চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি আর খড়ায় পুড়েছে চা বাগানগুলো। একই সাথে আক্রান্ত হয়েছিল নানা রোগে। এ অবস্থায় নতুন কুড়ি না আসায় উৎপাদনে বড় ধরণে ঘাটতি দেখা দেয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ের পর্যাপ্ত বৃষ্টিতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে হবিগঞ্জের চা শিল্প। এরই মধ্যে নতুন কুড়িতে ভরে ওঠেছে বাগানগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃষ্টির এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে চায়ের উৎপাদন।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বিভিন্ন চা বাগান ঘুরে দেখা যায়, চোখের সীমানাজুড়ে চা বাগানের সবুজ-সতেজ সেই চিরচেনা রূপ। বৃষ্টির পানি গায়ে লাগিয়ে একটি পাতা একটি কুড়িতে ভরে উঠেছে বাগানগুলো। পরম যতেœ পাতা তোলছেন শ্রমিকরা।
চলতি বছর চা উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৮০ লাখ কেজি। তবে, মৌসুম শুরুর দিকে এপ্রিল ও মে মাসে কাক্সিক্ষত লক্ষমাত্রা অর্জন করতে পারেনি শিল্পটি। অনাবৃষ্টি ও খড়ার কারণে লক্ষমাত্রা অর্জনে বড় ধরণে ঘাটতি দেখা যায়। তবে মে মাসের শেষে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় জুন থেকে বাগানগুলোতে আসতে শুরু করে নতুন কুড়ি। এরপর থেকে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় জুলাইয়ে বাগানগুলোতে উৎপাদন বেড়েছে অন্তত ৩০ শতাংশ পর্যন্ত।
উপজেলার চন্ডিছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোঃ ইউসুফ খান বলেন, ‘প্রথমদিকে আমাদের বাগানের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। বৃষ্টি না হওয়ায় যেমন নতুন কুড়ি আসেনি, তেমনি রোগে আক্রান্ত হয় বাগানগুলো। মে মাসের শেষের দিকে যখন বৃষ্টি হয় তখন বাগানগুলোর অবস্থা পরিবর্তন হতে শুরু করে। এখন অবস্থা খুবই ভালো।’
তিনি বলেন, ‘তবে এই বৃষ্টির ধারাবাহিকতা ঠিক ছিল না। টানা বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু চা বাগানের জন্য সবচেয়ে ভালো হয় একদিন বৃষ্টি হয়ে একদিন রোদ হলে। এতে নতুন পাতা আসতে সহযোগিতা করে। এরপরও এই বৃষ্টিতে ওভারঅল আমাদের অনেক উপকার হয়েছে।’
দেউন্দি চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রথম অবস্থায় আমরা খুবই হতাশ ছিলাম। কারণ বাগানের অবস্থা এর আগে কখনো এতো খারাপ হয়নি। পুরো বাগান পুড়ে যাচ্ছিল। তবে বৃষ্টি হওয়ার কারণে এখন বাগানের অবস্থা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এর মধ্যে আমাদের বাগানে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।’
এদিকে বৃষ্টিতে বাগানগুলোর নতুন কুড়িতে ভরে যাওয়ায় আয় বেড়েছে চা শ্রমিকদেরও। নিয়ম অনুযায়ী একজন শ্রমিক দৈনিক মজুরি পান ১৭০ টাকা। তবে এর জন্য প্রত্যেক শ্রমিককে পাতা তুলতে হয় ২৪ কেজি। তবে ২৪ কেজির অতিরিক্ত পাতা তুললে কেজি প্রতি ৫ টাকা পান শ্রমিকরা। বর্তমানে একজন শ্রমিক ৭০ থেকে ৮০ কেজি পর্যন্ত পাতা তুলতে পারছেন। এতে একেজন শ্রমিক দৈনিক অতিরিক্ত আয় করছেন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত।
চান্দপুর চা বাগানের চা শ্রমিক সন্ধ্যা ভৌমিক বলেন, ‘আগেতো বাগান খারাপ আছিল। তখন আমরা ২৪ কেজি পাতাই তুলতে পারতাম না। এখন বাগানের অবস্থা বালা হইছে। এই যে বৃষ্টি হইছে, এখন নতুন পাতা আইছে। আমরা পাতাও বেশি বেশি তুলতে পারছি।’ তিনি বলেন, ‘পাতা থাকলে একজন মানুষ ৭০ থেকে ৮০ কেজি পাতা তুলতে পারে। আমরাও বেশি বেশি পাতা তুলছি। দৈনিক হাজিরা ছাড়াও তলব পাইছি।’
চন্ডিছড়া চা বাগানের শ্রমিক পুস্প বলেন, ‘২১ কেজি পাতা তুললে আমরা ১৭০ টাকা মজুরি পাই। এখন বৃষ্টি আসায় পাতা বেশি তুলছি। প্রতিদিন ৬০/৭০ কেজি পাতা তুলছি। আমরা এক কেজিতে ৫ টাকা করে পাই। দৈনিক দুইশ’ আড়াইশ’ টাকা বেশি তলব নিতে পারছি।’