উত্তম কুমার পাল হিমেল ॥ আজ ১৫ জানুয়ারি সোমবার পৌষ সংক্রান্তি। সংক্রান্তি অর্থ সঞ্চার বা গমন করা। সূর্যের এক রাশি হতে অন্য রাশিতে সঞ্চার বা গমন করাকে সংক্রান্তি বলা যায়। সহজ কথায়- প্রতি মাসের শেষ দিনকে সংক্রান্তি বলা হয়। বারোটি মাসে বারোটি সংক্রান্তির মধ্যে পৌষ মাসের সংক্রান্তি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সে কথায় যাওয়ার আগে বলতে হচ্ছে : পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি আসলেই মনটা ছুটে যায় শৈশবে। সংক্রান্তির পূর্বরাত্রিতে এ বাড়ি ও বাড়ি থেকে রাতের খাবার দ্রব্যাদি নিয়ে আসা, ছোট করে ঘর (খড় দিয়ে) তৈরি করে নিজেরা রান্না করে খাওয়া, সারারাত ধর্মীয় আবেশে নাচে গানে আনন্দে মুখরিত থাকতো সেই রাতের পরিবেশ। রাতভর কতই না আনন্দ করা হতো। নতুন আলু পোড়া খাওয়াও ছিল অনেক আনন্দের।
অন্যদিকে ঘরে ঘরে মা, বোন, বৌদিদের রাত জেগে পিঠা বানানো, সাথে কত রঙের গান, গল্পকথা শুনতাম। গ্রামের এ আনন্দ কারো জীবনে ভোলার নয়। কিন্তু শহুরে জীবনেও তা কোনদিনও সম্ভব হয় না। তবে এখন আর আগের মত এসব দেখি না। তবে গ্রামে এ ঐতিহ্য এখনো অনেকটা আনন্দঘন পরিবেশে পালন করা হয়। মন থেকে কখনও এমন সংস্কৃতি হারিয়ে যাবে না। ছেলে-মেয়েকেও এমন সংস্কৃতির শিক্ষা দিতে চেষ্টা করা প্রয়োজন সকলের।
প্রাতঃকালে ফুল-দূর্বা হাতে নিয়ে জলে নেমে সংক্রান্তির এ পুণ্য তিথিতে গঙ্গাস্নানে পূণ্য লাভ হয় এ বিশ্বাসে স্নান করেন অনেকেই। স্নান সেরে এসে পরিবারের সকলে মিলে আগুন পোহানোর প্রথা চালু আছে এখনো। তারপর সকাল হতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুরুব্বিদেরকে ভক্তি প্রণাম করার রীতি চালু আছে। সবার ঘরেই বহু ধরণের পিঠা পায়েস দিয়ে আপ্যায়ণ করা হয়। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অনেকেই পিঠা খাওয়ার এ উৎসবে যোগ দেন। পরে গ্রাম জুড়ে হরিনাম সংকীর্তন সহযোগে হরির লুট কুড়ানোর আনন্দই আলাদা। এমনিভাবে আনন্দের মধ্যে অতিক্রম হয় বিশেষ এ দিনটি। শ্রীমদ্ভগবদগীতার অষ্টম অধ্যায়, অক্ষর ব্রহ্মযোগ পাঠ করলে জানা যায়, কখন মারা গেলে এই পৃথিবীতে আসতে হবে না এবং কখন মারা গেলে ভগবানকে লাভ হয়। সেই প্রসঙ্গে এ অধ্যায়ে উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের কথা রয়েছে। মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় এই ছয় মাস উত্তরায়ণ কাল (এ সময়ে যোগীগণ দেহত্যাগ করলে পুনর্জন্ম হয় না) এবং শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ ও পৌষ এই ছয় মাস দক্ষিণায়ণ কাল (এ সময়ে যোগীগণ দেহত্যাগ করলে পুনর্জন্ম হয়)। ভীষ্মদেব উত্তরায়ণের অপেক্ষায় ৫৮দিন শরশয্যায় ছিলেন। কারণ উত্তরায়ণে মৃত্যু হলে আত্মা জন্ম-মৃত্যুর চক্রাকার আবর্ত থেকে মুক্তিলাভ করে ঈশ্বরপদে গমন করে। আমাদেরও মুক্তি লাভ হোক সে প্রত্যাশা করি। শুভ পৌষ সংক্রান্তির শুভেচ্ছা সবাইকে।