দখলদারদের অনেকেই এখনও আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন হয়তো শেষ পর্যন্ত এ উচ্ছেদ কার্যক্রম নাও চলতে পারে

এসএম সুরুজ আলী ॥ দ্বিতীয় দিনের মতো হবিগঞ্জ শহরের পুরাতন খোয়াই নদী অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। দুই দিনে শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার ২য় দিনে দুটি এক্সকেভেটর দিয়ে দক্ষিণ অনন্তপুর চার রাস্তা মোড় এলাকা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালে বেশ কয়েকটি বিশাল অট্টালিকা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। তবে দখলদারদের অনেকেই নিজেরাই নিজেদের স্থাপনা ভেঙ্গে সরিয়ে নিচ্ছেন। গতকাল জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ উচ্ছেদের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছেন। এ সময় জেলা প্রশাসকের কাছে কয়েকজন তাদের জায়গা পুনরায় মাপজোক করার অনুরোধ করেন। এ প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ সহকারি কমিশনার ভূমিকে পুনরায় তাদের জায়গা মাপজোক করার নির্দেশ দেন। এদিকে উচ্ছেদের ঘটনায় শহরবাসীর মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে। শহরের শত শত মানুষ ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে দিনভর এ উচ্ছেদ কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন।
অপরদিকে বিভিন্ন এলাকায় খোয়াই নদী অবৈধ দখল করে রাখা একাধিক ব্যক্তি অধির আগ্রহ নিয়ে এ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। তারা এখনও আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন হয়তো শেষ পর্যন্ত এ উচ্ছেদ কার্যক্রম নাও চলতে পারে। হয়তো তারা পার পেয়ে যেতে পারেন। অনেকে আবার বিভিন্ন স্থানে দৌঁড়ঝাপ করে নিজেদের স্থাপনা রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু কোন কূলকিনারা করতে না পেরে তাদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। অনেকে আবার আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন নিজেদের স্থাপনা রক্ষার। কিন্তু তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। অবশ্য এ বিষয়ে ইতিপূর্বে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ ঘোষণা দিয়েছেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। পুরোনো খোয়াই নদীর এক ইঞ্চি ভূমি অবৈধ দখলে থাকা পর্যন্ত অভিযান চলবে।
জানা যায়, হবিগঞ্জ শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া খোয়াই নদী এক সময় শহরবাসীর দুঃখের অন্যতম কারণ ছিল। নদীতে সামান্য পানি এলেই ভেসে যেতো পুরো শহর। ডুবে যেতো মানুষের বাড়িঘর। বড় বড় নৌকা চলতো এ নদী দিয়ে। শহরবাসীর এ দুঃখ লাঘবের উদ্দেশ্যে ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত দুই দফায় ৫ কিলোমিটার এলাকা নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। আর তখন থেকেই দফায় দফায় নদীটি দখল করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। কিন্তু নদীটি উদ্ধারের দাবিতে শহরবাসী বিভিন্ন সময় আন্দোলন করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কয়েকবার শুধু নদীর সীমানা নির্ধারণের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ ছিল। মাঝে মাঝে দুয়েকটি স্থাপনা উচ্ছেদ হয়েছে। কিন্তু সাথে সাথেই সেখানে আবার অন্যদল এসে দখল করে নিয়েছে। বিশাল স্থাপনা নির্মাণ করে কেউ বসবাস করছেন, কেউ ভাড়া গুনছেন, আবার কেউ তা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। অবশেষে জেলা প্রশাসন পুরাতন খোয়াই নদীটি উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী সোমবার থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়।