এম,এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ থেকে ॥ ‘সড়ক নয় যেন একটি পুকুর। গাড়ি চলার উপায় নাই। বৃষ্টি হলে এই সড়কে পানি জমে। এখানে মাছ চাষ করা যাবে’ এমন ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিএনজি চালক হেলাল মিয়া।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত নবীগঞ্জের জনতার বাজার টু কাগাবলা আথানগিরি ভায়া মৌলভীবাজার সড়কের নবীগঞ্জ অংশের বেহাল দশা। নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর থেকে আথানগিরি পর্যন্ত রাস্তা বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে নদীতে পরিণত হয়। মনে হয় এটি কোন ছোট নদীর মতো। ফলে দুটি জেলার সংযোগ সড়কের জন্য কয়েক লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ হাজার হাজার মানুষকে। সড়কটি যেন এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, উক্ত সড়ক নির্মাণ কাজে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করায় সড়কের অনেক স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানচলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে প্রায়ই উক্ত সড়কে যানবাহন ও পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হন। সড়কের দুরাবস্থা যেন দেখার কেউ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ উপজেলা থেকে মৌলভীবাজার জেলা সদরে সাথে যোগাযোগের একমাত্র বাইপাস সড়ক হিসেবে ওই সড়কই এক সময় বেশি চলাচল করতো দুটি জেলার মানুষ। এমনকি মৌলভীবাজারের সীমান্ত এলাকা কাগাবলা, আথানগীরি ও নবীগঞ্জের শতক, তারালিয়া, লামরোহ, মাহমদপুর, গজনাইপুরসহ ১০/১৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের চলাচলের জন্য একমাত্র ভরসা এই সড়কটি। এর মধ্যে উল্লেখিত গ্রামগুলো থেকে প্রায় ৩/৪ হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন নবীগঞ্জের দিনারপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও দিনারপুর কলেজ, পানিউমদা রাগিব রাবিয়া স্কুল এন্ড কলেজ, দিনারপুর মাদ্রাসায় যাওয়া আসা করেন।
আব্দুর রশিদ নামে এক মুরুব্বি বলেন, বিগত ৩/৪ বছর যাবৎ সড়কের বেশীর ভাগ অংশে কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সাথে বিপাকে পড়েছেন স্কুল কলেজে পড়ূয়া ছাত্র-ছাত্রীরা। গর্তগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে যেন পুকুরে পরিণত হয়েছে। সড়কটি খানাখন্দের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া দ্রুতগামী যানবাহন একটি অপরটিকে ওভারট্যাক করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। এজন্য ওই সড়কে যান চলাচল আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।
দিনারপুর কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ফারিয়া জান্নাত মনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা শতক থেকে প্রায় ২/৩ কিঃমিঃ জায়গা পায়ে হেটে কলেজে যাই। আমাদের চলাচলের প্রধান এই সড়কের এমন অবস্থা হয়েছে, আগে যেখানে ২০ থেকে ৩০ মিনিটে কলেজে পৌঁছানো যেত, এখন সেখানে লেগে যায় ১ ঘন্টারও বেশি সময়। সড়কের দশা বেহাল হওয়ায় আগের মতো এখন গাড়ীও পাওয়া যায় না। তাই অপেক্ষা করে সময় নষ্ট না করে আমরা পায়ে হেটেই কলেজে যাচ্ছি। হেটে গিয়ে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে যাই। যার কারণে ক্লাসে তেমন মনযোগ থাকে না। বিশেষ করে চরম বিপাকে পড়তে হয় পরীক্ষার সময়। কারণ পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হওয়া অনেক কষ্টসাধ্য। তাই যতাযত প্রদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।’
স্কুলে যাতায়াতের প্রধান সমস্যা কি এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দিনারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘ভাই কি আর বলবো, স্কুলে যাওয়ার মূল সমস্যা এই সড়কটি। সড়কের অবস্থা এত খারাপ হওয়ায় প্রতিদিন স্কুলে যেতে মন চায় না। এর মধ্যে এখন প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ রাস্তায় অনেক বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তের মধ্যে ময়লা জমে থাকে আর এই ময়লা বৃষ্টির পানি পেলে ভাগাড় হয়ে যায়। ফলে ভাল জামা পড়ে গেলে ওই জামা আর ভাল থাকে না। রাস্তায় কাঁদায় নোংড়া হয়ে যায়। তাই সড়কটি সংস্কার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি।’
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মীর সাব্বির আহমদ বলেন, কয়েক বছর ধরে সড়কটির বেহাল দশা আমরা পরিলক্ষিত করলেও বরাদ্দ না পাওয়ায় সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বছর সড়কটি মেরামত করা সম্ভব হবে না। আমরা লিখিত ভাবে ঢাকায় জানিয়েছি, এখনও কোন উত্তর পাইনি। তবে গুরুত্বপূর্র্ণ সড়কটির জন্য মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। কিন্তু বরাদ্দের অভাবে সড়কটি সংস্কার করতে পারছি না।