এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জের সকল হাটবাজরে শাক-সবজি তথা কাঁচামালের দাম আকাশছোয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক সপ্তাহে প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে টমেটো ও কাঁচা মরিচের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। বাজারে একমাত্র সস্তা আনাজ হলো আলু। প্রতি কেজি ডায়মন্ড আলু ২০ টাকা ও দেশী আলু ২৮/৩০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। আলু ছাড়া সব সবজিই দামই এখন সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। গতকাল হবিগঞ্জ শহরের সবচেয়ে বড় কাঁচামালের বাজার চৌধুরী বাজার কাঁচামাল হাটায় গিয়ে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে প্রচুর শাকসবজি রয়েছে। কিন্তু আকাশছোয়া দাম। অনেক ক্রেতা দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছেন। ক্রেতারা জানিয়েছেন শাক-সবজির দাম অনেক বেড়েছে। অনেকের পক্ষে ওই দামে কিনা সম্ভব হচ্ছে না। বাজারে এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি টমেটো ৬০/৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন ৯০/১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের কেজি ২৫/৩০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বেড়ে গিয়ে প্রতি কেজি ৪৫/৫০ টাকা, মরিচের কেজি ৪০/৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও দাম বেড়ে যাওয়ায় ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কাঁকরোল প্রতি কেজি ২৫/৩০ টাকার স্থলে ৪৫/৫০ টাকা, করলা ২০/২৫ টাকার স্থলে ৫০ টাকা, ঢেঁরস ৩০ টাকার স্থলে ৪০/৪৫ টাকা, চিচিংগা ৩০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা, গাজর ৩০ টাকার স্থলে ৫৫/৬০ টাকা, চাল কুমড়া ৩০ টাকার স্থলে ৪০/৫০ টাকা, শশা ৩০/৩৫ টাকার স্থলে ৪০/৫০ টাকা, লতা ২০/২৫ টাকা আটির স্থলে ৩৫/ ৪০ টাকা, মুকি ৩০/৩৫ টাকার স্থলে ৪৫/৫০ টাকা, পটল ৩০ টাকার স্থলে ৪০/৪৫ টাকা, জিঙ্গা ২৫/৩০ টাকার স্থলে ৪৫/৫০ টাকা, লাল শাক ১০ টাকার আটির স্থলে ১৫/২০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকার কেজির স্থলে ৩০/৪০ টাকা, ধনিয়া পাতা ৭০ টাকার স্থলে ৯০/১০০ টাকা, শিম-৬০/৬৫ টাকার স্থলে ৯০/১০০ টাকা, মিষ্টি লাউ ছোট সাইজ ৩৫/৪০ টাকার স্থলে ৬০/৭০ টাকা, বড় সাইজ ১০০/১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চৌধুরী বাজারে কাঁচামাল ক্রেতা শহরের রাজনগর এলাকার আলিমা আক্তার জানান, এক সপ্তাহ আগে কাকরুল ৩০/৩৫ কেজি দরে কিনেছি। এখন ৫০ টাকা কেজি, করলা ২৫ টাকার কেজি জায়গায় ৪৫ টাকা, ঢেরস ২০ টাকার স্থলে ৪০ টাকা, করলা ২৫ টাকার স্থলে ৩৫ টাকা দরে ক্রয় করতে হয়েছে। তিনি বলেন- প্রত্যেক আনাজের দামই বেড়েছে। শুধু হাতের নাগালে আলুর দামটা রয়েছে। জানি না আলুর দামটাও বেড়ে যায় কি না। আতুকুড়া গ্রামের ক্রেতা আলাউদ্দিন জানান, বন্যার অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি করেছেন। কিন্তু বাজারে ধানের কোন মূল্য নেই। কাঁচামালের তুলনায় ধানের দাম যদি বেশি হতো তাহলে আমরা কৃষকরা বেঁেচ যেতাম। এভাবে কাঁচামালের দাম বাড়তে থাকলে আলু খাওয়া ছাড়া আর কোন গতি থাকবে না। চৌধুরী বাজার কাঁচামাল হাটার ব্যবসায়ী নরছতপুর গ্রামের বাসিন্দা ফরিদ মিয়া জানান, সাম্প্রতিককালের বন্যায় বিভিন্ন স্থানে সবজি জমিতে পানি উঠে সবজিগুলো তলিয়ে গেছে। যে কারণে বাজারে সবজির উৎপাদন কম হচ্ছে। এজন্য দাম বেড়েছে। পাইকারী বাজারে সবজির দাম কম হলে খুচরা বাজারেও কম হবে। আমরাও সীমিত লাভে সস্তায় সবজি বিক্রি করতে চাই। এজন্য পাইকারী বাজারে কাঁচামালের দাম যেন কমানো হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বন্যার পর অনবরত বৃষ্টি হওয়ার কারণে সবজি ক্ষেতের নালাগুলো মাটিতে পূর্ণ হওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশনে বিঘœ সৃষ্টি হয়। পানি জমে যাওয়ায় ক্ষেতে সবজি গাছের পাতা ও ডাল নেতিয়ে যাচ্ছে। আর কাঁকরোল, বেগুন, মরিচসহ কিছু সবজি ক্ষেতে দু’দিন পানি থাকলেই গাছ মারা যায়। তাছাড়া রাস্তা নষ্ট হওয়ায় ঈদের আগে পরিবহন ভাড়া বেড়ে গেছে। পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধিও সবজির মূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী।
এদিকে সচেতন ক্রেতারা কাঁচামালের বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজার মনিটরিং করার জন্য দাবি জানান।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com