এসএম সুরুজ আলী \ প্রবাসী অধ্যুষিত হবিগঞ্জ জেলায় নির্বাচন আসলেই প্রবাসী প্রার্থীরা দেশে এসে রাজনীতির মাঠ গরম রাখেন। বিভিন্ন সময় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন প্রবাসী প্রার্থীরা। এখনও জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে প্রবাসী প্রার্থী নির্বাচিত হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ডিসেম্বরে পৌরসভা ও মার্চে ইউপি নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনার কথা প্রচারের পর জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রবাসী প্রার্থীরা দেশে ছুটে আসছেন। অনেক প্রার্থী দেশে এসে ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। আবার অনেকেই করোনার জন্য কর্মহারা দরিদ্রদেরকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবাসী প্রার্থীরা সরব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ডিসেম্বর মাসে হবিগঞ্জের ৬টি পৌরসভার মাঝে ৫টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। হবিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও লন্ডন প্রবাসী নুর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল। এক সপ্তাহ পূর্বে তিনি লন্ডন থেকে দেশে এসে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন।
জেলার চুনারুঘাট পৌরসভার নির্বাচনে নৌকার জন্য লড়ছেন দুই প্রবাসী প্রার্থী মোক্তাদির চৌধুরী সাথী ও বজলুর রশীদ দুলাল। লন্ডন প্রবাসী মুক্তাদির চৌধুরী সাথী বেশ কিছুদিন যাবৎ লন্ডন থেকে দেশে এসে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন। ফ্রান্স প্রবাসী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বজলুর রশীদ দুলাল দুই মাস পূর্বে দেশে এসে শুরু করেছেন প্রচার প্রচারণা।
জেলার নবীগঞ্জ পৌরসভায় বিগত নির্বাচনে জাহাঙ্গীর রানা ও জুবায়ের চৌধুরী নামে দুই লন্ডন প্রবাসী মেয়র পদে নির্বাচন করেন। এবারও তাদের নাম শোনা গেলেও এখনও তারা দেশে ফিরেননি। স্থানীয়ভাবে জানা গেছে ওই দুইজন এবার নির্বাচন করবেন না। তবে সেখানে এবার নতুন একজন প্রার্থী হিসাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন লন্ডন প্রবাসী তাজ ইসলাম। তবে তিনি এখনও দেশে আসেননি।
মাধবপুর পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচন করতে এক বছর পূর্বে সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান মানিক। দেশে এসে তিনি ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। জেলার শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচন করতে প্রচারণা চালাচ্ছেন লন্ডন প্রবাসী সাবেক ফুটবলার আব্দুর রকিব। গত বছর তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করলেও এবার জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করবেন। তবে তিনি এখনও দেশে আসেননি। কয়েকদিনের মাঝেই তিনি দেশে ফিরবেন বলে তার ঘনিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে মার্চ ও এপ্রিল মাসে হবিগঞ্জের ৭৮টি ইউনিয়নের মাঝে ৭৬টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক প্রবাসী প্রার্থী দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। আবার অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন।
জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নে বরাবরই লন্ডন প্রবাসীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বর্তমান চেয়ারম্যান আলী আহমেদ মুসা ও সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেদুর রহমান লন্ডন প্রবাসী। আলী আহমেদ মুসা গত সপ্তাহে সংক্ষিপ্ত সফরে লন্ডনে যান। কয়েকদিনের মাঝেই আবার তিনি ফিরে আসবেন। তার প্রতিদ্ব›দ্বী সৈয়দ খালেদুর রহমান মাঝে মাঝে লন্ডনে যান। দেশেই তার ব্যবসা। এই ইউনিয়নে নির্বাচন করতে লন্ডন থেকে আসবেন বিএনপি নেতা বাবুল চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মুকিত, সামছুল ইসলাম ও নিজামুল ইসলাম চৌধুরী তালিব।
একই উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুন একজন লন্ডন প্রবাসী। এবারও তিনি নির্বাচন করবেন। সেই ইউনিয়নে আরও প্রবাসী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে অংশ নিতে কয়েকদিন পূর্বে দেশে এসেছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও লন্ডন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আসাবুর রহমান জীবন।
কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশ নিতে গত সপ্তাহে দেশে এসেছেন লন্ডন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ও শাহ ফজর আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ শহীদ আলী।
বাউশা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে দেশে আসার অপেক্ষায় জুনেদ হোসাইন চৌধুরী। ওই উপজেলার সকল ইউনিয়নেই আরও প্রবাসী প্রার্থী দেশে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলার লাখাই উপজেলার লাখাই সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কয়েকদিন পূর্বে সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছেন জেদ্দা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা। তিনি সেখানে শুরু করেছেন ব্যাপক প্রচার প্রচারণা। একই উপজেলার বামৈ ইউনিয়নে হংকং প্রবাসী খসরু নোমান দেশে এসেছেন নির্বাচন করতে। মুড়াকরি ইউনিয়নে সৌদি আরব প্রবাসী কামরুল হাসান শীঘ্রই দেশে আসবেন নির্বাচন করতে।
চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নে বিএনপি থেকে নির্বাচন করতে প্রচারণা চালাচ্ছেন সৌদি আরব প্রবাসী বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আলী।
আহম্মদাবাদ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে প্রচারণা চালাচ্ছেন সৌদি আরব প্রবাসী যুবলীগ নেতা তোফাজ্জল হোসেন মহালদার। ওই ইউনিয়নে বিগত নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করেন সৌদি আরব প্রবাসী গোলাম মোস্তফা কুটি। এবারও তিনি ওই দল থেকে নির্বাচন করতে দেশে আসতে পারেন।
বানিয়াচং উপজেলার ১নং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে দেশে এসে প্রচারণা চালাচ্ছেন লন্ডন প্রবাসী জাতীয় পার্টি নেতা আব্দুস সালাম। একই উপজেলার পুকড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিতে শীঘ্রই দেশে আসছেন লন্ডন প্রবাসী বদরুল ইসলাম।
এদিকে শীতের আগমনের সাথে সাথে প্রবাসী প্রার্থীদের আগমনে নির্বাচনের মাঠ গরম হচ্ছে। ভোটারদেরও কদর বাড়ছে ওই সকল প্রার্থীদের কাছে। অনেকেই বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণসহ বিভিন্নভাবে দান খয়রাত করে ভোটারদেরকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন ওই সকল প্রার্থীরা।
হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী লন্ডন প্রবাসী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল বলেন, দেশে যারা রাজনীতি করে বিদেশে যান তারা সেখানে আরও বেশী রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন। সব সময় নিজ নিজ এলাকার মানুষের খোঁজখবর রাখেন। বিপদে আপদে সহায়তা করেন। বিভিন্ন সময় প্রবাসীরা এমপি হয়েছেন। অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছেন প্রবাসীরা। প্রবাসীরা নির্বাচিত হলে জনগণ বেশী উপকৃত হয়। কারণ তারা দেশে আসেন জনগণের সেবা করার জন্য।