ডাঃ চৌধুরী মোঃ নিয়াজুজ্জামান
শিশু বিশেষজ্ঞ
কনসালট্যান্ট (শিশু বিভাগ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চেম্বার ঃ প্রতি শুক্রবার মধুমতি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জে.কে. স্কুল মার্কেট, হবিগঞ্জ।
১) জন্মের পর অন্তত প্রথম ৩ দিন বাচ্চাকে কোনভাবেই গোসল করাবেন না। অনেকেই ভুল করে গোসল করিয়ে নিউমোনিয়াসহ নানা অসুখবিসুখ বাধিয়ে ফেলেন; আরও কিছুদিন পরে গোসল করালেই ভাল।
২) বাচ্চাকে জন্মের পর বেশি মানুষজন না ধরাই বাচ্চার ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য ভাল হবে। বাচ্চাকে ধরার আগে হাত সাবান/হ্যান্ডওয়াশ/হ্যান্ডরাব দিয়ে পরিষ্কার করে নিবেন।
৩) জন্মের পরপরই বাচ্চার গায়ে যে সাদা আঠালো পদার্থ (ভারনিক্স) লেগে থাকে, তা বাচ্চার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য সহায়ক। সুতরাং এটা ঘষে মুছে ফেলবেন না, পরবর্তীতে নিজে থেকেই উঠবে।
৪) জন্মের আধা ঘণ্টা থেকে ১ ঘন্টার মধ্যে বাচ্চাকে বুকের দুধ দেয়া শুরু করতে হবে, সেটা নরমাল ডেলিভারি হোক অথবা সিজারিয়ান হোক।
৫) শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। অন্য কোনো খাবার, এমনকি এক ফোঁটা পানি খাওয়ানোরও প্রয়োজন নেই। প্রথমে ১ থেকে ২ ঘন্টা পর পর বুকের দুধ দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্র¯্রাব পায়খানা হল কি না। খাবার ঠিক থাকলে ১ম ২৪ ঘন্টায় ১/২ বার প্র¯্রাব হয়। পরবর্তীতে প্র¯্রাব বৃদ্ধি পাবে। বুকের দুধ টানতে পারা শারিরীক সুস্থতার লক্ষণ।
৬) ফরমুলা দুধ খাওয়ানো বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। শুধুমাত্র মা মারা গেলে বা মা ক্যান্সার এর ঔষধ খেলে অথবা বাচ্চার গ্যালাকটোসেমিয়া নামক বিরল রোগ থাকলেই ফরমুলা দুধ খাওয়াতে পারেন। প্রথম তিনদিন শালদুধ থাকে, যা অল্প পরিমাণে আসে; কিন্তু এটাই বাচ্চার জন্য যথেষ্ট এবং খুবই উপকারী, কারণ নবজাতকের পাকস্থলি খুবই ছোট থাকে।
৭) বাচ্চা কান্না করে বলে অনেকেই ফরমুলা দুধ দিয়ে দেন। কিন্তু আসলে ক্ষুধা লাগা ছাড়াও বাচ্চার কান্নার অনেক কারণ থাকতে পারে।
৮) অতিরিক্ত পানি বের হয়ে ১ম ৭ দিনে ওজন ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে, তাতে দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
৯) জন্মের পরপরই বা যত দ্রুত সম্ভব বাচ্চাকে একজন নবজাতক বা শিশু বিশেষজ্ঞ দিয়ে বাচ্চার শ্বাসের হার বা অন্য সবকিছু ঠিক আছে কিনা বা কোন ধরনের ঈড়হমবহরঃধষ অহড়সধষু আছে কিনা চেক করিয়ে নিন। এক্ষেত্রে অবহেলা করা পরবর্তীতে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
১০) ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় সব শিশুর হালকা হলুদ ভাব দেখা দিতে পারে। আবার ৭ দিনে স্বাভাবিক হয়ে যায়। ১ম ২৪ ঘন্টায় হলুদ ভাব থাকলে বা মাত্রা অতিরিক্ত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। একটা ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে- রোদ লাগালে বাচ্চার জন্ডিস কমে যাবে। এজন্য নবজাতককে রোদে দেয়া হয় ; কিন্তু আসলে এর কোন প্রয়োজন নেই এবং রোদে দিলে জন্ডিস কমবে; এরকম তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং এতে বাচ্চার ঠান্ডা লেগে যাওয়া ও আরও বেশ কিছু সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জন্ডিসের মূল চিকিৎসা বুকের দুধ এবং জন্ডিস বাড়লে প্রয়োজনে (চিকিৎসক এর পরামর্শমতো) জন্ডিস চেক করুন। অন্যথায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়া হলে আপনার বাচ্চার ক্ষতি হবার আশঙ্কা থাকবে।
১১) বাচ্চাকে শুয়ে না খাইয়ে বসে খাওয়াবেন। পজিশনিং এবং এটাচমেন্ট নেট থেকে বা অষষ ধনড়ঁঃ করফং ঐবধষঃয ঋধপবনড়ড়শ মৎড়ঁঢ় এ ইৎবধংঃভববফরহম লিখে সার্চ দিয়ে ছবি দেখে শিখে নিতে পারেন অথবা ণড়ঁঞঁনব থেকে। প্রতি ফিডিং এ শুধু একপাশের বুক থেকে খাওয়াবেন অর্থাৎ এক ফিডিং এ দুই পাশে দিবেন না। হাসপাতাল থেকে ছুটির আগেই নার্স থেকে বাচ্চাকে খাওয়ানোর পজিশনিং এবং এটাচমেন্ট শিখে যাবেন।
১২) কম বা বেশি ওজনে জন্ম নেওয়া বাচ্চাদের রক্তে সুগার কমে যেতে পারে। সেজন্য জন্মের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা চেক করতে হবে।
১৩) বাচ্চার গা ঘামা যাবে না। ঘাম সাথে সাথে পরিষ্কার সুতি কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে।
১৪) অন্তত ১ মাস বয়সের আগে গায়ে এবং মাথায় তেল, লোশন, পাউডার, কাজল ইত্যাদি লাগানো নিষেধ।
১৫) শিশুকে খোলামেলা ঘরে রাখবেন।
১৬) সুতি কাপড় এর ঢিলা জামা পরাবেন। হলুদ জামা না পরানো ভালো হবে।
১৭) ডায়াপার ব্যাবহার করলে ৬ ঘন্টার বেশি কখনোই একটি ডায়াপার ব্যবহার করবেন না।
১৮) জন্মের পরপরই বিসিজি টিকা দিতে পারেন (১৪ দিন বয়স পর্যন্ত) এবং ৪৩তম দিন বয়স থেকে অন্যান্য নিয়মিত টিকা শুরু করবেন।
১৯) অনেকে বাচ্চার নাভিতে গরম সেক দেন বা আগুন লাগান। এটি নিষেধ এবং এতে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।
২০) নবজাতক মাঝেমধ্যে বমি করতে পারে। বেশি বমি না করলে খুব একটা সমস্যা নেই। বমি করলে যে কোন একপাশে কাত করে রাখুন।