ডা. মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব
আপনাকে আমি সবিনয়ে অপছন্দ করি। আপনি কি নিজেকে খুব জ্ঞানী এবং মর্যাদাবান মনে করেন? কতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছেন? কতজন ব্যক্তি আপনাকে মর্যাদাবান মনে করেন? পাহাড়ের চূড়ায় দাড়িয়ে নীচে তাকিয়ে দেখুন, সবকিছু আপনার নিকট ছোট মনে হবে। অনেক উচু থেকে লক্ষাধিক লোককেও হয়ত আপনার নিকট একটা পঙ্গপালের মতই মনে হবে।
এটা ঠিক, আপনি একজন ব্যক্তির চোখে সবাইকে ছোট মনে হতে পারে। একটু ঘুরিয়ে চিন্তা করুন, আপনার একা দুটি চোখ সবাইকে ছোট দেখছে এতে লক্ষাধিক লোকের কিছু যায় আসে না। কিন্তু নীচ থেকে যখন লক্ষধিক চোখ অতি উঁচুতে আপনাকে দেখে তখন ছোট্টই দেখে। তার মানে আপনার একার চোখে সবাইকে ছোট মনে হলেও সকলের চোখে আপনি ছোট। অর্থাৎ আপনি একা নিজেকে অতি উত্তম মনে করলেও বাকি সবার কাছে তার বিপরীতার্থক অর্থে আপনি অধম। তথা সকলের নিকট আপনি সার্বিক দিক থেকে নিকৃষ্টই বলা চলে।
আরে মশাই আপনি পেশায়, পদবীতে, প্রাচুর্যে যত বড়ই হোন না কেন তার চেয়ে অনেকেই পদ, পদবী, বিত্ত এবং বৈভবে আপনার চেয়ে অতি উত্তম আছেন। মাছিতো মশাকে একটা ক্ষুদ্র প্রাণী হিসেবেই মূল্যায়ন করে, অথচ সে নিজেই কতনা ক্ষুদ্র! অহংবোধ পরিহার করুন। একটা ছোট্ট ব্যাঙ তার আবাসস্থল কুয়াটাকেই জগৎ মনে করে। এর বাইরে চিন্তা করার ক্ষমতা আল্লাহ তাকে প্রদান করেননি। বংশমর্যাদায় নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করছেন? হযরত মুহম্মদ(সঃ) বিদায় হজ্জের ভষণে বংশগরিমাকে দেড় হাজার বছর পূর্বেই কবরস্থ করে গেছেন। আব্রাহাম লিংকনের পিতা জুতো সেলাই করতেন, অদ্যাবধি আমেরিকার ইতিহাসে একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি অতি মর্যাদাবান ব্যক্তি এবং এমনতর পিতার সন্তান হিসেবে তিনি সতত গর্ববোধ করতেন। নরেন্দ্র মোদীতো একজন চা বিক্রেতা ছিলেন মাত্র। ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এপিজে আবুল কালামের ইতিহাস জানেন?
বেশ ভূষায় পোষাক পরিচ্ছেদে আপনি কি একেবারে..খয়ের খাঁ বা লেফাফা দুরস্ত? চেহারায়, সৌন্দর্যে একেবারে উত্তম কুমার? লাভ কি, মাকাল ফলওতো খুব সুন্দর! কিন্তু ভিতরে ছাই। হিটলার, জোসেফ স্ট্যালিন এরাতো সুপুরুষই ছিলেন। অথচ আজ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে তাঁরা কতইনা ঘৃণিতভাবে নিপতিত। এখানে সৌন্দর্যের কোনই গুরুত্ব নেই। সেই অর্থে আপনিও মাকাল ফল।
অপর দিকে চিন্তা করুন, সক্রেটিস, বার্টান্ড রাসেল, হযরত বেলাল(রঃ) দেখতে কত কুশ্রী ছিলেন অথচ সার্বিক বিবেচনায় পৃথিবীর সুন্দরতম ব্যক্তি ছিলেন উনারাই! ইতিহাসের পাতায় উনারা সবাই স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল নক্ষত্র। উনাদের বিচ্ছুরিত আলোকচ্ছটায় সারা জাহান অদ্যাবধি আলোকময়।
আপনাকে সবাই সামনাসামনি খুব সমীহ করেন? জড়োসড়ো হয়ে পারেতো দুহাতে সালাম করেন? তাদের সাময়িক প্রশংসায় হয়ত আপনি পঞ্চমুখ! অহংবোধে বক্ষপরিধি হয়ত ইঞ্চি কয়েক বর্ধিত হয়। কিন্তু জানেন কি? পিছনে তাদের ভূমিকা কতটা বৈপরীত্যে ভরপুর। শুধু আপনি কেন, আপনার কয়েক প্রজন্মের উত্তরপুরুষের গুষ্টি উদ্ধার করতে কখনো উনারা সামান্যতম কার্পণ্য করেন না। আসলে হাজারো পদলেহী চাটুকার কর্তৃক পরিবেষ্টিত আপনি অদূরদর্শীতার বেড়াজাল পেরিয়ে সঠিক বিষয়টি অনুধাবন করতে অক্ষম। অহংকারের আচ্ছাদনে আপনার দূরদৃষ্টি এ মুহূর্তে ছানি আক্রান্ত। সময় অতিক্রান্ত হলে সংশোধনেরও তখন আর সময় থাকবেনা। বেশি পরিপক্ব ছানি পড়া রোগীদেরও এক সময় আর অপারেশন চলে না।
আরে, অহংকার সেতো আল্লাহর গায়ের চাঁদর। এ নিয়ে টানাটানির পরিণাম নিঃসন্দেহে নরকবাস। তা আপনার বিত্ত, বংশগরিমা, বেশভূষা বা তথাকথিত জ্ঞান এবং পদপদবীর কারণই হোকনা কেন। একজন অহংকারীর গৃহ ইসলামের দৃষ্টিতে নিকৃষ্ট আবাসস্থল। ইবলিশ চিরদিনের জন্য স্বর্গ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিল কেবল অহংকারের জন্যই। সর্বশ্রেষ্ঠ মনিষী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন সরিষা পরিমাণ অহংবোধ থাকলেও কেহ স্বর্গে প্রবেশ করতে পারবে না। আর অহংকার সেতো পতনের মূল। বহু দাম্ভিক স্বৈরশাসক মর্যাদার উচ্চ শিখরে আরোহন করে পুনরায় ত্বড়িৎ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিপতিত হয়েছেন এমন নজির ইতিহাসে ভুঁড়ি ভ্ুিড়।
তথাকথিত জ্ঞানী হলেও আপনি পরিত্যায্য। আপনাকে অনুকরণ কিংবা অনুসরণ করার কোন হেতু নেই। কবির সরল উক্তি, ‘নিজে যাকে বড় বলে বড় সে নয়, লোকে যাকে বড় বলে বড় সেই হয়।’
সুতরাং আপনাকে পরিহার করাই উত্তম।
অতএব আপনাকে আমি সবিনয়ে অপছন্দ করি ॥