মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি দলিত জনগোষ্ঠীর কতটুকু কাজে আসে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। ভোটের জন্য দলিতদের তোষণ করা হয়। নির্বাচনে পাশ করার পর তাদের প্রতি সেই আবেগ আর থাকে না। তাতে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় দলিতরা নিরাপত্তা বেষ্টনির সুবিধা খুব কমই ভোগ করতে পারে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নবীগঞ্জ উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক তনুজ রায় বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি দলিত জনগোষ্ঠীর কতটুকু কাজে আসে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। দলিত জনগোষ্ঠী বলতে আমরা যাদেরকে বুঝাই তাদের সামাজিক বেষ্টনিতে আনার ক্ষেত্রে তাদের নামটিই একটি বড় অন্তরায়। আমরা দেখেছি সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির জন্য সব সময়ই স্থানীয় সরকারের সর্বনি¤œ পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের উপর নির্ভরশীল। নির্বাচনের পূর্বে ভোটের জন্য দলিতদের তোষণ করা হয়। নির্বাচনে পাশ করার পর তা লক্ষ্য করা যায় না। তাতে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় দলিতরা নিরাপত্তা বেষ্টনির সুবিধা খুব কমই ভোগ করতে পারে। দলিত শ্রেণির লোকজন তাদের নিজেদের এলাকায় অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করে থাকেন। তাদের কোন প্রভাব না থাকায় সমাজে তাদের দাপট থাকে না। তাছাড়া তাদের জনগোষ্ঠীর মাঝে চা শ্রমিক বাদ দিলে আর কারও পক্ষে জনপ্রতিনিধি তৈরী করা সম্ভব হয় না। সেই ক্ষেত্রে দলিত জনগোষ্ঠী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে তাদের দাবি উত্থাপনের সুযোগ পায় না। ফলে তারা অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
চা শ্রমিক বিকাশ তাঁতী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি দলিত জনগোষ্ঠীর জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু দলিতরা এর সুফল থেকে বঞ্চিত। শুধুমাত্র নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা আমাদের স্বপ্ন দেখান। কিন্তু নির্বাচনের পর ভুলে যান। তবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক বলে মনে হয়। এ সরকার দলিত জনগোষ্ঠীর কল্যাণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যার সুফল ভোগ করছে সাধারণ মানুষ। দলিত জনগোষ্ঠী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির সুফল ভোগ করতে হলে সরকারের প্রতিনিধিদের আরও আন্তরিক হতে হবে। আর সরকারের প্রতিনিধি আন্তরিক হলে দলিত জনগোষ্ঠীও এর সুফল পাবে।
হবিগঞ্জ শহরের শ্মশানঘাট এলাকাস্থ হেভেন টাচ্ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক নিহার রঞ্জন সরকার বলেন, আমাদের দেশে সমাজ ব্যবস্থায় রাজনৈতিক কারণেই হোক বা গোষ্ঠীর কারণেই হোক কিছু মানুষ সব সময়ই সুবিধা ভোগ করে আসছে। সেই সুবিধাভোগী মানুষরা সব সময়ই সরকারের দেয়া সুযোগ সুবিধা জন্মসূত্রে প্রাপ্ত অধিকারের মতো ব্যবহার করে আসছে। সত্যিকার অর্থেই যদি দলিত শ্রেণিকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় আনতে হয় তাহলে প্রথমেই প্রয়োজন ওয়ার্ড ভিত্তিক তাদের তালিকা তৈরী করা। তার মধ্যে কারা হতদরিদ্র তা খুঁজে বের করা। যদি স্বচ্ছতার সাথে এই তালিকা তৈরী করা যায় এবং সরকার যদি এদের প্রতি দৃষ্টি দেন তাহলে হয়তোবা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির সুযোগ সুবিধা এই শ্রেণি পাবে এবং নিজেদেরকে রাষ্ট্রের ও সমাজের একজন হিসেবে ভাবতে শুরু করবে।