নুর উদ্দিন সুমন ॥ বাহুবল উপজেলার মিরপুর দক্ষিণাঞ্চলের ফদ্রখলা গ্রামের মাঝের দুই কিলোমিটার রাস্তা ভেঙ্গে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সংস্কারের অভাবে সামান্য বৃষ্টিপাতে বড় বড় গর্তে পানি জমে কাঁদায় একাকার হয়ে পড়ে সড়কটি। ফলে ওই সড়কে চলতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় পথচারীদের। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি খানাখন্দে ভরপুর। ফলে এ রাস্তায় চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে আহত হচ্ছেন যাতায়াতকারীরা। অভিযোগ গুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তাটি সংস্কারে কারো সুনজর নেই।
আলাপকালে স্থানীয়রা জানান, রাস্তাটি বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনের ফলে উপজেলার শেষ প্রান্তের মানুষজনকে শহরে আসতে হয় দীর্ঘ রাস্তা ঘুরে। কিছু অংশ পিচ ঢালা রাস্তা থাকলেও স্থানে স্থানে ভেঙ্গে খানাখন্দে ভরপুর। আর মাঝের দুই কিলোমিটার রাস্তা প্রায় চলাচলের একেবারেই অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তারা বিষয়টি নিয়ে এলজিইডি দফতরে একাধিকবার চেষ্টা করেও রাস্তা সংস্কারের কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি এলাকাবাসী। ফলে পার্শ্ববর্তী প্রায় ১০টি গ্রামের মানুষকে কষ্ট করেই চলাচল করতে হচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা সিলেট মহাসড়ক ঘেষে লস্করপুর রেল সংলগ্ন হয়ে কোটআন্দর অংশ দিয়ে হাট বাজার থেকে ফিরতে হয় ১০ গ্রামের মানুষকে। লস্করপুর রেলক্রসিং হতে কোটআন্দর পর্যন্ত রয়েছে ভাঙ্গাচোরা খানাখন্দে ভরপুর পিচ রাস্তা। সেখানে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এই গর্ত পেরিয়ে ভ্যান-রিকশা সিএনজি কষ্ট করে চলছে। কিন্তু বড় কোনো যানবাহন চলাচলের সুযোগ নেই।
ওই এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, রাস্তাটি বেশ কয়েক বছর আগে সংস্কার করা হয়েছিল। সেই সময় পিচ ঢালা রাস্তা তৈরি করা হয়। কিন্তু উভয় অংশে মাঝের প্রায় দুই কিলোমিটার ভেঙ্গেচুরে গেলেও কেউ মেরামত করেনি। ফলে ওই দুই কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তিনি আরও জানান, ওই স্থানটি এতটাই ভেঙ্গে চুরে গেছে যে সেখানে তৈরি হওয়া গর্ত পেরিয়ে চলাচল সম্ভব নয়। ছোট ছোট যানবাহনগুলো টেনে উঠাতে হয়। আর বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
সুহেল মিয়া নাকে একজন জানান, উপজেলার শেষ প্রান্তে অবস্থিত রাস্তাটি দেখার কেউ নেই। আমরা অবহেলিত। সড়কটির এমন অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সীমান্ত এলাকার কয়েক শতাধিক ব্যবসায়ী, শায়েস্তাগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, ইসলামী একাডেমির কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থীসহ বাজারে আসা হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে। দীর্ঘদিন ধরে এমন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এই রাস্তায় চলাচলকারীরা। স্থানীয় শিক্ষার্থী হাবিবা, মাশকুরা, তানিয়া, লিপি, শারমিন জাহানসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন- তাদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা এটি। যেটি বছরের পর বছর কাঁদা পানিতে ভরে থাকে। ফলে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
ব্যবসায়ী জাকির হোসেন, জিতু মিয়া, সিতু মিয়াসহ আরো অনেকে জানান, রাস্তার এমন পরিস্থিতিতে তাদের ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে। যানবাহন না চলায় তাদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন লিয়াকত জানান, আমার কাছে বরাদ্দ নেই। স্থানীয় এমপি শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজীর সাথে কথা বলে আগামী অর্থ বছরে বরাদ্দ আসলে রাস্তাটি সংস্কার করা হবে। এ ছাড়াও স্থানীয় কৃষকরা জানান, তাদের এলাকায় উৎপাদিত কৃষি পণ্যও সহজে বাজারজাত করতে পারছেন না মাত্র দুই কিলোমিটার রাস্তার জন্য। এ বিষয়ে তারা একাধিকবার বাহুবল এলজিইডি অফিসে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু রাস্তাটি সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
ওই সড়কে চলাচলকারী সিএনজি চালক শহীদ জানান, এ রাস্তায় তারা কষ্ট করেই চলাচল করছেন। ভাঙ্গাচোরা স্থানে এসে অনেক সময় যাত্রীদের নামিয়ে দিতে হয়। এরপর সিএনজিটি টেনে তুলে ভাঙ্গা স্থান পার হতে হয়। দূরত্ব কম হওয়ায় তারা কষ্ট করেই এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন।
এ বিষয়ে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জানান, এই রাস্তাটি সংস্কারের জন্য তারা কয়েক দফা উচ্চপর্যায়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনও বরাদ্দ পাননি। বরাদ্দ পেলেই দ্রুত রাস্তা মেরামতের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা হক বলেন, এলাকাবাসী দরখাস্ত করলে পরিষদে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।