দু’দিনে ১০ ঘন্টা সংঘর্ষে ৪ শতাধিক লোক আহত ॥ সংঘর্ষ চলাকালে ঘন্টার পর ঘন্টা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল

বাহুবল প্রতিনিধি ॥ বাহুবল উপজেলার মিরপুর বাজার দু’দিনে প্রায় ১০ ঘন্টা রণক্ষেত্র ছিল। দুই ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের লোকজনের মাঝে দু’দিনে ১০ ঘন্টা স্থায়ী সংঘর্ষের ঘটনায় চার শতাধিক লোক আহত হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় দুই শিশুর ঝগড়া-ঝাটিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়ে তা চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। প্রায় ১০ ঘন্টা বিরতি দিয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় পুনরায় শুরু হওয়া সংঘর্ষ চলে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। দু’দিনে ১০ ঘন্টা স্থায়ী সংঘর্ষে উভয় পক্ষে অন্ততঃ চার শতাধিক লোক আহত হয়। আহতদের বাহুবল, হবিগঞ্জ ও সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সন্ধ্যার পর বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের বানিয়াগাঁও গ্রামের এক শিশুর সাথে পার্শ্ববর্তী লামাতাসী ইউনিয়নের লামাতাসী গ্রামের অপর এক শিশুর ঝগড়া ও মারামারি হয়। এ ঘটনার জের ধরে সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বানিয়াগাঁও ও তাদের আশপাশের কয়েকটি গ্রাম এবং লামাতাসী ও তাদের আশপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজন দু’টি দলে বিভক্ত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষটি মিরপুর বাজার থেকে শুরু হয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মিরপুর চৌমুহনী পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। রাত ১২টা পর্যন্ত চলতে থাকা এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষে দেড় শতাধিক লোক আহত হয়। আহতদের রাতেই বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক কয়েকঘন্টা অবরুদ্ধ থাকে। ফলে রাস্তার উভয় পার্শ্বে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় একই ঘটনার জের ধরে একই স্থানে উভয় পক্ষ পুনরায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টায় বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আসে। এ দিন আরো অন্ততঃ ২ শতাধিক লোক আহত হয়েছে। আহতদের বাহুবল ও হবিগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরুদ্ধ থাকে। ফলে রাস্তার উভয় পার্শ্বে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এতে দূরপাল্লার যাত্রীরা মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মিরপুর বাজারে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসলেও মঙ্গলবার আবারো সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে উভয়পক্ষের লোকজন। মঙ্গলবার সকালে শালিসগণ গণি জাহান কমপ্লেক্সে বসে। এক পর্যায়ে মিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামীমকে নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লামাতাসি গ্রামের লোকজনের কাছে গেলে তারা চেয়ারম্যানের উপর হামলা করা হয়। এ খবর ৮ গ্রামের লোকজনের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে আবারো সংঘর্ষ শুরু হয়। বৃষ্টির মত চলে উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ। এ সংঘর্ষ চলে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। ৪ ঘন্টা ব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে আবারো মিরপুর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের খবর পেয়ে চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ লিয়াকত হাসান, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি ও জামায়াতসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ লাল পতাকা উড়িয়ে সংঘর্ষকারীদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। সংঘর্ষ শেষ হলে বিকেল ৪টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
সংঘর্ষের সূত্রপাত নিয়ে স্থানীয় লোকজন কয়েকরকম তথ্য দেন। অপর একটি সূত্র জানায়, টাকা পাওনাকে কেন্দ্র করে মিরপুর বাজারে দুই দফায় দুই পরগনার লোকজনের মধ্যে ভয়াবহ সংঘষের্র ঘটনা ঘটে। ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় সাংবাদিক, পুলিশসহ ৫ শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। এ সময় বশির প্লাজার সামনে থাকা একটি মোটরসাইকেলও পুড়িয়ে দেয় সংঘর্ষকারীরা। সূত্রটি জানায়, সোমবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মিরপুর বাজারে টাকা পাওনাকে কেন্দ্র করে একই উপজেলার লামাতাসি গ্রামের টেইলার আলফু মিয়ার সাথে বানিয়াগাঁও গ্রামের আকল আলীর ছেলে আল আমিনের কথা কাটা-কাটি হয়। বিষয়টি সমাধান করার জন্য বানিয়াগাঁও গ্রামের আঃ শহিদ মিয়ার ছেলে সাদ্দাম মিয়া চেষ্টা করলে তার উপর অতর্কিত হামলা চালায় আলফু মিয়ার লোকজন। বিষয়টি উভয় পক্ষের গ্রামের লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে মিরপুর বাজারে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে লামাতাশি ও বানিয়াগাঁও গ্রামের লোকজন দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র ও ইট পাটকেল নিয়ে মিরপুর বাজারে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষ বাড়তে থাকলে সংঘর্ষটি রূপ নেয় পরগনায়। উভয় পক্ষের লোকজন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামের পক্ষে বেশ কয়েকটি গ্রামের লোকজন সংষর্ষে লিপ্ত হয়। দুই পরগনার লোকজনের মধ্যে চলে ইট পাটকেল নিক্ষেপ, টানা রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে এ সংঘর্ষ। এক পর্যায়ে বশির প্লাজার সামনে থাকা পূবালী ব্যাংকের কর্মকর্তা উস্তার মিয়ার একটি মোটরসাইকেল ও কিছু চেয়ার জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এসময় বিভিন্ন দোকানে হামলা ও ভাংচুর করা হয়। পরদিন এ ঘটনার জের ধরে পুনরায় সংঘর্ষ হয়।