মাধবপুর প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় সম্পদের লোভে স্ত্রীকে লুকিয়ে রেখে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে গুমের মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উদ্ধার হওয়ার পর বুধবার (২৬ আগস্ট) স্ত্রী হামিদা বেগম বাদী হয়ে স্বামী আওয়াল মিয়া সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কগ-৬ হবিগঞ্জে পাল্টা মামলা দায়ের করেন। পরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসমা বেগম বিষয়টি তদন্তের জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাধবপুর থানাকে নির্দেশ প্রদান করেন।
জানা যায়, উপজেলার রতনপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নাফের ছেলে আব্দুল আউয়াল মিয়া প্রায় ছয় বছর আগে ফরহাদপুর গ্রামের মোছা: হামিদা বেগমকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে ভয়ভীতি ও বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আউয়াল মিয়া তার স্ত্রী হামিদা বেগমের প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার সম্পদ বিক্রি করে দেয়। সর্বশেষ গত বছর হামিদা বেগম তার পাঁচ শতাংশ জমি ছোট ভাইয়ের ছেলে ও স্বামীর নামে দলিল করে দেয়।
এসময় সে মৌখিক শর্ত রাখে তার মৃত্যু পর্যন্ত তাকে দেখাশোনা করতে হবে। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনে ছোট ভাইয়ের ছেলের নামের আড়াই শতাংশ জমি বিক্রি করে দেয়। এ নিয়ে ভাই ইদ্রিস আলীর সাথে বোন হামিদা বেগমের মনোমালিন্য হয় এবং সালিশ বিচারের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলে। এক পর্যায়ে আব্দুল আউয়াল তার স্ত্রীকে কৌশলে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় নিয়ে এক বাড়িতে রেখে এসে শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও পূর্ব থেকে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলে আসা তার মামার বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে গুমের মামলা দায়ের করে। পরে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কগ-৬ তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডি হবিগঞ্জকে নির্দেশ প্রদান করে। মামলার এক নাম্বার আসামি মো: ইদ্রিস আলী (৪০) জানান, এই মামলার কারণে আমি সপরিবারে ১১ মাস যাবত পলাতক ছিলাম। জমিজমা বিক্রি করে প্রায় ২৩/২৪ লাখ টাকা নষ্ট করে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। এই মিথ্যা মামলার ১০ নম্বর আসামি চিন্তায় চিন্তায় স্ট্রোক করে মারা গেছে। আমার বোন উদ্ধার হওয়ায় এখন সব আসামিরা বাড়ি ফিরে আসছে। হামিদা বেগম জানান, বিয়ের পর থেকে আমার স্বামী আওয়াল মিয়া আমার প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার জমি বিক্রি করে টাকা নিয়ে গেছে। এখন ভাইয়ের সাথে আমার বিরোধের সুযোগ নিয়ে আমাকে বড়লেখায় রেখে এসে আমার ভাই সহ আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা গুমের মামলা করেছে। একপর্যায়ে আমি বাড়িতে চলে আসতে চাইলে আমার স্বামী আওয়াল মিয়া আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে সিলেটে নিয়ে যায়। বিষয়টি আমি বুঝতে পেরে সিলেটের জালালাবাদ থানার টুকের বাজার ইউনিয়নের নাজিরেরগাঁও গ্রামের আছির আলীর সহযোগিতায় পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের কয়েকজন মুরুব্বি নিয়ে আমাকে উদ্ধার করে আনেন। আছির আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান হামিদা বেগম যখন আমকে তাঁর সমস্যার কথা বলে, সাথে সাথেই আমি আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে মাধবপুর থানার তেলিয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সাথে যোগাযোগ করি। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মুরুব্বিগণ এসে তাকে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন জানান, এরকম একটি মামলা হয়েছিল বছরখানেক আগে যা তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ প্রদান করছেন আদালত। পাল্টা মামলা বা আদালতের কোন নির্দেশ এখনো হাতে পাইনি। আদালতের নির্দেশ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।