স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ১১ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে সম্মেলন সফল করার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির ও সাধারণ সম্পাদক এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আব্দুল মজিদ খানের নেতৃত্বে জেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বর্ধিত সভা করে যাচ্ছেন। এবারের সম্মেলন শেষে কাউন্সিলে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হবে না-কি কেন্দ্র থেকে সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে মনোনয়ন দেয়া হবে এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা আলোচনা চলছে। তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করেন আওয়ামীলীগের প্রতিটি কমিটি গণতান্ত্রিকভাবে হচ্ছে। এর বাইরে এবারও কোন কিছুই হবে না।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৮টি পদে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। একজন সভাপতি, একজন সাধারণ সম্পাদক, তিন জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তিন জন সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। বিগত কাউন্সিলে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছিলেন তাদের অনেকেই এবারের কাউন্সিলেও বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিচ্ছেন। আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। এবারের কাউন্সিলে বিভিন্ন পদে নতুন মুখও দেখা যাবে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সাধারণ সম্পাদক পদে ৩ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের ৩টি পদে ১০ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদকের ৩টি পদে ৮ প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। দিন দিন সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে।
দলীয় অনেক নেতাকর্মী জানিয়েছেন এবারের কাউন্সিলে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির একক প্রার্থী। সভাপতি পদে অন্য কেউ প্রার্থীতা ঘোষণা দেননি। তবে প্রকাশ্যে ঘোষণা না দিলেও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ডাঃ মুশফিক হুসেন চৌধুরী ও স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম মোল্লা মাসুম সভাপতি পদে প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খানের নাম জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে মাঠে কাজ করছেন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সহ-সভাপতি নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের ৩টি পদে বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান তালুকদার, অ্যাডভোকেট সালেহ আহমেদ, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মাধবপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মর্তুজ আলী, বর্তমান প্রচার সম্পাদক অনুপ কুমার দেব মনা, দপ্তর সম্পাদক আলমগীর খান সাদেক, হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট সুমঙ্গল দাশ সুমনের নাম শোনা যাচ্ছে। অপরদিকে সাংগঠনিক সম্পাদকের ৩টি পদে যারা প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান শামীম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুরউদ্দিন বুলবুল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ, বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মক্রমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আহাদ মিয়া, অ্যাডভোকেট মুনতাকিম চৌধুরী খোকন, অ্যাডভোকেট আব্দুল মোছাব্বির বকুল, শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছালেক মিয়া ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুকিদুল ইসলাম মুকিদ। তবে ৩০ নভেম্বর চুড়ান্ত প্রার্থীদের নাম জানা যাবে।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান জানান, শান্তিপূর্ণভাবে জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন সম্পন্ন করার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। প্রতি বারের মত এবার সম্মেলনও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে বলে আমি আশাবাদী। তিনি বলেন- সম্মেলন সফল করার জন্য আমরা সকল ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এর মধ্যে জেলা সম্মেলনের আগে কয়েকটি উপজেলা সম্মেলন শেষ হয়ে যাবে। যেসব শাখার সম্মেলন সম্পন্ন হবে না সেগুলোতে বর্ধিত সভা করা হবে। ২ ডিসেম্বর শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ৩ ডিসেম্বর লাখাই আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ওই দুই উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। এছাড়া ২৭ নভেম্বর সকালে বানিয়াচং উপজেলা ও বিকেলে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। ২৮ নভেম্বর হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। ২৯ নভেম্বর মাধবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। ৩০ নভেম্বর চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এমপি মজিদ খান বলেন- সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবারের ন্যায় এবারের সম্মেলনেও ৮টি পদে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এবারের কাউন্সিলে আমি কি পদে অংশগ্রহন করবো তা এখনও ঘোষণা দেইনি। তবে সাধারণ সম্পাদক পদেই অংশগ্রহন করতে চাই। এ জন্য ভোটারদের দোয়া, আশির্বাদ ও সহযোগিতা কামনা করি। জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী জানান, জেলা আওয়ামীলীগের বিগত কাউন্সিলে অংশগ্রহন করেছিলাম। কিন্তু কয়েকটি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছি। এবারও সাধারণ সম্পাদক পদে কাউন্সিলে অংশগ্রহন করবো। তবে নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই মেনে নেবো। হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান জানান, আওয়ামীলীগের একজন কর্মী হিসেবে জেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে অংশগ্রহন করতে চাই। এ জন্য আমি প্রস্তুতিও নিচ্ছি। জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক অনুপ কুমার দেব মনা জানান, আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে আমার অনেক বয়স হয়েছে। এ হিসেবে আমি এবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে প্রাথী হতে চাই। আমার চেয়ে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান অনেক সিনিয়র তাঁর প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমি সাধারণ সম্পাদক পদে অংশ নিচ্ছি না। তবে যদি তিনি না থাকতেন তাহলে সাধারণ সম্পাদক পদেই অংশগ্রহন করতাম। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ জানান, বিগত কাউন্সিলেও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অংশগ্রহন করেছি। এবারও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অংশ গ্রহন করবো।