লিটন পাঠান, মাধবপুর থেকে ॥ হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার পশ্চিম বাজার এলাকার মৃত রুক্কু মিয়ার ছেলে সিরাজুল ইসলাম ওরফে সজীব। পেশায় ইলেকট্রিক মেকানিক। তিনি অনলাইন থেকে বিশেষ কিছু সার্কিট সংগ্রহ করে ওজন মাপার ডিজিটাল মেশিনে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে কারসাজি করে ওজন কম বেশি করার কৌশল রপ্ত করেন। আর এই কৌশল ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজধানীর কাপ্তান বাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে পণ্য বিক্রি করতে আসা ব্যবসায়ীদের পণ্যের ওজন কমিয়ে দিতেন। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে পাইকারি পণ্য বিক্রেতা ও ক্রেতাদের ঠকিয়ে আসছিলেন সজীব ও তার চক্রের সদস্যরা। সম্প্রতি ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজধানীর কাপ্তান বাজারে অভিযান চালিয়ে চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সিরাজুল ইসলাম ওরফে সজীব, মোঃ মনির, মোঃ লিটন ও মোঃ আলাউদ্দিন খান। অভিযানে চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৫টি ডিজিটাল ওজন মেশিন, ৭টি রিমোট কন্ট্রোল, তাতালসহ ওজন মেশিন কারসাজি করার বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। রবিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ। তিনি বলেন, আমরা নতুন ধরনের একটি অপরাধী চক্রকে গ্রেফতার করেছি। এর আগে আমরা শুধু শুনতাম পণ্য পাইকারি বিক্রি করতে এসে অনেকেই ওজনে গড়মিল পেতেন। অনেক সময় ক্রেতারাও এমন অভিযোগ করতেন। পরবর্তীতে এমন অভিযোগকে সামনে রেখে কাজ শুরু করে ডিবির মতিঝিল বিভাগ। এরই অংশ হিসেবে ৪ প্রতারককে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশের ভাষ্য, রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে দূরে বসে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা একটি অভিনব ও নতুন ধরনের প্রতারণা। দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতে রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোতে আসা ব্যবসায়ীরা চক্রটির হাতে প্রতারিত হতেন।
মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন- রমজান মাস চলছে। সামনে ঈদ। ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযানে নেমে দেখলাম, ঢাকার পাইকারি বাজারগুলোতে ওজনে কম দেওয়া হচ্ছে। আমরা অভিযানে নেমে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ওজনে কম দেওয়া চক্রের ৪ জনকে গ্রেফতার করেছি। তদন্ত করতে গিয়ে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এটি একটি প্রতারণার নতুন ধরণ। গোয়েন্দা প্রধান বলেন, সজীব পেশায় একজন টেলিভিশন মেকানিক। সে অনলাইন থেকে বিশেষ সার্কিট ও রিমোট অনলাইনে সংগ্রহ করে ডিজিটাল ওজন মেশিন কারসাজি করে। ফলে ২০০ কেজি পণ্যের ওজন দূরে বসে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ইচ্ছেমতো কমাতে পারে। এগুলো সে বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। মেকানিক সজীব প্রতিটি মেশিন অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতো। এই চক্রের কাছে ওজন কম দেওয়ার সাংকেতিক শব্দ হলো গাপসি। এর অর্থ হলো ওজনে কম দিতে হবে। এসব মেশিন কাপ্তান বাজারে পাইকারি মুরগি বা মাংস বিক্রেতারা ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। তবে তাদের টার্গেট থাকে নতুন পণ্য বিক্রেতা ও পাইকারি ক্রেতা। তারা পুরাতন পাইকারি ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করতো না। পণ্যের ওজন কম বলাটা এক ধরনের চুরি।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com