এম.এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ থেকে ॥ নবীগঞ্জ থানা পুলিশের সালিশি ভূমিকার জন্য বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে নবীগঞ্জবাসী। উপজেলার সুজাপুর বেরী বিল নিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করলে নবীগঞ্জ থানার নবাগত ওসি বিরোধীয় বিষয়টি নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করেন। দুই পক্ষকে নোটিশ করে বাহুবল সার্কেল অফিসে সমঝোতা সভায় বসেন। সেই সভায় সুজাপুর বেরী বিল নিয়ে মায়ের দোয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ এর অংশীদারিত্ব নিয়ে দুটি পক্ষের লোকজনকে বিরোধ নিষ্পত্তির স্বার্থে একত্রিত করে লভ্যাংশ সমহারে বন্টনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
ওই সমিতির দুটি পক্ষের লোকজনের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা চলাকালে সমিতির সদস্যদের নিয়ে সিনিয়র এএসপি পারভেজ আলম চৌধুরী, নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আজিজুর রহমান ও সেকেন্ড অফিসার সামসুল ইসলাম ৯ নভেম্বর বিকালে বাহুবল সার্কেল অফিসে বসেন। সভায় উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য যে, গত মঙ্গলবার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে উভয়পক্ষকে আদালতের নির্দেশে ১৪৪ ধারা নোটিশ জারি করেছিলো নবীগঞ্জ থানা পুলিশ।
সূত্র জানায়, উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের সুজাপুর বেরী বিল নামক জলমহালটি ১৪২৬-১৪৩১ বাংলা সনের জন্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় লীজ প্রাপ্ত হয় মায়ের দোয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ। গ্রামবাসী ২৯ সদস্য নিয়ে উক্ত সমিতি গঠন করেন ওই গ্রামের স্কুল শিক্ষক আব্দুল লতিফ। সমিতির সভাপতি আবু মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের নামে লীজ গ্রহণ করা হয়। সমিতির লাভ ও অংশিদারিত্ব নিয়ে সমিতির সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে এবং সমিতির লাভ্যাংশের ভাগ নিয়ে মায়ের দোয়া সমবায় সমিতির সদস্যরা দুইভাগে বিভক্ত হযে পড়েন।
উক্ত সমিতি ১৪২৬-১৪৩১ বাংলা সন পর্যন্ত লীজ প্রাপ্ত হয়ে সমিতির অন্যান্য সদস্যদের না জানিয়ে বার আনা শেয়ার শিক্ষক আব্দুল লতিফের নামে বিক্রি করা হয়। এতে বাধ সাধেন সমিতির অপর সদস্যরা। এক পর্যায়ে বঞ্চিত ৬ সদস্য আইন অনুযায়ী তাদের হিস্যায় প্রাপ্ত চার আনা শেয়ার দাবি করলে শিক্ষক আব্দুল লতিফ এবং সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দিতে অনিহা প্রকাশ করেন। ফলে বঞ্চিত ৬ সদস্য গ্রামবাসীর কাছে তাদের প্রাপ্ত শেয়ার হস্তান্তর করে বিল ফিসিংয়ে সহায়তা কামনা করেন। মৎস্যজীবী হিসেবে খ্যাত বেরী বিলের অধিকার থেকে বঞ্চিত সুজাপুর গ্রামবাসী এতে সায় দেন। ফলে উভয়পক্ষই বিল ফিসিংয়ের জন্য খলা ঘর তৈরি করে মাছ ধরার জালসহ সরঞ্জামাদি তৈরি করেন। এদিকে সমিতির সুবিধাবঞ্চিত ৬ সদস্যের পক্ষে কনা মিয়া বাদী হয়ে হবিগঞ্জের বিজ্ঞ আদালতে ১৪৪ ধারায় মামলা দায়ের করেন। আদালত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ওসি নবীগঞ্জকে নির্দেশ প্রদান করেন।
এনিয়ে গত ৫ দিন ধরে উক্ত বেরী বিল পাড়ে অবস্থিত সুজাপুর গ্রামে উত্তেজনা দেখা দেয়। চরম উৎকন্ঠার মধ্যে সময় পাড় করছিলেন গ্রামবাসী। গতকাল বিষয়টি আপোষ মিমাংসায় শেষ হওয়ার গ্রাম ও এলাকাবাসী হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। ঐ সভায় সিদ্ধান্ত হয় আগামী বছর বেরী বিলের লাভ্যাংশ সমিতি ২৯ জন সদস্যের মধ্যে সমভাবে বন্টন করা হবে। তখন সবাই হাসিমুখে সেই সিদ্ধান্ত মেনে কাগজে স্বাক্ষর করেন।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, আমরা বিষয়টি আপোষ মিমাংসায় শেষ করার জন্য গত কয়েকদিন যাবৎ চেষ্টা করেছি। গতকাল বিকালে উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনে সিদ্ধান্ত হয় আগামী বছর বেরী বিলের লাভ্যাংশ সমিতি ২৯ জন সদস্যের মধ্যে সমভাবে বন্টন করা হবে। সেই সিদ্ধান্ত গ্রামবাসী ও সমিতির সদস্য গ্রহণ একটি কাগজে স্বাক্ষর করেছেন। ঊভয়পক্ষ তাদের মামলা তুলে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মাছ চাষ করবেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিকসহ এলাকার সালিশ বিচারক ও মুরুব্বিয়ানবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উভয়পক্ষ (সমিতির ২৯ জন) মিলে জলমহাল ফিসিং করে লভ্যাংশ সমান ভাগে ভাগ করে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পুলিশের হস্তক্ষেপে বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ায় এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপ হলে তারা জানান, বড় ধরনের সংঘর্ষের আশংকায় ছিলেন তারা। পুলিশের উদ্যোগে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় এলাকার পরিবেশ এখন শান্ত। পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান এলাকাবাসী।