স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদায় ইসলামি আরবি বছর ১৪৪১। স্বাগত হিজরী নববর্ষ ১৪৪২ হিজরী। আজ হিজরী ১৪৪২ সালের প্রথম মাস মহররমের প্রথম দিন।
গতকাল মহররমের চাঁদ দেখা গেছে। এ হিসেবে আগামী ৩০ আগস্ট পবিত্র আশুরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ইসলামে হিজরী সন ও তারিখের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ হিজরী সন এমন একটি সন, যার সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর তাহজিব-তামাদ্দুন ও ঐতিহ্যের ভিত্তি সম্পৃক্ত। মুসলমানদের রোজা, হজ, ঈদ, শবেবরাত, শবেকদর, শবে মেরাজসহ ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান হিজরী সনের ওপর নির্ভরশীল। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও আনন্দ-উৎসবসহ সব ক্ষেত্রেই মুসলিম উম্মাহ হিজরী সনের অনুসারী। ইসলামি আরবি বর্ষপঞ্জিকার সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রিয় নবীজির হিজরতের স্মৃতি, তাই যুগ যুগ ধরে মুসলমানদের কাছে হিজরী সাল বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
রাসূল (সা.) এবং তার সাথীবর্গের মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই আরবি মহররম মাসকে হিজরী সনের প্রথম মাস ধরে সাল গণনা শুরু হয়েছিল। আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে পবিত্র মক্কা থেকে মদিনায় রাসূল (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামের হিজরত থেকেই হিজরী সনের সূচনা।
আজ পহেলা মহররম। মহররম মানে পবিত্র। কিন্তু মাহে মহররম হলো কারবালার মাস। আহলে বাইতকে নিঃশেষ করে দেবার এক ভয়ংকর এবং নির্মম ভয়াবহ অধ্যায়ের মাস। একদিকে এ মাসের মাধ্যমে হিজরী বছরের শুরু। অন্যদিকে কারবালার শোকাবহ ঘটনার কারণে এ মাস কষ্টের, শোকের মাস এবং কারবালার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত হবার মাস।
হিজরী সনের সূচনা: খোলাফায়ে রাশেদার শাসনকালে মদিনাকেন্দ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার গোড়াপত্তন হলে অফিসিয়াল তথ্যাদির নথি ও দিনক্ষণের হিসাব রাখতে গিয়ে বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নররা বিপাকে ও অসুবিধায় পড়েন। যেহেতু তখন ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য কোনো বর্ষপঞ্জি বা একক সন চালু ছিল না। রাষ্ট্রীয় অফিসিয়াল কার্যাদি যথানিয়মে সম্পন্ন করার প্রয়োজনে নতুন সন প্রবর্তন তখন অনিবার্য হয়ে ওঠে। খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত উমর ফারুক (রা.) এর শাসনামলে ১৬ হিজরী সনে প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু মূসা আশআরি (রা.) ইরাক এবং কুফার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একদা হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) খলিফা উমরের (রা.) খেদমতে এ মর্মে পত্র লিখেন যে, আপনার পক্ষ থেকে পরামর্শ কিংবা নির্দেশ সম্বলিত যেসব চিঠি আমাদের নিকট পৌঁছে তাতে দিন, মাস, কাল, তারিখ ইত্যাদি না থাকায় কোনো চিঠি কোন দিনের তা নিরুপণ করা আমাদের জন্য সম্ভব হয় না। এতে করে আমাদেরকে নির্দেশ কার্যকর করতে খুব কষ্ট করতে হয়। অনেক সময় আমরা বিব্রতবোধ করি চিঠির ধারাবাহিকতা না পেয়ে। হজরত আবু মুসা আশআরির চিঠি পেয়ে হজরত উমর (রা.) এ মর্মে পরামর্শ সভার আহবান করেন যে, এখন থেকে একটি ইসলামী তারিখ প্রবর্তন করতে হবে। উক্ত পরামর্শ সভায় হজরত উসমান (রা.), হজরত আলীসহ (রা.) শীর্ষস্থানীয় সাহাবায়ে কেরাম এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত সকলের পরামর্শ ও মাতামতের ভিত্তিতে এ সভায় ওমর (রা.) সিদ্ধান্ত দেন ইসলামী সন প্রবর্তনের।