সিলেটে রাজু হত্যার এক বছরেও উদ্ধার হয়নি অস্ত্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিলেটের ‘গ্রুপ ছাড়ার অপরাধে’ ফয়জুল হক রাজুকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রকিব চৌধুরী ও তার সহযোগী হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটির আইন ও বিচার বিভাগের ছাত্র মোঃ সিহাব উদ্দিন। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের নির্দেশদাতা ও প্রধান আসামী আব্দুর রকিব চৌধুরী ও সহযোগী হিসেবে ছাত্রদল নেতা সিহাবসহ ৭ আসামী এখনও পলাতক রয়েছে। এক বছর আগে প্রকাশ্যে রাস্তায় রাজুকে কুপিয়ে ও গুলি করে খুন করা হলেও পুলিশ কোন অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি। এই হামলায় জাকির হোসেন উজ্জল ও লিটন নামে আর দুজন গুরুতর আহত হয়। আগামী ২৯ আগস্ট এই মামলার পরবর্তী ধার্য্য তারিখে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে আদালত পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করলেও সাফল্য নেই তাতে। সব মিলিয়ে ২৬ আসামির মধ্যে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনারসহ ১০ আসামী কারাগারে রয়েছে। গত ১৮ জুলাই দিনারসহ ছয় আসামী আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠায়। চলতি বছরের শুরুতে এই মামলার ১০ আসামী জালিয়াতির মাধ্যমে উচ্চ আদালত থেকে জামিন এনেছিল। প্রধান আসামী রকিব তার সহযোগী সিহাবসহ অন্যান্য আসামী গ্রেফতার না হলে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নিহতের চাচা ও মামলার বাদী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দবির আলী। তিনি জানান, অভিযোগপত্র নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। এখন আমরা চাই দ্রুত বিচার হোক। অপরাধীরা যেন সর্বোচ্চ সাজা পায়। এ জন্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতার করা প্রয়োজন। রাজুকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন- ‘পুলিশের তদন্তে তা প্রমাণিত হয়েছে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা স্থানান্তরের দাবি জানাই আমি। এই মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী মনির উদ্দিন জানান, পুলিশ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়ার পর আদালত তা আমলে নিয়ে পলাতকদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছেন। এখন পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করবে। কোনো কারণে আসামি গ্রেফতার না হলে আদালত পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও মালপত্র ক্রোকের বিষয় আছে। তিনি বলেন- আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হলে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।
গত বছরের ১১ আগস্ট সিলেট সিটি করপোরেশনের দুটি স্থগিত কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হন। সেদিন রাতে নগরীর কুমারপাড়ার আরিফের বাসায় বিজয় উৎসব থেকে ফেরার পথে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক রাজু ও উজ্জলের ওপর হামলা হয়। মেয়র আরিফের বাসা থেকে কয়েকশ গজ দূরে হত্যাকান্ডের পর রাজুর চাচা দবির আলী ছাত্রদলের ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১৫/২০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এতে মেয়র আরিফসহ ৫০ জনকে সাক্ষী করা হয়। চলতি বছরের ১২ মে কোতোয়ালী থানার এসআই অনুপ কুমার চৌধুরী মামলার এজাহার ভুক্ত ২২ জনের সঙ্গে আরোও চারজনকে যুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। এই ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ফাহিম আহমেদ তোহা ও সাদ্দাম হোসেন আদালতে জবানবন্দি দেয়। এদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকান্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে রকিবের নাম আসে। আর রকিবের সহযোগী হিসেবে ছাত্রদল নেতা সিহাবের নাম আসে। এছাড়া হামলায় গুরুতর আহত জাকির হোসেন উজ্জ্বল ও অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আদালতে ঘটনার বর্ণনা দেন। জেলা যুবলীগ নেতা দবির আলী জানান, সিলেট শহরে আসার পর তার ভাতিজা রাজু ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এই সময় রাজু নগরীর উপশহর কেন্দ্রিক ছাত্রদলের আব্দুর রকিব চৌধুরী গ্রুপে সক্রিয় হয়ে ওঠে সে। এরপর আস্তে আস্তে তিনি লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়ে রকিবের কাছ থেকে দূরে সরে আসেন বলে দাবির করেন দবির আলী। এদিকে সিটি নির্বাচনে রাজু মেয়র প্রার্থী আরিফের পক্ষে সক্রিয় হয়ে উঠেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাবেক ছাত্রদল নেতা রকিব নিজে উপস্থিত হয়ে তার সহযোগী ক্যাডারদের দিয়ে রাজুকে পরিকল্পিতভাবে খুন করিয়েছে বলে জানান দবির আলী। পড়াশোনার জন্য চাচার বাসায় বসবাস করা নিহত রাজু মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার শাহারপুর গ্রামের ফজর আলীর ছেলে।