সংবাদদাতা ॥ আজ বিশ্বখ্যাত গণিতবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক মরহুম ড. মোঃ আব্দুল কুদ্দুসের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ২০০৬ সনের ১২ সেপ্টেম্বর নিঃসন্তান অবস্থায় চাকরিকালীন মৃত্যুবরণ করেন। মরহুম প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল কুদ্দুস ১৯৪৮ সনের ২৫ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গ্রাম বানিয়াচং এর প্রথমরেখে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম মোঃ পারু মিয়া ছিলেন গ্যানিংগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি, এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, জনাব আলী সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও বানিয়াচং হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা। তার মা মরহুমা খায়রুন্নেসা খানম ছিলেন সাগরদিঘির পশ্চিম পারের ঐতিহ্যবাহী খান পরিবারের মেয়ে।
ড. মোঃ আব্দুল কুদ্দুস শিক্ষাজীবন শুরু করেন চৌধুরী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানে দুই বছর পড়াশোনা করে ভর্তি হন উপমহাদেশের শতোর্ধ্ব প্রাচীন বিদ্যাপীঠ বানিয়াচং এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্কুলে বরাবরই প্রথম স্থান অধিকার করতেন। এ স্কুল থেকে ১৯৬৪ সনে বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এই ব্যাচটি এখন পর্যন্ত স্কুলের সেরা ব্যাচ এবং ড. আব্দুল কুদ্দুস সেরা ছাত্র।
মেট্রিক পাসের পর তিনি সিলেট এমসি কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৬৬ সনে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। ১৯৭০ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে অনার্সসহ প্রথম শ্রেণীতে এমএসসি পাস করেন। তিনি সেই সময় চাকরিতে যোগদান না করে ১৯৭২ সনে পিএইচ.ডি গবেষণা শুরু করেন এবং ১৯৮১ সনে প্রফেসর ড. মোঃ রমজান আলী সরদারের তত্ত্বাবধানে পিএইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
দীর্ঘ ষোল বছর পর তিনি ১৯৮৬ সনের ১৪ জানুয়ারি প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৮৮ সনের ১ অক্টোবর সহকারী অধ্যাপক, ১৯৯৩ সনের ২১ জুলাই সহযোগী অধ্যাপক, ২০০১ সনের ২৭ মার্চ অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। তিনি আপাদমস্তক একজন শিক্ষক ছিলেন। যেকারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোনো দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। তিনি নবীগঞ্জের বেতাপুর চৌধুরী বাড়ির কাস্টমসের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মরহুম গোলাম রব্বানী চৌধুরীর কন্যা ডাঃ সাহিরা চৌধুরীর সাথে ১৯৯০ সনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
ড. কুদ্দুস আপাদমস্তক শিক্ষক ছিলেন। যে কারণে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। দেশে সম্ভবত তিনিই একমাত্র উচ্চ শিক্ষিত যিনি টার্গেট পূরণের জন্য ষোল বছর বেকার ছিলেন। তিনি ছিলেন বানিয়াচং এর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, প্রথম ডক্টরেট, প্রথম সর্বোচ্চ চাকরিজীবী (সচিব পদমর্যাদা), সিলেট বিভাগে গণিত শাস্ত্রে প্রথম ডক্টরেট। ড. আব্দুল কুদ্দুস সাতটি ভাষা জানতেন- বাংলা, ইংরেজি, হিন্দী, আরবি, ফরাসি, উর্দু ও জর্মন। ড. আব্দুল কুদ্দুস ব্যক্তিগতভাবে সৎ, দেশপ্রেমিক, ধার্মিক ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ ছিলেন।