স্টাফ রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল ধানমন্ডিস্থ দলীয় সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘শুধু ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নয়, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও নজরদারিতে আছেন। দুর্নীতিতে জড়িত কাউকে ছাড় দেবেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রশাসন বা রাজনীতির কেউ যদি অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসায় মদত দিয়ে থাকেন তাহলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো গডফাদারই ছাড় পাবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।’
সরষের মধ্যে ভূত! দুর্নীতির ক্ষেত্রে এমন ভয়াবহ তথ্যও পেয়েছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তবে তাদেরও রক্ষা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দুর্নীতিতে জড়িত আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এখন নজরদারিতে আছেন। দুর্নীতিবাজ কাউকে না ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বলে জানা গেছে। তবে গতকাল শুক্রবার গণভবনে কোনো নেতার সঙ্গে কথা বলেননি প্রধানমন্ত্রী। দুই তলা থেকে নেমে সোজা গাড়িতে উঠে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন।
অন্যদিকে গতকাল যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অনৈতিক কার্যকলাপ ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঢাকার ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে খালেদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে যুবলীগের আরো অনেককে। তাদের কেউ কেউ যুবদল বা স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে যুবলীগে অনুপ্রবেশ করেছে বলে তথ্য এসেছে।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠায় কেন্দ্রীয় যুবলীগ জরুরিভিত্তিতে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংগঠনের কেউ ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হলে তাকে বহিষ্কার করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির প্রভাবশালী নেতা খালেদকে ধরতে অভিযানে নামে র্যাব। বুধবার বিকাল থেকে গুলশান ২ নম্বরের ৫৯ নম্বর সড়কে খালেদের বাসা এবং ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে একযোগে অভিযান শুরু করেন র্যাব সদস্যরা।
শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনিতে বেড়ে ওঠা খালেদ ফকিরাপুলের ঐ ক্লাবের সভাপতি। কয়েক ঘণ্টার অভিযানে ঐ ক্লাবে মদ আর জুয়ার বিপুল আয়োজন পাওয়া যায়। সেখান থেকে ২৪ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়। আর গুলশানের বাসা থেকে খালেদকে গ্রেফতারের পর তার বাসায় ৫৮৫টি ইয়াবা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা এবং অবৈধ অস্ত্র পাওয়ার কথা জানায় র্যাব। বৃহস্পতিবার বিকালে তাকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। অস্ত্র, মাদক ও মুদ্রাপাচার আইনে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হয় ঐ থানায়। আর মতিঝিল থানায় মাদক আইনে করা হয় আরেকটি মামলা। রাতে খালেদকে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে দুই মামলায় সাত দিন করে রিমান্ড চাওয়া হলে অস্ত্র মামলার চার দিন এবং মাদক মামলায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন দুই বিচারক। গতকাল যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি ব্যবসা চালিয়ে আসা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, জি কে শামীম যুবলীগের কোনো পদেই নেই।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় চার নেতা সংসদ সদস্য পদে এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হন। তবে তাদেরকে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ নানা দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু অনেক দায়িত্ব পালনে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন। ছাত্রলীগের দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট ভাঙার দায়িত্বও তারা পেয়েছিলেন। কিন্তু ঐ সিন্ডিকেট ভেঙে নিজেরাই গড়ে তোলেন আরেক সিন্ডিকেট। যার পরিপ্রেক্ষিতে মেয়াদ পূর্তির ১০ মাস আগেই ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে সরিয়ে এখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দিয়ে চালানো হচ্ছে সংগঠনকে। তবে প্রধানমন্ত্রী শুধু ছাত্রলীগের শীর্ষ ঐ দুই নেতার ওপরই ক্ষুব্ধ নন, দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ঐ চার নেতার ওপরও অসন্তুষ্ট।
সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকার ৬০টি স্পটে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা, দখল-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-অস্ত্রবাজি-ক্যাডারবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত যুবলীগের এক শ্রেণির নেতাকর্মী। যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর নেতাদের অধিকাংশই কোনো না-কোনো সরকারি ভবনে তৎপর। শিক্ষা ভবন, সড়ক ভবন, মত্স্য ভবন, বিদ্যুত ভবন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, সর্বত্রই তাঁদের আনাগোনা। এসব ভবন থেকে সারাদেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন কাজ ও কেনাকাটা সরকারি সিদ্ধান্তে বাস্তবায়ন করা হয়।
এদিকে যুবলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো সংগঠনের নিজস্ব ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। এ জন্য কোনো নেতা বা কোনো শাখার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে চেয়ারম্যানের ঠিকানায় পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান। অভিযোগ পাঠানোর ঠিকানা : ২৫ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, আওয়ামী যুবলীগ, কেন্দ্রীয় কার্য্যালয়। অভিযোগের সঙ্গে যদি কোনো কাগজপত্র, দলিল বা তথ্যপ্রমাণ থাকে সেটাও চিঠির সঙ্গে হস্তান্তর করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদের মোবাইল নম্বরেও অভিযোগ জানানো যাবে। মোবাইল নম্বর ০১৭১২১৩৯০৮৮। সূত্র: ইত্তেফাক
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com