খোয়াই নদীর ভাঙ্গা বাঁধে জনসাধারণের পারাপারে বোর্ড উদ্বোধনকালে জি কে গউছ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) ও টানা ৩ বারের নির্বাচিত হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ বলেছেন- আমরা মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করি। মানুষের জন্যই কথা বলি। আমি জি কে গউছ ব্যক্তিগতভাবে অনেক কষ্টের শিকার হয়েছি। ১৫১৭ দিন শেখ হাসিনার মিথ্যা মামলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে মানবেতর জীবন-যাপন করেছি। ১/১১ ছিল বাংলাদেশের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই ১/১১ এর সুবিধাভোগীরা অন্যকে প্ররোচনা দিয়ে আমাদেরকে ছোট করার চেষ্টা করেছেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায়, আমি সিলেট কারাগারে বন্দি। ফেয়ার ভোট হয়েছে, হবিগঞ্জের মানুষ ধানের শীষ প্রতীকে নৌকার চেয়ে সাড়ে ৩ হাজার ভোট বেশি দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করে একটি নতুন জীবনের সুচনা করে দিয়েছেন। তিনি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার জালালাবাদ এলাকায় খোয়াই নদীর ভাঙ্গা বাঁধে জনসাধারণের চলাচলের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে দেয়া একটি বোর্ড উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন।
জি কে গউছ বলেন- খোয়াই নদীর বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ায় এই অঞ্চলের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী সহ স্থানীয় জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেছিলাম। ভেবেছিলাম, মানুষ মানুষের জন্য এই কথাটি তাদের হৃদয় স্পর্শ করবে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাই মানুষের কষ্ট লাগব করতে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি বোর্ড দেয়া হয়েছে জনসাধারণকে পারাপারের জন্য। এই বোর্ড দিয়ে নদী পারাপারে কাউকে কোনো টাকা দিতে হবে না। যতদিন পর্যন্ত বাঁধ মেরামত না হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন- বাঁধ সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে কথা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জি কে গউছ তার জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে বলেন- আমি কাজে বিশ্বাস করি। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটে যাচ্ছি, মানুষের জন্য কাজ করছি। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন, আমরা একটি টাকার জন্য কারো কাছে হাত পেতেছি, চাঁদা দাবী করছি, তাহলে নিজের জিব্বা কেটে ফেলবো। আমাদের নিয়ে যারা সমালোচনা করেন, বুঝে-শুনে করুন, মানুষ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। আমরা কারাগারে ফাঁসির সেলে থেকেছি, আমাদের জন্য কি আপনাদের একটু দরদ হয় না। ভোট তো মানুষ দিবে, খেয়াল রাখবেন, কোনো দল বা কোনো গোষ্টিকে নির্বাচিত করার জন্য কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ, বাংলাদেশের জনগণ দিবে না।
তিনি বলেন- ছাত্র-জনতার মধ্যে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মানুষের বৈষম্য দুর করার জন্য যে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কোনো ব্যক্তিকে নেতা বানানোর জন্য এই কাজটি হয়নি। সময় আসবে, মানুষ আবারও লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে, তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবে। আমরা ভালো কাজে প্রতিযোগীতা করি, সকলে মিলে দেশ গঠনে কাজ করি। তাহলেই শহীদের রক্তের প্রতি আমাদের সম্মান জানানো হবে।
জি কে গউছ বলেন- যারা ফেসবুকে লিখেন, সত্য লিখুন, মিথ্যা বর্জন করুন। যারা টিনসেটের বাসা থেকে অট্টালিকার মালিক হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে তো আপনারা লিখেন না। আপনাদের লিখনীতে মানুষ জানতে চায় তাদের টাকার উৎস কি? আমি ১৯৬৮ সালে যে বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলাম, এখনও সেই বাড়িতেই আছি। পৌরসভার মেয়র হওয়ার পূর্বে যে সম্পদের মালিক ছিলাম, সেই সম্পদের সাথে আর কোনো সম্পদ যোগ হয়নি। বরং ঢাকার পূর্বাচলে ১০ কাটা জায়গা ছিল সেটা বিক্রি করেছি, বসুন্ধড়ায় ১০ কাটা জায়গা বিক্রি করেছি, বাড়িধায় ছিল ৭ কাটা জায়গা সেটাও বিক্রি করেছি। আমি বুঝি, ১/১১ এর পরাজিত শক্তিকে লাইম লাইটে আনার জন্য আপনারা এগুলো করেন। কিন্তু হবিগঞ্জের মানুষ তাদের নেতা নির্বাচন করতে ভুল করে না, ভবিষ্যতেও করবে না। যতই মিথ্যাচার করেন, আল্লাহকে স্মরণ রাখবেন। আমাদের সমবয়সী অনেক মানুষ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। আমার কোনো পিছু টান নেই। আমার দুটি ছেলে লেখা পড়া করে আমেরিকা ও কানাডায় অবস্থান করছেন। জনগণের টাকা চুরি করে নিজের বাড়িতে নেয়ার চেষ্টা করিনি, ভবিষ্যতেও করব না, ইনশাআল্লাহ। আমরা গর্বিত, আমরা তিনটি ভাইয়ের জন্য আমাদের বাবা টিনসেটের ঘর রেখে যাননি। আমাদের বাবা কোটি কোটি টাকার সম্পদ রেখে গেছেন। আমার ৩টি বোন লন্ডনে ভালো অবস্থায় রয়েছে। আবেগে আপ্লুুত হয়ে তিনি বলেন- আমি অসুস্থ, হয়তো বেশি দিন আপনাদের মধ্যে থাকবো না।
জি কে গউছ বলেন- এডভোকেট আবু জাহির সাহেব বিভিন্নভাবে আমাকে অপদস্ত করেছেন, কষ্ট দিয়েছেন। কিন্তু আমি কোনো দিন উনাকে বা উনাকে যারা পছন্দ করেন তাদেরকে কষ্ট দিয়ে একটি বাক্যও ব্যবহার করিনি। ১/১১ এর সময় যারা আমাকে সাড়ে ১৯ মাস ফাঁসির সেলে রেখেছে, আমার ভাতের মধ্যে বালু দিয়েছে, খেতে পারিনি, আমার ওজন ২১ কেজি কমে শুধু হাড়গুলো ছিল। এই ১/১১ এর পেতাত্মারা এখনও সমাজে আছে, আমি তাদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করিনি। আমি জানি দুনিয়াটা ক্ষণস্থায়ী। মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করলে জানাজা বড় হয়। তাই আমরা যেন ভালো কাজের প্রতিযোগীতা করি, ভালো কাজের সাথে থাকি, মহান আল্লাহ যেন আমাদের বুঝার তৌফিক দান করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুর রহমান কাজল, পৌর বিএনপির সভাপতি তাজুল ইসলাম চৌধুরী ফরিদ, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক জালাল আহমেদ, সদস্য সচিব সফিকুর রহমান সিতু, রিচি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কাজী শামছু মিয়া প্রমূখ।