![](https://dailyhabiganjermukh.com/wp-content/uploads/2025/02/Untitled-4.jpg)
যারা অবৈধভাবে পশুরহাট বসিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ॥ জেলা প্রশাসক
নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে ফের অবৈধভাবে পশুর হাট বসিয়েছে নবীগঞ্জ জনতার বাজার পরিচালনা কমিটি। অবৈধভাবে টাকার বিনিময়ে প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়েছে ক্রেতাদের। পশুরহাটের কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সৃষ্টি হয় যানজটের। এ ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সারাদিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘেঁষা নবীগঞ্জ উপজেলার জনতার বাজারে গরু-ছাগল বেচা কেনা হয়।
জানা যায়- গত তিন সপ্তাহ পূর্বে জনতার বাজার অপসারণে জেলা প্রশাসনের নিদের্শনার কথা উল্লেখ করে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির সাইনবোর্ড টানানো হয়। টানানো সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- কোনো ব্যক্তি সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো হাট পরিচালনা করলে বা অবৈধভাবে হাট পরিচালনায় সহযোগীতা করলে অথবা মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে হাট-বাজার আইন ২০২৩ ও মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুসারে দন্ডনীয় অপরাধ হবে। আইন অমান্যকারীকে সংশ্লিষ্ট আইন মোতাবেক কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড প্রদান করা হবে। গত ২৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে জনতার বাজার পশুরহাট অপসারণে প্রশাসন কর্তৃক টানানো সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির সাইনবোর্ড ছিঁড়ে ফেলে কে বা কারা। মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় ইজারা দিতে না পারা জনতার বাজারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আদায় করা হতো হাসিল। রশিদের মাধ্যমে ওঠা টাকা জমা হতো সরকারি কোষাগারে। সিলেটের বৃহত্তম পশুর হাট নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুরের জনতার বাজারে প্রতি বছর কোটি টাকার গরু-ছাগল বিক্রি হয়। তবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রশিদ ছাড়াও হাসিল আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গত ৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জনতার বাজার অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়- অবৈধভাবে স্থাপিত জনতার বাজার পশুর হাট জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে অপসারণ করার জন্য এবং উক্ত স্থানে পুনরায় বাজার স্থাপন করা হলে মহাসড়ক আইন, ২০২১ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড টানানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়। এরপর অবৈধ জনতার বাজার পশুরহাট অপসারণ করতে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির সাইনবোর্ড টানানো হয়।
শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়- জনতার বাজার পশুরহাটে প্রায় ৪-৫ হাজার গরু ছাগল নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। পশুরহাটকে কেন্দ্র করে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে বাজারে আসেন ক্রেতারা। বাজারের একটি অংশে জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে টাকার বিনিময়ে গরু-ছাগল সনাক্তের প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয় ক্রেতা-বিক্রেতাকে। প্রতিটি গরু-ছাগল বিক্রির প্রত্যয়নপত্রের জন্য পরিচালনা কমিটিকে ৫শ’ টাকা করে দিয়ে হয়েছে ক্রেতাদেরকে। বাজার অপসারণে প্রশাসনের নিদের্শনা অমান্য করে অবৈধভাবে টাকার বিনিময়ে গরু-ছাগল বিক্রির প্রত্যয়নপত্র দেয়ার খবরে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বাজার পরিচালনা কমিটির এহেন কর্মকান্ডে তাদের খুঁটির জোর নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতার সাথে আলাপকালে জানা যায়- শনিবার বাজারে প্রায় ২ শতাধিক গরু-ছাগল ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। পশুরহাটের কারণে গরু নিয়ে আসা গাড়ির ও মানুষের ভিড়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
মাধবপুর থেকে বাজারে আসা ফিরোজ মিয়া বলেন- আমি বাহুবল উপজেলার গরু বিক্রতা বাবলু মিয়ার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে ২টি গরু ক্রয় করেছি। জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে ২টি গরুর জন্য হাসিল বাবদ ১ হাজার টাকা নিয়ে একটি প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়।
মুল্লারবন এলাকার দলা মিয়া বলেন- ৮২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে একটি কালা ক্রস গরু ক্রয় করেছি। প্রত্যয়নপত্রের জন্য বাজার কমিটিকে ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে।
পশুরহাটে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা রহিম মিয়া বলেন- ৫০ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে একটি ন্যাড়া লাল ডেকী বাছুর ক্রয় করেছি। বাজার কমিটির লোকজন ১টি গরুর জন্য হাসিল বাবদ ৫০০ টাকা নিয়ে একটি প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোঃ ফরিদুর রহমান বলেন- অবৈধভাবে স্থাপিত জনতার বাজার পশুরহাট অপসারণে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। ৩১ জানুয়ারির পর থেকে আমাদের কোনো লোক বাজার থেকে হাসিল আদায় করে না। তিনি বলেন- অবৈধভাবে যারা পশুরহাট বসিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।