নিহতের স্বজনদের পক্ষ থেকে আজ থানায় মামলা দায়ের করা হবে
এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগরে টমটম স্ট্যান্ডের দখল নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ব্যবসায়ী শেখ আব্দুর রশিদের লাশ দাফন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বাদ মাগরিব উমেদনগর পূর্বপাড়া বড় মাঠ প্রাঙ্গণে মরহুমের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের ঢল নামে। নামাজের পূর্বে মরহুমের চাচাত ভাই অ্যাডভোকেট বজলুর রহমানের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত আলোচনায় স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন খান, প্রাক্তন ব্যাংকার হাফিজুল ইসলাম হাফিজ, মরহুমের চাচাত ভাই হবিগঞ্জ মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ শামছু মিয়া, সহ-সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ মিয়া, কাউন্সিলর আবুল হাসিম, মরহুমের ছোট ভাই শেখ আব্দুল হান্নান।
বক্তারা মরহুম আব্দুর রশিদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এ সময় মরহুমের ছোট ভাই শেখ আব্দুল হান্নান তার বক্তব্যে মরহুম আব্দুর রশিদ জীবদ্দশায় কোন ভুলত্রুটি করে থাকলে তার পক্ষে তিনি সকলের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং সকলের নিকট দোয়া প্রার্থী হন।
জানাজার নামাজে অংশ নেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোঃ মিজানুর রহমান, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, বিএনপি কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ, হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, জেলা কৃষকলীগ সভাপতি হুমায়ূন কবির রেজা, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান আউয়াল, জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক এম ইসলাম তরফদার তনু, এনামুল হক সেলিম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন। জানাজার নামাজ শেষে দোয়া পরিচালনা করেন চৌধুরী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা আব্দুল মজিদ পিরিজপুরী।
এছাড়াও মরহুমের বাড়িতে গিয়ে মরহুমের স্বজনদের শান্তনা দেন বানিয়াচং উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী।
এর পূর্বে বিকেল ৫টার দিকে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজের মর্গে আব্দুর রশিদের লাশের ময়না তদন্ত শেষে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় আব্দুর রশিদের লাশ দেখে স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার স্ত্রী ও ভাই, ভাতিজা, ভাতিজির কান্না কেউ থামাতে পারছিলেন না। সবার একটাই দাবি আব্দুর রশিদকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের যেন দ্রুত গ্রেফতার করে বিচার নিশ্চিত করা হয়। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়নি। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম জানান, আব্দুর রশিদ হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের অব্যাহত অভিযান রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনও কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ মাসুক আলী দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানান, আজ বৃহস্পতিবার নিহত শেখ আব্দুর রশিদের স্বজনদের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার খোয়াইমুখ টমটম স্ট্যান্ড দখল নিয়ে পৌর এলাকার উমেদনগর আলগাবাড়ি বনাম পূর্ব এলাকার লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রথমে স্ট্যান্ড এলাকায় সংঘর্ষ হলেও পরে নবীগঞ্জ সড়কের মাদ্রাসা এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে একপক্ষ অপর পক্ষের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম পিপিএম ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ-ওসি মো. মাসুক আলীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৮ রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তখন উভয়পক্ষের ৭ জনকে আটক করে পুলিশ। সংঘর্ষে শেখ আব্দুর রশিদ, পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষের ৩০ জন আহত হয়। আহতের মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় আব্দুর রশিদকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। ইউসিইউতে ৫দিন চিকিৎসা শেষে ৬ দিনের মাথায় তিনি মারা যান।