মোঃ মামুন চৌধুরী ॥ ঈদ শব্দের অর্থ আনন্দ বা উদযাপন। আর মোবারক শব্দের অর্থ কল্যাণময়। সুতরাং ঈদ মোবারক অর্থ হলো ঈদ বা আনন্দ উদযাপন কল্যাণময় হোক। ধনী-গরিব সব বৈষম্য ভুলে সবাই এই দিনটির আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে চায়। যার যতটুকু সাধ্য সেই সাধ্যের আওতার মধ্যে চেষ্টা করে এই দিনটিকে খুশি ও আনন্দে ভরিয়ে দিত পরিবার, বন্ধু স্বজনদের মাঝে। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিকের মাঝে ‘ঈদের খাদ্য সামগ্রী’ বিতরণ করেছে প্রাণ গ্রুপ।
সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুরে অবস্থিত প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো ১৫ পার্ক রয়েছে। প্রাণ গ্রুপের পক্ষ থেকে এসব পার্কে কর্মরত প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিককে এবারের ঈদে লাচ্ছা সেমাই, নুডলস, দুধ, প্রাণ কালার্সসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী উপহার দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও এ উপহার পেয়েছেন। তাই কর্মরতদের ঈদের খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে না। এজন্য প্রাণ গ্রুপের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কর্মরতরা।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কর্মরত সুজন মিয়া বলেন- প্রাণ গ্রুপের পক্ষ থেকে ঈদে খাদ্য সামগ্রী উপহার পেলাম। তাই ঈদে দিনের খাবার নিয়ে আর ভাবতে হচ্ছে না। সুজনের ন্যায় হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কর্মরত প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক ঈদের খাদ্য সামগ্রী উপহার পান। একইভাবে বাকী ১৫টি পার্কের শ্রমিকসহ কর্মকতাও ঈদের খাদ্য সামগ্রী উপহার পেয়েছেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জেনারেল ম্যানেজার হাসান মোঃ মঞ্জুরুল হক ও জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ এহসানুল হাবিব জয়। প্রাণ গ্রুপের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সচেতন লোকেরা।
প্রাণ কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৯ হাজার লোকের কর্মসংস্থান করেছে প্রাণ গ্রুপ এর ‘হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’। ১৪ হাজার লোক স্থানীয়। বাকীরা আশপাশের। আরও কিছু কর্মকর্তা অন্যত্রের।
বর্তমানে এ পার্কে’র কারখানাতে প্রায় ৩৭টি প্রোডাকশন লাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের মানসম্মত পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রথমে পরিবেশের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। পণ্যের বর্জ্য সাথে সাথে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এ বর্জ্য দিয়ে উন্নতমানের জৈব সার তৈরি করা হচ্ছে। পণ্য উৎপাদন কাজে বর্জ্যের পানি যাচ্ছে ইটিপিতে। সেখানে এ পানি পরিশোধন করা হচ্ছে। তারপর এ পানি নিজস্ব পুকুরে যাচ্ছে। পানি পরীক্ষার জন্য এ পুকুরে মাছ চাষ করা হয়। এ মাছ কোম্পানীর কর্মরতদের খাবারেও ব্যবহার হচ্ছে। আরও ৮ থেকে ১০টি প্রোডাকশন লাইন কারখানায় যুক্ত করতে কাজ চলমান। এসব চালু হলে অতিরিক্ত আরও প্রায় ৫ থেকে ৭ হাজার বেকার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এমনভাবে এই কারখানার কর্মীসংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ হাজারে হাজারে গিয়ে দাঁড়াবে। পরিদর্শনকালে এ তথ্য জানা গেছে।
হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জেনারেল ম্যানেজার হাসান মোঃ মঞ্জুরুল হক ও জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ এহসানুল হাবিব জয় জানান, অলিপুরে ২০১৪ সালে কারখানাটিতে উৎপাদন শুরু হয়। এরপর থেকে একে একে নতুন নতুন প্রোডাকশন লাইন যুক্ত হচ্ছে। এতে করে কারখানার কর্মীসংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারখানায় কর্মরত লোকবলের ৯০ ভাগই স্থানীয়। এছাড়া কর্মীদের মধ্যে ৫৫ ভাগ নারী কর্মী কাজ করছে। কারখানাটি স্থাপনের ফলে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এ ঈদে শ্রমিকদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
তারা জানান, কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এ পার্ক শায়েস্তাগঞ্জ এলাকায় উন্নত শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ এবং সামাজিক অবস্থাকে এগিয়ে নিতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে কোম্পানিটি। নিজস্ব জমিতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ একটি স্কুল স্থাপন করা হয়েছে। স্কুলে শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এছাড়া বেশ কিছু স্কুলে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ক্লিনিক চালু আছে। এই এলাকার লোকজনের যাতায়াতের সুবিধার জন্য বেশকিছু রাস্তাঘাট নির্মাণ করে সড়কবাতি স্থাপন করা হয়েছে। একাধিক মসজিদ নির্মাণে কোম্পানী অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণ করার। শুধু তাই নয়, পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকছে বলে তারা জানান।
উল্লেখ্য, দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ হবিগঞ্জের অলিপুরে বিশাল এলাকা জুড়ে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপন করে ক্যান্ডি, লিকুইড গ্লুকোজ, বিস্কুট, ফ্রুট ড্রিংক, বেভারেজ, কনফেকশনারি, ইলেকট্রিক ক্যাবলস, ফ্যান, মেলামাইন, বাইসাইকেল, পিভিসি, মল্ডেড প্লাস্টিক, এমএস ও জিআই পাইপ, টেক্সটাইল, টয়লেট্রিজ ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত করছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ১৯৮১ সালে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির লক্ষাধিক কর্মী রয়েছে। বিশ্বের ১৪৬টি দেশে সুনামের সাথে পণ্য রপ্তানি করছে প্রতিষ্ঠানটি।