৈরী, ফটোকপি, ছাপাসহ সব কাজ নিজেরা করেছেন। চেষ্টা করেছি সব বিতর্কের উর্ধে থেকে নিখুঁতভাবে সবকিছু সম্পন্ন করা। পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর একজন অভিভাবক বলেন তার মেয়ে ভাল করেছে। কিন্তু চান্স পায়নি। এ নিয়ে তার মনে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে তাকে তার মেয়ের পরীক্ষার খাতা দেখানো হয়। খাতা দেখার পর তার সব ভুল ভেঙ্গে যায়। তিনি সন্তেুাষ প্রকাশ করেন। সামনে ৩য় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা। এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আমি নিজেই করব। যাতে এ নিয়ে কোন প্রকার দ্বন্দ্বের অবকাশ না থাকে। হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, সকলের সহযোগিতায় মহান বিজয় দিবস অত্যন্ত সুন্দরভাবে উদযাপন করা হয়েছে। সামনে রয়েছে সপ্তাহব্যাপী বই উৎসব। আগামী ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি বই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত বই উৎসবের ব্যাপক প্রচার প্রচারণার জন্য তিনি সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, বর্তমান প্রজন্ম বই পড়তে তেমন উৎসাহী নয়। তাই বর্তমান প্রজন্মের সন্তানদের বই পড়ায় উৎসাহিত করতে প্রতি শুক্রবার পাঠচক্রের আয়োজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণের নিমতলায় নিয়মিত পাঠচক্র অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বিশ^াস করেন পাঠচক্র নতুন প্রজন্মকে বই পড়ায় আগ্রহী করে তুলবে। বই মেলার উদ্দেশ্য হচ্ছে পাবলিক লাইব্রেরী, সরকারি স্কুল কলেজের লাইব্রেরীকে আরো গতিশীল ও বেগবান করা। আগামী ১০ জানুয়ারি জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ওইদিন থেকে মুজিব বর্ষ উদযাপনের কাউন্টডাউন শুরু হবে।
আজ সোমবার থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় হবিগঞ্জে অবৈধ দখলে থাকা নদী-নালা, খাল দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। শুধু হবিগঞ্জ নয় সারা দেশেই একযোগে এই অভিযান শুরু হবে। এই অভিযান চলমান থাকবে। কারো কাছে অবৈধ দখলদারদের তথ্য থাকলে তা জেলা প্রশাসনকে অবহিত করতে তিনি আহবান জানান। তিনি আশ^স্থ করেন অবৈধ দখলদার যেই হোক তাকে কোন প্রকার ছাড় বা সুযোগ দেয়া হবে না। হবিগঞ্জ শহরের মশাজান ও নুরপুর মৌজায় নদীর উভয় তীরে সকাল ১০টা থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে। তাছাড়া চুনারুঘাটে মরা খোয়াই নদীর জায়গা অবৈধ দখল করে আছে প্রায় ৪০/৪২টি পরিবার। আমরা তাদের চিহ্নিত করে জানিয়ে দিয়েছি। তাদের স্থাপনা নিজ দায়িত্বে না সরালে আমরা অভিযানের মাধ্যমে তা অপসারণ করব। নুরপুরে প্রায় ৫০ জন এবং মশাজানে ৩০ জন অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের সবাইকে উচ্ছেদ করা হবে। সারা জেলায় প্রায় ১ হাজার ৪৫ জন অবৈধ দখলদার রয়েছেন। ইতোমধ্যে চলমান অভিযানে ৭২১ জনকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাকিদেরও শীঘ্রই পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদের আওতায় আনা হবে। তাছাড়া হবিগঞ্জ থেকে বাল্লা এবং লাখাই উপজেলার ফরিদপুর পর্যন্ত প্রতিরক্ষা বাঁধে যে সকল অবৈধ দখলদার রয়েছেন তাদের তালিকা চলছে। আগামী মাস থেকে নবীগঞ্জের শাখা বরাক ও বিবিয়ানা নদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরীর কাজ শুরু করা হবে। শুধু তাই নয় নদী খাল দখল করে গড়ে উঠা সরকারি স্থাপনাও ছাড় পাবে না। ইতোমধ্যে জেলা উন্নয়ন সভায় বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। সরকারি স্থাপনা সরিয়ে নিতে ৬ মাস সময় পাবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এই সময়ের মধ্যে তাদেরকে স্থাপনা সরিয়ে নিতে হবে। না হলে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অর্থাৎ নদী খাল দখল করে গড়ে উঠা কোন প্রতিষ্ঠানই রক্ষা করার সুযোগ নেই।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের আত্মত্যাগে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। পেয়েছি লাল সবুজের পতাকা। তাই তাদের প্রতি আমাদের একটি দুর্বলতা কাজ করে। আমি কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখেছি পুরাতন খোয়াই নদী তাদেরকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মৎস্য চাষের জন্য। অর্থাৎ মৎস্য চাষের মাধ্যমে যা আয় হবে তা তারা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করবেন। অথচ তারা সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। তাদেরকে ওই জায়গা বসবাসের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়নি। তবুও তাদের প্রতি আমাদের আবেগ অনুভূতি থাকায় আমরা তাদের পুনর্বাসনের জন্য নতুন একটি জায়গা বের করেছি। তারা চাইলে সেই জায়গা তাদের বরাদ্দ দেয়া হবে।
সবশেষে জেলা প্রশাসক জানান, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হবিগঞ্জে থাকা সকল অবৈধ করাতকল বন্ধ করতে হবে। এজন্য তিনি প্রশাসনের ৬ জন অফিসার নিয়োগ করেছেন। তারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ করাত কলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
প্রেস কনফারেন্সে হবিগঞ্জে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।