ধর্ষণের পর ধর্ষকরা মেয়েটিকে ঘরের শিলিংএ ঝুলিয়ে রাখে যাতে তার মৃত্যুর পর প্রচার করা যায় সে আত্মহত্যা
করেছে ॥ কিন্তু সৌভাগ্যবশত মেয়েটি বেঁচে যাওয়ায় ধর্ষকদের পরিবারের নারী-পুরুষ মিলে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় দুই নারীসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ॥ তারা আদালতে ঘটনা স্বীকার করেছে
স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করা বাগেরহাটের এক যুবতী লাখাই উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে বান্ধবীর বিয়েতে এসে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। পরে ধর্ষকরা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ভিকটিমকে ঘরের শিলিংএ ঝুলিয়ে রাখে; যাতে সবাই বুঝতে পারে সে আত্মহত্যা করেছে। পরে মেয়েটি থানায় অভিযোগ দিলে ঘটনার সাথে জড়িত তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এর মাঝে দুই নারী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে এই ঘটনার বিষয় স্বীকার করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার কোন্তাকাটা গ্রামের ১৯ বছর বয়সী এক যুবতী ঢাকার একটি গার্মেন্টসে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের দেলোয়ার হোসেন দিলুর মেয়ে কোহিনুর আক্তারের সাথে চাকুরী করত। এক সাথে চাকুরী করার সুবাদে তাদের মাঝে ঘনিষ্ট সম্পর্ক হয়। সম্প্রতি ওই মেয়েটি তার বান্ধবী কোহিনুরের বিয়ে ঠিক হওয়ার সময় তার বাড়িতে বেড়াতে আসে। এ সময় কোহিনুরের আত্মীয় ওই গ্রামের মনা মিয়ার ছেলে শিপন মিয়ার সাথে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এদিকে গত ১২ মার্চ ছিল কোহিনুরের বিয়ে। কোহিনুরের বিয়েতে অংশ নেয়ার জন্য মেয়েটি ঢাকা থেকে লাখাই আসে। ওইদিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শিপন মিয়া মেয়েটির সাথে দেখা করে তাকে কোহিনুরের প্রতিবেশি আশরাফ উদ্দিন এর ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে শিপন মিয়া ও তার আরও ৩ সহযোগী মিলে মেয়েটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে মেয়েটিকে সবাই মিলে ওই ঘরের শিলিংএ ঝুলিয়ে রাখে যাতে তার মৃত্যু হলে সবাই বুঝতে পারে সে আত্মহত্যা করেছে। পরে ধর্ষকরা দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায়।
এরই মধ্যে ওই বাড়ির লোকজন ঘরের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে মেয়েটিকে ঝুলে থাকতে দেখে তাকে নামিয়ে আনে এবং বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করায়। তারা ধর্ষণের বিষয়টি লুকিয়ে রেখে আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে অসুস্থ বলে চিকিৎসা করায় এবং মূল ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। এভাবে কেটে যায় তিনদিন। এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়-এর নির্দেশে মেয়েটিকে লাখাই থেকে উদ্ধার করে তার বড় বোনের কাছে সমজে দেন হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মোঃ সাইদুর রহমান। মেয়েটিকে সমজে দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন লাখাই উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আলহাজ্ব এনামুল হক মামুন ও লাখাই উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফুল আলম রনি।
বোনের কাছে গিয়ে মেয়েটি সাহস ফিরে পায় এবং ঘটনা বোনকে খুলে বলে। পরে ১৫ মার্চ মেয়েটিকে হবিগঞ্জ আড়াইশ’ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে গত বৃহস্পতিবার ভিকটিম মেয়ে ও তার বোন লাখাই থানায় গিয়ে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে ওইদিন রাতেই লাখাই থানা পুলিশ নোয়াগাঁও গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে আশরাফ উদ্দিন এর স্ত্রী আফিয়া বেগম, মকবুল হোসেন এর ছেলে দেলোয়ার হোসেন দিলু ও দেলোয়ার হোসেন দিলুর স্ত্রী রাবেয়া খাতুনকে গ্রেফতার করে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে আফিয়া বেগম ও রাবেয়া খাতুনকে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা বেগম এর আদালতে হাজির করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার কথা স্বীকার করে। একই আদালতের বিচারক শুক্রবার বিকেলে ২২ ধারায় ভিকটিম মেয়েটির জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
লাখাই থানার ওসি তদন্ত মহিউদ্দিন দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানান, গার্মেন্টস কর্মীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে শিপন মিয়া ও তার তিন সহযোগী মেয়েটিকে ধর্ষণ করে ঘরের শিলিংয়ে ঝুলিয়ে রাখে। তবে ভিকটিম মেয়েটির এর মৃত্যু না হওয়ায় প্রকৃত রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়েছে। যারা এই ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মাঝে দুইজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ধামাচাপা দেয়ার কথা স্বীকার করেছে। আমরা মূল আসামীদেরকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।