হবিগঞ্জ শহরের রয়েছে অনেক গৌরবগাঁথা। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সমৃদ্ধ ইতিহাস। একশ’ বছর আগে কেমন ছিল হবিগঞ্জ শহর, খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গের সফলতা, অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্মকথা থাকছে মঈন উদ্দিন আহমেদ এর ‘হবিগঞ্জ শহরের একশ’ বছরের ইতিকথা’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদনে। কালের বিবর্তনে হবিগঞ্জ শহর সৃষ্টি করেছে অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য, থাকবে সেসব কথাও। অনেকটা সাক্ষাতকার ভিত্তিক এ প্রতিবেদনে কারো কোন সংযোজন-বিয়োজন, কিংবা পরামর্শ থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা আপনার তথ্য-উপাত্ত গুরুত্বের সাথে প্রকাশের চেষ্টা করব।
হবিগঞ্জ শহরে প্রথম যখন বিদ্যুতের মেশিন বসানো হয় তখন এর বিকট শব্দে এলাকার লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হতো
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জের প্রবীণ সাংবাদিক অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল আরো জানান, হবিগঞ্জ শহরে কোন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ছিল না। ৬০ এর দশকে স্থানীয় উদ্যোগে শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ আসে। প্রথম যখন সিনেমা হল এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের মেশিন বসানো হয় তখন এর বিকট শব্দে আশপাশের লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হতো। পরে আস্তে আস্তে তা সহনীয় পর্যায়ে আসে। আর বর্তমান সময়ে বিজ্ঞানের কল্যাণে বিদ্যুৎ সরবরাহের শব্দ শোনা যায় না বললেই চলে।
তৎকালীন সময়ে শহরে বিদ্যুৎ না থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে রাতের বেলা প্যাডেল চালিত রিক্সা চলতো পেছনে হারিকেন জ¦ালিয়ে বেঁধে রেখে। তাছাড়া মহকুমা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসকসহ হাতে গোনা ২/৩ জন সরকারি কর্মকর্তাকে জিপ গাড়ি ব্যবহার করতে দেখা যায়। ওই সময়ে শহরে মোটর সাইকেল এর ব্যবহার ছিল না বললেই চলে। শহরের রাজনগরের মতিন মিয়া কন্ডাক্টরের মোটর লাগানো (বর্তমান যান্ত্রিক রিক্সার মতো) একটি মোটর সাইকেল ছিল। এটি যখন চালানো হতো তখন বিকট শব্দ হতো। সিনেমা হল এলাকায় তার একটি মিল (ফ্যাক্টরী) ছিল। ওই সাইকেলে করে তিনি মিলে যাওয়া-আসা করতেন। তখন লোকজন ওই সাইকেল দেখতে ভিড় জমাতো। পরে ১৯৬৫ সালে প্রায় দেড় হাজার টাকায় তিনি লাল রংয়ের একটি ৫০ সিসি জাপানী হোন্ডা ক্রয় করেন। এটি দেখতে উৎসুক মানুষ প্রায়ই রাস্তার পাশে ভিড় জমাতো। চারপাশ থেকে লোকজন সাইকেলটিকে ঘিরে ধরতো।
তৎকালীন সময়ে হবিগঞ্জ শহরের সাথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা চলাচলকারী লোকাল ট্রেন। ওই সময়ে অন্য কোন যানবাহন না থাকায় দূর যাত্রায় মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম ছিল ট্রেন। শহরের পুরান বাজার ও কোর্ট স্টেশন (বর্তমান চাষী বাজার) ২টি স্টেশন ছিল। ওই সময়ে ট্রেন সকাল ৬টায় ছেড়ে সকাল ১১টায় সিলেট পৌঁছতো আর বিকেল ৫টায় সিলেট থেকে হবিগঞ্জ এসে পৌঁছতো। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতেরও একমাত্র মাধ্যম ছিল ট্রেন। তৎকালীন সময়ে ঢাকা থেকে মালবাহী নৌকায় করে হবিগঞ্জ মালামাল আনা-নেয়া করতেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমান শহরের চৌধুরী বাজার নারকেল হাটায় নৌকা ঘাট ছিল। এই ঘাটে এসে মালবাহী নৌকা ভিড়তো। এছাড়া শহরের একমাত্র বাজার ছিল সিনেমা হল বাজার। আর পাইকারী পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হতো চৌধুরী বাজারে। স্বাধীনতার পর শহরের শায়েস্তানগর বাজার, পুরান বাজার বিওসি ঘাট ছিল উল্লেখযোগ্য। পুরান বাজারে একটি দোকানে কেরোসিন, পেট্রল, ডিজেল বিক্রি হতো। আর এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এখানে এটিতে বিওসি ঘাট প্রতিষ্ঠিত হয়। তাছাড়া ঝাল বাড়ির খাল নামে একটি বড় খাল ছিল যা দিয়ে নৌকায় করে লোকজন বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জসহ ভাটি এলাকায় যাওয়া-আসা করতেন।