মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ জগদ্ধাত্রী শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘জগৎ+ধাত্রী। জগতের (ত্রিভুবনের) ধাত্রী (ধারণকর্ত্রী, পালিকা)।’ ব্যাপ্ত অর্থে দুর্গা, কালী সহ অন্যান্য শক্তিদেবীগণও জগদ্ধাত্রী। তবে শাস্ত্র নির্দিষ্ট জগদ্ধাত্রী রূপের নামকরণের পেছনে রয়েছে সূক্ষ্ম ধর্মীয় দর্শন। জগদ্ধাত্রী বা জগদ্ধাত্রী দুর্গা শক্তি দেবী। তিনি দেবী দুর্গার অপর রূপ। উপনিষদে এর নাম উমা হৈমবতী। বিভিন্ন তন্ত্র ও পুুরাণ গ্রন্থেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়। জগদ্ধাত্রী আরাধনা বিশেষত বঙ্গদেশে প্রচলিত। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চন্দননগর ও নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী উৎসব জগদ্বিখ্যাত।
জগদ্ধাত্রী দেবী ত্রিনয়না, চতুর্ভূজা ও সিংহবাহিনী। তাঁর হাতে শঙ্খ, চক্র, ধনুক ও বাণ; গলায় নাগযজ্ঞোপবীত। বাহন সিংহ করীন্দ্রাসুর অর্থাৎ হস্তীরূপী অসুরের পৃষ্ঠে দন্ডায়মান। দেবীর গাত্রবর্ণ উদিয়মান সূর্যের ন্যায়। কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে দেবী জগদ্ধাত্রীর বার্ষিক পূজা অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দু বাঙালির ধর্মীয় মানসে রাজসিক দেবী দুর্গা ও তামসিক কালীর পরেই স্থান সত্ত্বগুণের দেবী জগদ্ধাত্রীর। ধ্যান বা স্তবমন্ত্রে উল্লেখ না থাকলেও জগদ্ধাত্রী প্রতিমায় বাহন সিংহের পদতলে একটি হস্তীমুন্ড থাকে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুুসারে, জগদ্ধাত্রী দেবী করীন্দ্রাসুর অর্থাৎ মহাহস্তী রূপী অসুরকে বধ করেছিলেন। এ কারণে দেবী জগদ্ধাত্রী করীন্দ্রাসুরনিসূদিনী নামে পরিচিত।
হবিগঞ্জ সেলুন সমিতির সাধারণ সম্পাদক রথীন্দ্র কুমার চন্দ বলেন, দেবী জগদ্ধাত্রীর পূজা অনুষ্ঠিত হয় দুর্গাপূজার ঠিক একমাস পর কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে। কাত্যায়নীতন্ত্র এ কার্তিকী শুক্লা নবমীতে দেবী জগদ্ধাত্রীর আবির্ভূত হওয়ার কথা আছে। জগদ্ধাত্রী পূজা তান্ত্রিক পূজা। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী এই তিন দিন জগদ্ধাত্রীর পূজা হয়ে থাকে। কোথাও কোথাও প্রথম বা দ্বিতীয় পূজার পর কুমারী পূজারও আয়োজন করা হয়।
হবিগঞ্জ শহরের পুরান বাজার এলাকায় খোয়াই নদীর তীর ঘেষা কুড়ি হাটিতে প্রতি বছর অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে দেবী জগদ্ধাত্রীর পূজা পালিত হয়ে থাকে। বিশাল প্যান্ডেল করে অনেক টাকা ব্যয়ে আয়োজকরা এ পূজা করে থাকেন। তাছাড়া হবিগঞ্জের বিভিন্ন চা বাগানেও ঘটা করে এ পূজা পালন করা হয়। এ পূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বী যে কেউ করতে পারে। জগদ্ধাত্রী দেবী দুর্গার অপর রূপ। সাধারণত দুর্গাপূজা ও কালীপূজার পর এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায় বলেন, জগদ্ধাত্রী পূজা বাঙালি হিন্দু সমাজের একটি বিশিষ্ট উৎসব। দুর্গাপূজা ও কালী পূজার পর অনুষ্ঠিত হয় দেবী জগদ্ধাত্রীর পূজা। এ পূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বী যে কেউ পালন করতে পারেন। পঞ্জিকা অনুযায়ী এ পূজা পালিত হয়ে থাকে। এ বছর রবি ও সোম এ দুই দিন জগদ্ধাত্রী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। শহরের কুড়ি হাটি ও দানিয়ালপুর এলাকায় প্যান্ডেল করে তারা এ পূজা পালন করেন।