সালীম বিন আব্দুল আহাদ
তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ বা আল্লাহর ওপর ভরসা করা এটি মুমিন বান্দার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য যা, আল্লাহতায়ালা অত্যন্ত পছন্দ করেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, আল্লাহতায়ালার ওপরই ভরসা রেখ, যদি তোমরা প্রকৃত মুমিন হও (সূরা মায়েদা-২৩)।
আরেক আয়াতে এসেছে, আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। অতএব, মুমিনরা আল্লাহর ওপর ভরসা করুক’ (আত-তাগাবুন-১৩)। আরও এসেছে, মুমিন তো তারাই, (যাদের সামনে) আল্লাহকে স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয় ভীত হয়, যখন তাদের সামনে তার আয়াতগুলো পড়া হয়, তখন তা তাদের ইমানের উন্নতি সাধন করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের ওপর ভরসা করে (সূরা আল আনফাল-২)।
উপরোল্লেখিত আয়াতগুলো থেকে এ কথাই প্রতিয়মান হয় যে, মুমিনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ বা আল্লাহর ওপর ভরসা করা। আর তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ বা আল্লাহর ওপর ভরসার অর্থ হলো এই, যে কোনো কাজে শুধু নিজের যোগ্যতা এবং ক্ষমতার ওপর ভরসা না করে একমাত্র আল্লাহর ওপরই ভরসা করা। তবে হ্যাঁ আল্লাহর ওপর ভরসার অর্থ এই নয় যে, আমি নিজে একেবারে হাত গুটিয়ে বসে থাকব কিছুই চেষ্টা করব না। আর আসমান থেকে আমার জন্য সব ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। বরং যে কোনো বিষয়ে আগে নিজের পরিপূর্ণ চেষ্টা যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ব্যয় করব। এরপর আল্লাহর কুদরতি কদমে ছেড়ে দেব তার ওপর ভরসা করব। মাবুদ আমার থেকে আমি চেষ্টা করেছি এবার পূর্ণতা দেওয়ার মালিক আপনি।
এক হাদিসে আসছে, একজন সাহাবি নবিজি (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আমি কি উট বেঁধে আল্লাহর ওপর ভরসা করব? নাকি উট ছেড়ে দিয়েই আল্লাহর ওপর ভরসা করে রেখে যাব? উত্তরে নবিজি (সা.) বললেন, আগে উট বাঁধ তারপর আল্লাহর ওপর ভরসা কর, যাতে কোনো দুর্ঘটনার কারণে উট হারিয়ে না যায় (সুনানে তিরমিজি হাদিস নং ২৫১৭)।
আল্লাহর ওপর ভরসা করে চলাটা আল্লাহ এতটাই পছন্দ করেন যে, কুরআনে আল্লাহতায়ালা এমন বান্দাকে ভালোবাসেন এবং তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যাবেন এমন অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যেমন- কোনো কর্মচারী যদি তার নিজের সব দায়-দায়িত্ব তার মালিকের হাতে ন্যস্ত করে দেয় এবং বলে যে, আমার মালিক আমার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেবেন তাতে আমি রাজি আমার কোনো আপত্তি নেই, তখন মালিক অবশ্যই তার ব্যাপারে কল্যাণকর সিদ্ধান্ত নেবেন এবং অনেক খুশিও হবেন।
ঠিক তেমনিভাবে কোনো বান্দা যখন তার সব চেষ্টা, ক্ষমতা ব্যয় করার পর ভরসা করে সেই মহান মালিক রাজাধিরাজ আল্লাহর ওপর, তখন তিনিও অত্যন্ত খুশি হন। যেমন- আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘অতঃপর যখন কোনো কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহতায়ালার ওপর ভরসা করুন আল্লাহ ভরসাকারীদের ভালবাসেন’ (সূরা আলে ইমরান-১৫৯)।
আল্লাহর ওপর ভরসার উপকারিতা ঃ
১. যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে শয়তান কখনো তার ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারে না। পবিত্র কুরআনের ভাষায়, ‘তার আধিপত্য চলে না তাদের ওপর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আপন পালন কর্তার ওপর ভরসা রাখে’ (সূরা নাহল-৯৯)।
২. আল্লাহর ওপর ভরসাকারী বান্দাকে আল্লাহ ভালোবাসেন, পবিত্র কুরআনে এভাবে আসছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ভরসাকারীদের ভালোবাসেন’ (সূরা আলে ইমরান-১৫৯)। অতএব, আল্লাহর ভালোবাসার চেয়ে বড় পাওয়া বান্দার জন্য আর কি হতে পারে?
৩. এমন বান্দার জন্য আল্লাহ নিজেই যথেষ্ট হয়ে যান অর্থাৎ এমন বান্দার সঙ্গে আল্লাহ আছেন। আর যার সঙ্গে আল্লাহ আছেন তার কিসের ভয়? কিসের অভাব? সূরা ত্বলাকে আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন’ (সূরা ত্বলাক-৩)।
৪. আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলকারী বান্দা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা.) বলেন, আমার সামনে একবার বিভিন্ন নবীর উম্মতকে পেশ করা হয়। তখন আমি নবীদের সঙ্গে তাদের উম্মতকে দেখলাম। কোনো কোনো নবীর সঙ্গে একটি দল, কারও সঙ্গে দশজন, কারও সঙ্গে পাঁচজন, আবার কোনো নবী একা একাই চলছেন। হঠাৎ বড় একটি দল দেখে আমি জিবরাইলকে জিজ্ঞেস করলাম, এরাই কি আমার উম্মত? তিনি বললেন না। আপনি ওদিকে দেখুন।
নবীজি (সা.) বলেন, আমি সেদিকে তাকাতেই বিশাল একটি দল দেখলাম। জিবরাইল বললেন এরাই আপনার উম্মত। এদের সম্মুখভাগের সত্তর হাজার লোক হিসাব ছাড়া ও কোনো আজাব ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাসূল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তারা কারা? জিবরাইল বললেন তারা ওই সব লোক, যারা অবৈধভাবে ঝাড়ফুঁক দেয় না, নেয়ও না এবং পাখির মাধ্যমে গণনা করে শুভ-অশুভ নির্ধারণ করাকে বিশ্বাস করে না, বরং সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর ওপরেই ভরসা অর্থাৎ তাওয়াক্কুল করে (বোখারি শরিফ-৬১৭৫)।