হবিগঞ্জ শহরের রয়েছে অনেক গৌরবগাঁথা। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সমৃদ্ধ ইতিহাস। একশ’ বছর আগে কেমন ছিল হবিগঞ্জ শহর, খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গের সফলতা, অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্মকথা থাকছে মঈন উদ্দিন আহমেদ এর ‘হবিগঞ্জ শহরের একশ’ বছরের ইতিকথা’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদনে। কালের বিবর্তনে হবিগঞ্জ শহর সৃষ্টি করেছে অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য, থাকবে সেসব কথাও। অনেকটা সাক্ষাতকার ভিত্তিক এ প্রতিবেদনে কারো কোন সংযোজন-বিয়োজন, কিংবা পরামর্শ থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা আপনার তথ্য-উপাত্ত গুরুত্বের সাথে প্রকাশের চেষ্টা করব।

হবিগঞ্জ শহরের বাসাবাড়ি থেকে কাঁচা টয়লেটের ময়লা মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য এখন দুঃসহ স্মৃতি

মিউনিসিপ্যাল পাবলিক লাইব্রেরিটি ছিল দেখার মতো

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকার এ প্রতিবেদকের কাছে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রবীণ সাংবাদিক অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল জানান, হবিগঞ্জ শহরের জালাল স্টেডিয়ামে হবিগঞ্জ একাদশ বনাম প্লেন্টার্স একাদশ (চা বাগানের বিদেশি ম্যানেজারদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত খেলা) এর খেলা সবাই উপভোগ করতেন। ৭০ থেকে ৮০ এর দশকে এসে ক্রিকেট খেলার চর্চা শুরু হয়। হবিগঞ্জের সাথে বাহিরের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বেশ বেগ পেতে হতো। তখনকার সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিশেষ ভূমিকা রাখতো টিএন্ডটি। হবিগঞ্জ হতে সিলেট বা কুমিল্লা হয়ে ঢাকায় সংবাদ প্রেরণ করতে হতো। এতে অনেক সময় লেখায় বেশ কিছু পরিবর্তন হয়ে যেতো। আর টেলিফোন লাইন পাওয়া ছিল ভাগ্যের ব্যাপার। জরুরী না হলে ডাক বিভাগের মাধ্যমেই সংবাদকর্মীদের ঢাকায় সংবাদ প্রেরণ করতে হতো। তখনকার সময়ে ছবি ছিল সাদা-কালো। সংবাদ সংশ্লিষ্ট ছবি প্রিন্ট করে নিউজের সাথে দিতে হতো। পরে রঙ্গিন ছবির ব্যবহার শুরু হলে সেখানেও ছিল বিপত্তি। কারণ ছবি প্রিন্ট করতে হতো মৌলভীবাজার থেকে।
দুঃসহ দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল বলেন, হবিগঞ্জ পৌরসভার ময়লা ফেলতে মহিষ টানা গাড়ি ব্যবহার করা হতো। শেষ রাতে অর্থাৎ ভোর রাতে শহরের বাসা-বাড়ি থেকে টয়লেটের ময়লা সুইপাররা (পরিচ্ছন্ন কর্মী) সংগ্রহ করে রাস্তার পাশে রাখা বড় ড্রামে এনে জমা করতো। পরে তা মহিষ টানা গাড়িতে করে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে পরিস্কার করা হতো। তখন প্রচুর দুর্গন্ধ ছড়াতো। লোকজন নাকে রুমাল চাপা দিয়ে চলাচল করতেন। ওই সময়ে আধা ঘন্টা এমনকি প্রায় এক ঘন্টা পর্যন্ত রাস্তায় লোক চলাচল কমে যেতো। তখনকার সময়ে শহরে কাঁচা টয়লেটই ছিল বেশি।
তখনকার সময়ে হবিগঞ্জ মিউনিসিপ্যাল পাবলিক লাইব্রেরি ছিল দেখার মতো। ৭০/৮০ দশকে মিউনিসিপ্যাল পাবলিক লাইব্রেরি ছিল হবিগঞ্জ শহরের দেখানোর মতো একটি মনোরম জায়গা। এটি ছিল টাউন হল রোডে (বর্তমান মধুবন রেস্তোঁরা ও হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র কার্যালয়)। এর সেক্রেটারি ছিলেন বদিউজ্জামান খান (খোকা মিয়া)। এই লাইব্রেরিতে অনেক দুঃস্পাপ্য বই ছিল। অনেক বিদেশি বই ও ম্যাগাজিন পাওয়া যেতো এ লাইব্রেরিতে। যা ঢাকার অনেক প্রতিষ্ঠিত লাইব্রেরিতেও পাওয়া যেতো না। ফলে সব সময় লাইব্রেরিটি পাঠকে ভরপুর থাকতো। কিন্তু হঠাৎই অজ্ঞাত কারণে এটি অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। ফলে লাইব্রেরিটি এখন তার অতীত ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।