দেবপাড়ায় ব্যালট পেপার ছিনতাই টেবিল কাস্ট ও এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা
এসএম সুরুজ আলী ॥ দুয়েকটি বিচ্ছন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভাবে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ও মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মোহিত চৌধুরী (নৌকা) বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৪ হাজার ১২৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য প্রয়াত চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাসুম আহমদ জাবিদ আলীর পুত্র শাহরিয়াজ নাদির সুমন (চশমা) পেয়েছেন ৩ হাজার ৪০৬ ভোট। এছাড়া সাবেক চেয়ারম্যান হাজী আ. ক. ম ফখরুল ইসলাম কালাম (আনারস) পেয়েছেন ২ হাজার ৮শ’, স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জালাল আহমদ (ঘোড়া) ৬৭৮, স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা ফখরুল ইসলাম চৌধুরী (মোটর-সাইকেল) ৪২৪ ভোট পেয়েছেন।
অপরদিকে মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে এসএম জাবেদ (ঘোড়া) বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৫ হাজার ৮৮২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ মোজাহিদ বিন ইসলাম (নৌকা) পেয়েছেন ৩ হাজার ২৭৫ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী আদম খাঁ পেয়েছেন (মোটর সাইকেল) ৩ হাজার ২০৮ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউজ্জামান (আনারস) ১ হাজার ৩৩৬ ভোট। এ ইউনিয়নে মোট ২১ হাজার ২৬৭ ভোটের মধ্যে কাস্টিং হয়েছে ১৩ হাজার ৮৯১ ভোট। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ১৮০ ভোট। বৈধ ভোট হলো ১৩ হাজার ৭১১।
গতকাল সন্ধ্যায় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন দেবপাড়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ মনিরউজ্জামান ও নোয়াপাড়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান। নির্বাচনে সকাল ৯টা থেকে একটানা বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোগ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকালে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি থাকলেও দুপুরে কেন্দ্র অনেকটা ভোটারশূন্য হয়ে পড়ে। এরপর কেন্দ্রগুলোতে এক দু’জন করে ভোটার এসে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন। দুপুর ১২টায় নবীগঞ্জের উত্তর দেবপাড়া হাজী মনির আহমেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চশমা প্রতীকের এজেন্ট ফখরুল ইসলামকে একটি কক্ষে আটক করে প্রিজাটিং অফিসার আব্দুস সালামের সহযোগিতায় ব্যালটে সিল দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। বিকেল ৪টার দিকে দেবপাড়া (বাজার) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকরা প্রবেশ করে জোরপূর্বক ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল দেয়ার সময় চশমা প্রতিকের এজেন্ট হাসিনা পারভিন ৩৩টি ব্যালট পেপারসহ একটি মুড়ি বই আটক করেন। এ সময় কেন্দ্রে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে নবীগঞ্জ-বাহুবল সার্কেলের এএসপি পারভেজ আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশ কেন্দ্রে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। এ ছাড়াও আইনগাঁও দাখিল মাদ্রাসা ও ফরিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণার পর ব্যালট পেপার ছিনতাই, টেবিল কাস্ট ও এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ এনে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শাহরিয়াজ নাদির সুমন, আ.ক.ম ফখরুল ইসলাম কালাম ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট জালাল আহমদ।
দেবপাড়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ মনিরউজ্জামান জানান, ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ হয়েছে। সুষ্টু নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য প্রত্যেকটি কেন্দ্রে এসআই ও এএসআইর নেতৃত্বে ১০ জন পুলিশ, ১০ জন আনসার, ৪ জন করে মহিলা আনসার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৫টি মোবাইল কোর্ট, ১টি স্টাইকিং ফোর্স সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে। এছাড়াও বিজিবি ও র্যাবের নেতৃত্বে টহল ব্যবস্থা ছিল লক্ষনীয়। অপরদিকে নোয়াপাড়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ইউনিয়নের ১০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। প্রতি কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ, আনসার সদস্যসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও নির্বাচনে ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ৪ প্লাটুন বিজিবি ও পুলিশের ৬টি মোবাইল টিম সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করে।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই দেবপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাসুম আহমেদ জাবেদ (জাবিদ আলী) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অপর দিকে ১৮ জুলাই নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৭ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাছিম মোঃ আলমগীর মারা যান। এ কারণে ২টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়।