হবিগঞ্জের আইনজীবীদের প্রতি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা’র অনুরোধ
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোঃ সেলিম বললেন- ১৯৫০ সালে সরদার প্রথা বিলুপ্ত হলেও বানিয়াচঙ্গে সরদার প্রথা চালু রয়েছে ॥ মাদক, ইভটিজিং, গ্রাম্যদাঙ্গা, বাল্যবিয়ে বন্ধ করাসহ সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ছান্দ সরদার-মহল্লার সরদার ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা কামনা
আক্তার হোসেন আলহাদী ॥ বানিয়াচংয়ে ছান্দ সরদার ও মহল্লার সরদারগণের সাথে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বিপিএম, পিপিএম। সভায় তিনি বলেন, হবিগঞ্জ জেলা একসময় নানা দিক থেকে পশ্চাৎপদ ছিল। সেটা এখন আর নেই। এখন অমিত সম্ভাবনাময় একটি জেলায় পরিণত হয়েছে। হবিগঞ্জ জেলায় একের পর এক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যেই এ জেলা সারা দেশের মধ্যে অন্যতম একটি বাণিজ্যিক জেলা হিসেবে রূপান্তরিত হবে। কী নেই হবিগঞ্জ জেলায় চা-বাগান, রাবার বাগান, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, হাওর-বাওরসহ নানা দিক থেকে সমৃদ্ধ একটি জেলা হচ্ছে হবিগঞ্জ।
বিশেষ করে বাহুবলে অবস্থিত দ্যি প্যালেস এর মতো আন্তর্জাতিক একটি রিসোর্ট সেন্টার গড়ে উঠাতে এ জেলার সুনাম দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন বহির্বিশ্বেও বিস্তৃতি ঘটেছে। এসব অর্জন অনেকটা ম্লান হয়ে যায় গ্রাম্য দাঙ্গায়। এ ক্ষেত্রে গ্রাম্য পঞ্চায়েত ব্যক্তিত্ব, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে গ্রাম্য দাঙ্গা, মাদক, জুয়া, চুরি-ডাকাতিসহ সম্ভাবনাময় হবিগঞ্জ জেলাকে অপরাধমুক্ত রাখতে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে।
গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় বানিয়াচং থানা চত্ত্বরে মহল্লার ছান্দ সর্দারগণের সাথে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, মাদককে না বলতে হবে। মাদকসেবী যতই মিছিল, শো-ডাউন দিক না কেন তাদের মুখোশ উন্মোচন হয়ে গেছে। তাদেরকে মানুষ ঘৃণা করে। অপরাধী যেই হউক সে পার পাবে না। তিনি আরও বলেন মুঠোফোন থেকে সন্তানদের দূরে রাখতে হবে। এই মুঠোফোন ছাত্রছাত্রীদের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
উপস্থিত ছান্দ সরদার-মহল্লার সরদার ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আইন-শৃঙ্খলা, মাদক, ইভটিজিং, গ্রাম্যদাঙ্গা, বাল্যবিয়ে বন্ধ করাসহ সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ প্রশাসনকে সহযোগিতার জন্য আহবান জানান পুলিশ সুপার। আর বিশেষ করে চোর-ডাকাত, মাদকসেবীদেরকে আইনী সুযোগ না দিতে আইনজীবীদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন অপরাধী ও অপরাধের আগাম তথ্য দিয়ে সহযোগিতার আহবান জানান পুলিশ সুপার। পুলিশ সুপার বলেন- সরদারগণ একজন আদর্শ লোক হিসেবে যেন সমাজের সর্বত্র ভূমিকা রাখতে পারেন সেজন্য নিজেদের চেষ্টা করতে হবে।
বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ এমরান হোসেনের সভাপতিত্বে ও সেকেন্ড অফিসার আব্দুর রহমান এর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বানিয়াচং সার্কেল শেখ মোঃ সেলিম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ ইকবাল হোসেন খান ও প্রবীণ পঞ্চায়েত ব্যক্তিত্ব সাবেক ২নং ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দারুজ্জামান খান ধন মিয়া, সৈদারটুলা ১২ মহল্লার ছান্দ সর্দার মোঃ এনামুল হোসেন খান বাহার। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওসি (তদন্ত) প্রজিত কুমার দাশ, ১নং ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ গিয়াস উদ্দিন, ৩নং ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুর রহমান, ৬নং ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ এরশাদ আলী, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ আঙ্গুর মিয়া, মাতাপুর মহল্লার সর্দার এসএম হাফিজুর রহমান, সর্দার আব্দুর রশিদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাসিয়াড়া মহল্লার সর্দার মোঃ আনোয়ার হোসেন ও হাজী আবু জাফর মিয়া, আব্দুর রহিম, জয়নাল আবেদীন, আরজু মিয়া, আবু জাফর, আংগুর মিয়া, প্রেসক্লাব সভাপতি মোশাহেদ মিয়া, আনোয়ার হোসেন, আলাউদ্দিন প্রমূখ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোঃ সেলিম বলেন বাংলাদেশে সরদার প্রথা শুরু হয়েছিল ঢাকা থেকে। ১৮৬০ সালে ১২জন সরদার নিয়ে ঢাকায় কার্যক্রম শুরু করা হলেও ১৯৫০ সালে বিলুপ্ত করা হয়। কিন্তু বর্তমানেও বানিয়াচংয়ে সরদার প্রথা চালু রয়েছে। তিনি মাদক জুয়াসহ সকল প্রকার অপরাধ দমনে সরদারদেরকে কঠোর হওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন- মাদক দাঙ্গা চুরিসহ সকল প্রকার অপরাধ প্রবনতা যেন বৃদ্ধি না পায় সেদিকে সকল সরদারদের সজাগ দৃষ্টি রেখে চলতে হবে।
সভায় বানিয়াচং সদরের ৪টি ইউনিয়নের শতাধিক মহল্লার সরদার প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত সরদারগণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, মাদক নির্মূল, গ্রাম্যদাঙ্গা, ইভটিজিং, বাল্যবিয়ে বন্ধসহ সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ প্রশাসনের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করবেন বলে অঙ্গীকার করেন।