
হবিগঞ্জ শহরের রয়েছে অনেক গৌরবগাঁথা। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সমৃদ্ধ ইতিহাস। একশ’ বছর আগে কেমন ছিল হবিগঞ্জ শহর, খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গের সফলতা, অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্মকথা থাকছে মঈন উদ্দিন আহমেদ এর ‘হবিগঞ্জ শহরের একশ’ বছরের ইতিকথা’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদনে। কালের বিবর্তনে হবিগঞ্জ শহর সৃষ্টি করেছে অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য, থাকবে সেসব কথাও। অনেকটা সাক্ষাতকার ভিত্তিক এ প্রতিবেদনে কারো কোন সংযোজন-বিয়োজন, কিংবা পরামর্শ থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা আপনার তথ্য-উপাত্ত গুরুত্বের সাথে প্রকাশের চেষ্টা করব।
প্রথম দিকের বাসিন্দা মাত্র ৪ ব্যক্তি ‘শ্যামলী’ এলাকার নামকরণ করেন
শ্যামলী এলাকার চারপাশে ছিল ধানী জমি ॥ এখানে ফসল ফলানো হতো ॥ এলাকায় তেমন একটা ঘরবাড়ি ছিল না
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ ১৯৮৫ সাল থেকে হবিগঞ্জ শহরের শ্যামলী এলাকায় সাধুর মাজার সংলগ্ন বসবাস করে আসছেন জেলা সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সভাপতি আলহাজ¦ মর্তুজা ইমতিয়াজ। হবিগঞ্জ শহর সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, হবিগঞ্জ শহরের শ্যামলী এলাকা ছিল তেঘরিয়া ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত। তখনকার সময়ে শ্যামলী এলাকায় বাস করতেন হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক কে বি হায়দার, সফর আলীসহ ৩ জন। তিনি এখানে এসে বসবাস শুরু করলে ওই এলাকায় বসবাসকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ জনে। ওই সময় এই এলাকার নাম শ্যামলী ছিল না। তারা ৪ জন প্রথমে একত্রিত হয়ে ওই এলাকার নামকরণ করেন ‘শ্যামলী’। এই নামকরণ করতে গিয়ে তাদের অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এই এলাকার নামকরণ শ্যামলী করার পর সাইনবোর্ড টানিয়ে দেই। কিন্তু আশ্চর্য্যজনক কে বা কারা আমাদের সাইনবোর্ড খুলে নিয়ে যায়। শ্যামলীতে কোন রাস্তাঘাট ছিল না। চারপাশে ছিল ধানী জমি। এখানে ফসল ফলানো হতো। হরিপুর, গোসাইপুর পর্যন্ত যে দিকেই তাকানো হতো ফাঁকা দেখা যেতো। ওই এলাকায় তেমন একটা ঘরবাড়ি ছিল না। শ্যামলী এলাকায় মরা খোয়াই নদীর উপর কোন কালভার্ট ছিল না। বাঁশের সাকো দিয়ে ওই এলাকায় বসবাসকারীদের পারপার হতে হতো। পরে ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দে বড় আকারের ঢালাই পাইপ বসিয়ে তাতে মাটি ফেলে রাস্তা তৈরী করা হয়। শ্যামলী এলাকা পৌরসভার অন্তর্ভূক্ত হবার পর আস্তে আস্তে এর উন্নয়ন শুরু হয়। কালের আবর্তে শ্যামলী এলাকা এখন জনবসতিপূর্ণ।
হবিগঞ্জের পুরাতন খোয়াই নদী সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, শহরের শ্যামলী এলাকা দিয়ে পুরাতন খোয়াই নদী প্রবাহিত। আগে এই নদীটি অনেক বড় ছিল। নদীর দু’পাশ উন্মুক্ত ছিল। নদীর পাড় দিয়ে হাঁটাচলা করলে বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া যেতো। দম ভরে নিঃশ^াস নেয়া যেতো। কিন্তু সেই পরিবেশ আর নেই। অবৈধ দখল আর দুষণে পুরনো খোয়াই নদীর অস্থিত্ব এখন খুঁজে পাওয়াই কঠিন। নদীটি এখন অনেক সংকুচিত হয়ে গেছে। এর নাব্যতা কমে শুয়ারেজ ড্রেনে পরিণত হয়েছে। অনেক স্থান এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে দেখে বুঝার উপায় নেই এখানে এক সময় খোয়াই নদী ছিল। এখনো নদীর বেশ কিছু অংশ রয়েছে যা ময়লার ভাগাড় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মর্তুজা ইমতিয়াজ নদীটি উদ্ধারের দাবি জানান, পাশাপাশি নদীটির পরিচর্যারও দাবি জানান তিনি।