মোঃ আলাউদ্দিন আল রনি ॥ মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধ সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালে গত ৪ মাস যাবত সরকারি ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে করে প্রতিদিন উপজেলার প্রত্যাঞ্চল থেকে আসা ৫ শতাধিক রোগী সরকারি ওষুধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালে প্যারাসিটামল, মেট্রোনিডাজল ও কলেরা স্যালাইন পর্যন্ত সরবরাহও নেই।
গত ৩১ অক্টোবর উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ওষুধ সঙ্কটের বিষয়টি উপস্থাপন করলে উপজেলা পরিষদ থেকে ৩ নভেম্বর ১৬ হাজার ৫শ’ প্যারাসিটামল, ১৪৪টি ৫০০ এমএল কলেরা স্যালাইন ও ১৪৪টি ১০০০ এমএল কলেরা স্যালাইন সরবরাহ করা হয়। এগুলো এখন শেষ পর্যায়ে। এদিকে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ও ভাটি অঞ্চলের পানি নেমে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে ডায়রিয়া রোগ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই ডায়রিয়া চিকিৎসা নিতে এ হাসপাতালে রোগীর ভিড় দেখা দিয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে রোগীদেরকে ওষুধ সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়- হাসপাতালে ওষুধের স্টোরটি বর্তমানে প্রায় ওষুধশূন্য। কবে নাগাদ ওষুধ সরবরাহ করা হবে তা এখনো অনিশ্চিত। ওষুধ অধিদফতর কর্তৃক জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে ওষুধ সরবরাহ হবে এ সিদ্ধান্তহীনতার কারণে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৪ মাস যাবত ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। যে কারণে প্যারাসিটামল, কলেরা সেলাইনসহ জীবন রক্ষাকারি ওষুধ একেবারেই নেই।
বুধবার সরেজমিনে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায় রোগীদের ভোগান্তির নানা চিত্র।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক জানান, হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে কোনো ধরনের ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লেখা যাবে না। কারণ ওষুধ নেই। এজন্য ডাক্তাররা ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লিখে বাহির থেকে সরবরাহের পরামর্শ দিচ্ছেন।
আদকাপাড়া গ্রামের দুই মহিলা জানান, তিনি ডাক্তার দেখিয়েছেন কিন্তু তার যে সমস্যা সেই রোগের ওষুধ হাসপাতালে নেই।
পার্শ্ববর্তী নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর গ্রাম থেকে আসা এক গরীব রোগী জানান- এতদূর থেকে গাড়ি ভাড়া দিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। কিন্তু সরকারি ওষুধ না পেয়ে আমি হতাশ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এইচএম ইশতিয়াক মামুন বলেন, প্রতিদিন এই হাসপাতালে আউটডোর ও ইনডোরে ৬ থেকে ৭শ’ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু তিন মাস যাবত হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ নেই। এতে করে স্টক শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় রোগীদের সরকারি ওষুধ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি জানান, মাধবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওষুধ সঙ্কটের বিষয়টি নিরসনের জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিভাগীয় ডিরেক্টর ও সিভিল সার্জনকে অবগত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. এ.কে.এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে জুলাইর পর কোনো ওষুধ সরবরাহ করা হয়নি। এর কারণে মূলত ওষুধের এ সঙ্কটটি তৈরি হয়েছে। এটা শুধু হবিগঞ্জেই নয়, সারাদেশের একই অবস্থা। ওষুধ অধিদপ্তর কর্তৃক জেলা না উপজেলা পর্যায়ে ওষুধ সরবরাহ হবে নাকি সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা হবে এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা রয়েছে।