মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ আজ ১২ রবিউল আউয়াল রবিবার। বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী রাহমাতুল্লিল আলামিন সাইয়্যেদুল মুরসালিন খাতামুন্নাবিয়ীন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্ম ও ওফাত দিবস। এ দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে সুবহে সাদেকের সময় মক্কা নগরীর সভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমেনার গর্ভে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পূর্বেই তিনি পিতৃহারা হন এবং জন্মের অল্পকাল পরই মাকে হারিয়ে বঞ্চিত হন মাতৃস্নেহ থেকে। অনেক দুঃখ, কষ্ট ও প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড় হয়ে উঠেন। চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হওয়ার পর তিনি মহান রাববুল আলামীনের পক্ষ থেকে নবুওয়তের মহান দায়িত্ব লাভ করেন। অসভ্য, বর্বর ও পথহারা জাতিকে সত্যের সংবাদ দিতে তিনি তাদের কাছে তুলে ধরেন মহান রাব্বুল আলামীনের তাওহীদের বাণী। কিন্তু অসভ্য মূর্খ জাতি তাঁর দাওয়াত গ্রহণ না করে রাসূলের (সাঃ) উপর নির্যাতন শুরু করে, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিভিন্নমুখী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে একের পর এক। আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনবাজি রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যান তিনি। ধীরে ধীরে সত্যান্বেষী মানুষ তাঁর সাথী হতে থাকে। অন্যদিকে কাফেরদের ষড়যন্ত্রও প্রবল আকার ধারণ করে। এমনকি এক পর্যায়ে তারা রাসূলকে (সাঃ) হত্যার পরিকল্পনা করে। রাসূল (সাঃ) আল্লাহর নির্দেশে জন্মভূমি ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করেন। মদীনায় তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করেন এবং মদীনা সনদ নামে একটি লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেন। মদীনা সনদ বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান নামে খ্যাত। এ সংবিধানে ইহুদী, খ্রিস্টান, মুসলমানসহ সকলের অধিকার স্বীকৃত হয় যথার্থভাবে। এদিকে মক্কার কাফেরদের ষড়যন্ত্রের সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় লেবাসধারী মুনাফিকচক্র। এরা ইসলামের চরম ক্ষতি সাধনে লিপ্ত হয় মহানবী (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নেতৃত্বে ওহুদ যুদ্ধে এক হাজার মুসলিম সৈন্য রওয়ানা করলে পথিমধ্যে মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাইর নেতৃত্বের ৩শ’ জন সরে পড়ে এবং ওহুদ যুদ্ধে বিপর্যয় ঘটানোর অপচেষ্টা চালায়। এ যুদ্ধে মুসলমানরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখিন হয় একটি ভুলের কারণে। এতে অনেক সাহাবা শহীদ হন। স্বয়ং রাসূল (সাঃ)-এর দন্ত মোবারক শহীদ হয়। ২৩ বছর শ্রম সাধনায় অবশেষে রাসূলে পাক (সাঃ) দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিজয় অর্জন করেন। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। অতঃপর বিদায় হজ্বের ভাষণে তিনি আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন মানবজাতিকে। ‘আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দেয়া হলো। তোমাদের জন্য দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থা হিসেবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে। ’ রাসূলের (সাঃ) রেখে যাওয়া সেই শান্তি প্রতিষ্ঠার আদর্শ থেকে মুসলমানরা বিমুখ হওয়ায় বর্তমান বিশ্বে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। ইসলাম বিরোধীদের হাতে আজ বিশ্বের সর্বত্র লাখো লাখো মুসলমান নিহত নির্যাতিত হচ্ছে। অন্যায়, অবিচার আর বর্বরতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তাই অশান্ত এই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। বর্তমানে যারা রাসূলের (সাঃ) রেখে যাওয়া আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে যাচ্ছেন তাদের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। কাফের ও ইসলামের লেবাসধারী মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। কাফেরদের পাশাপাশি ধর্মের লেবাসধারীরাও ইসলামকে কলঙ্কিত করতে চায়। কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকদের কোন ষড়যন্ত্রই রাসূলের (সাঃ) অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারেনি। কেননা আল্লাহ বলেছেন, সত্য সমাগত, মিথ্যা বিতাড়িত। আর নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্তির জন্য। সুতরাং সত্যের সংগ্রামে সাফল্য অনিবার্য। লোকে বিভিন্নভাবে এই উপলক্ষকে উদযাপন করে থাকে। কেউ কেউ এ উপলক্ষে জমায়েত হয়ে নবীজীর জন্মের ঘটনা আলোচনা এবং বক্তৃতা করে থাকেন। কেউ মসজিদে তা উদযাপন করে, কেউ বা উদযাপন করে বাড়িতে। আর কেউ কেউ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে জশনে জুলুস বা র‌্যালি বের করে। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন হবিগঞ্জ শহরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে। কেউবা রাসূল (সাঃ)-এর সীরাতের উপর আলোচনা, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইতোমধ্যে হবিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে বর্ণাঢ্য জশনে জুলুস বের করা হয়। বিভিন্ন মসজিদে আলোকসজ্জা করা হয়। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের উদ্যোগে আজ রবিবার সকাল ১০টায় শহরের চৌধুরীবাজার কেন্দ্রীয় সুন্নি জামে মসজিদের সামন থেকে জশনে জুলুস বের করা হবে। জুলুসটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণ নিমতলায় গিয়ে শেষ হবে। পরে সেখানে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বিভিন্ন চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে। জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। আজ সরকারি ছুটি। সংবাদপত্রসমূহেও ছুটি পালিত হবে। তাই আগামীকাল দৈনিক পত্রিকাসমূহ প্রকাশিত হবে না।